ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

অভিনেত্রী বন্যা মির্জা

নিপীড়ন মোকাবেলা করেই নারীদের কাজ করে যেতে হয়

প্রকাশিত : ০৪:০১ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:০৭ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বন্যা মির্জা

বন্যা মির্জা

বন্যা মির্জা। মূলত তিনি টিভি ও মঞ্চ নাটকের নিবেদিত প্রাণ। মাঝে মধ্যে উপস্থাপনায়ও দেখা যায় তাকে। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে খুব একটা পাওয়া যায় না এ অভিনেত্রীকে। কারণ সব অনুষ্ঠানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তিনি।

শুধু সুন্দর চেহারা হলেই যে একজন ভালো অভিনেত্রী হওয়া যায়, এমন কথা একেবারেই ঠিক নয়। বাস্তবতার নিরিখে চরিত্রের মধ্যে ডুবে যেতে পারলেই ভালো কিছু করা সম্ভব। আর সেটি করে দেখিয়েছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ বন্যা মির্জা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একুশের সকালের মুখোমুখি হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তাকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সোহাগ আশরাফ

‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অনবদ্য কবিতাই বলে দেয় নারী সে কতটা মহান।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। যার আদি নাম- আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। প্রতি বছর ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারী দিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।

দিবসটি নিয়ে বন্যা মির্জা বলেন, ‘এ দিবস নিয়ে আমার আসলে আলাদা করে কোনো ভাবনা নেই। এটি একটি দীর্ঘ পথ। সে পথাটা আসলে পাড়ি দিতে হয়েছে এবং ১৮৫৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো বছর ধরে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। সেই সময়টা আর এই সময়টার মধ্যে হয়তো অনেক পার্থক্য রয়েছে। হয়তো প্রতীকি হিসেবে এখন আমরা পালন করি। ওই সময় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলনটি হয়েছিল। এখন সেই দিনটি প্রতীকি হিসেবে পালন করা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় আমরা এখনও সমতা অর্জন করতে পারিনি। তাই দিনটির তাৎপর্য আমাদের কাছে রয়েছে। আর থাকাটাই ভালো। যখন আমরা লিঙ্গিয় সমতা বিধান করতে পারবো তখন হয়তো এই দিনটি আলাদা করে প্রয়োজন পড়বে না।’

সময় বদলেছে। নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। বলতে গেলে পুরুষের পাশাপাশি তারাও এখন সমানভাবে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এ বিষয়ে বন্যা মির্জা বলেন, ‘কারও মত করে কাজ করবার দরকার আছে কি না সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে আমার মনে হয় এগিয়ে এসেছে কথাটা আসলে ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি না। এগিয়ে এসেছে বলতে আমরা শুধু একটা শ্রেণীর নারীকে বুঝি। যাদেরকে আমরা দেখি না তারাতো আসলে এগিয়ে নেই। এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। সুতারাং এগিয়েছি বললে ভুল হবে। বরং যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেই হারে এগিয়ে যেতে পারিনি। যদি এই সময়টাতে আমরা সবকিছুতে এগিয়ে থাকি তাহলে নারীরাও সমপরিমাণ এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। এখন বড় বড় পদে নারীরা রয়েছেন ঠিকই কিন্তু সেই সংখ্যাটা অনেক কম। তাই কতটুকু এগিয়েছি তা নিয়ে ভাবতে হবে। এটা নিয়ে বিষদ আলোচনা রয়েছে। এমনকি এটা নিয়ে দীর্ঘ সময় তর্কও করা যাবে। আমি তখনওই এগিয়ে যাওয়ার কথা বলবো যখন সংখ্যায় অধিক নারী এগিয়ে যাবে।’

নারীরা এখন সমান তালে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় নারী তার কর্ম ক্ষেত্রে কতটুকু নিরাপদ বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বন্যা বলেন, ‘নিশ্চই নয়, নয় বলেই বারবার কথা বলতে হচ্ছে। হয়ে গেলে আমাদের আর কথা বলতে হতো না। নারী বান্ধন নয় কোন খানে, আবার খুব অল্প জায়গায় আছেও। সেইটুকুই আশার কথা। আপনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে কত ভাগ নারী তারা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ। সেই সংখ্যাটি কিন্তু ভয়ঙ্কর। শুধু কর্ম ক্ষেত্রেই নয়, নারী যেখানে বিচরণ করেন তখনই তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ১৫ অথবা ২০ ভাগ নারী হয়তো ভোগেন না। তাই বলে সব পরিবর্তন হয়েগেছে তা বলা যাবে না।’

আমাদের মিডিয়া নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। বিশেষ করে নারী অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে। অনেকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কেও লিপ্ত হয়েছেন। কেউ কেউ বলেন মিডিয়াতে কাজের পরিবেশ নেই।

এ বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী বন্যা মির্জা বলেন, ‘নারীকে তার সকল জায়গায় যৌন নিপিড়নকে মোকাবেলা করে কাজ করতে হয়। যিনি মোকাবেলা করতে পারেন না, ভয়ে কাজ ছেড়ে দেন, আমি তাদের পাশে থাকতে চাই না। আমি তার পাশে দাঁড়াতে চাই, যিনি মোকাবেলা করে কাজটি করেন। হয়তো আমার অন্য ব্যস্ততা থাকতে পারে। আর সে জন্য আমি অন্য পেশায় যেতে পারি। তাই বলে এখানে কাজের পরিবশে নেই এটা বলা ঠিক হবে না। একটি জায়গা কেমন হলো তার জন্য কাজটি ছেড়ে দিলাম সেটি কিন্তু ঠিক নয়।’

এসএ/ এআর