ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই নারী অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ০৭:২২ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:৩৩ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার

লুনা শামসুদ্দোহা

লুনা শামসুদ্দোহা

নারী ভালোবাসা ও সৌন্দর্যবোধের অনুপম প্রতীক। নারী মানেই মা, ভগিনী, জায়া। একজন পুরুষ পরিবেশগতভাবে যে আনুকূল্য পায় সেই তুলনায় একজন নারীর সুযোগ সুবিধে খুবই নগণ্য।

নারীর প্রতি পুরুষ শাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাত্যহিক সমস্যা থেকে নারীর প্রগতি এবং জাগরণের বিষয় নিয়ে নারীর অধিকার, কর্মপরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী সম্পর্কে পারিপার্শ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের অন্যতম  খ্যাতিমান আইটি উদ্যেক্তা দোহাটেক এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবস সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ আমার কাছে মনে হয় এই দিন পুরুষ দিবস। কারণ এই দিনটা পুরুষেরা দেখে যে, আজ নারী দিবস। কিন্তু বছরের বাকি দিন গুলোতে তো আমরা নারী। নারী না থাকলে তো পৃথিবীতে খুব কম জিনিসই থাকতো। মহৎ কিছু সৃষ্টি হত না। নারী অধিকারের প্রতি পুরুষের আন্তরিকতা ও উর্বর মানসিকতা বাস্তব প্রেক্ষাপট থেকে এখনো অনেক দূরে রয়ে গেছে। যদিও একটু একটু করে পরিবেশ তৈরি হয়েছে বটে।

নারীদের প্রতি সম্মান ও তাদের অধিকারকে সমন্নুত করতে হলে প্রথমে নারীদের সচেতন হতে হবে। তাঁদের জেগে উঠতে হবে। নারীদের প্রগতির পথে, মুক্তির পথে নেমে পরতে হবে। তারপর সরকারকেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রযুক্তির এই বহুল ব্যবহারের যুগেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়। এখনো বখাটেদের অত্যাচার-ইভটিজিংয়ে এসিডে মুখ ঝলসে যাচ্ছে আমাদের মা-বোনেরা। এখনো শ্রমজীবী নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে ঘর পর্যন্ত নিরাপদ নয়।

নারীর প্রতি সমঅধিকারের এই কথাগুলো বেগম রোকেয়ার নারী জাগরণ থেকে শুরু করে এখনও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সংগঠন, সংস্থা, সোচ্চার থাকলেও দিবস কেন্দ্রিক এর গুরুত্ব জেগে উঠে কিন্তু আদৌ কি নারীরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে? এ প্রশ্নের সোজা উত্তর কিছুটা হয়তো পৌঁছাতে পেরেছে কিন্তু সেটা এতটাই অপর্যাপ্ত যে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে এখনো পাড়ি দিতে হবে বিস্তর পথ। প্রান্তিক পর্যায়ে খেয়াল করলেই এর সত্যতা আরও স্পষ্ট হয়। এই অবস্থাটা না বদলানোর পরিবেশটাকে আমরা কী বলব? দোষের আঙুল কার দিকে নির্দেশ করব? আমি মনে করি নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এখনও নিজেদের কারণে পিছিয়ে রয়েছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ অর্থনীতিতে নারীরা প্রতিনিয়তই জোরালো ভূমিকা পালন করছে একজন নারী হিসেবে এই সাফল্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ পোশাক কারখানায় নারী না থাকলে কি হতো ভেবে দেখুন। মাইক্রো ফাইন্যান্স না থাকলে কিছু হত না। নারীদের সক্ষমতা বাড়াতে তাদের লেখাপড়া করতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট এর শিক্ষা নয়, প্রতিদিনই কিছু না কিছু তাদের শিখতে হবে। হঠাৎ করে কেউ নারী বলে এই অজুহাতে তো কেউ পার পেয়ে যেতে পারবে না। কারণ সমাজ তাকে সেই সুযোগ কখনো দেয়নি। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে প্রথমে নারীরা  নিজেদেরকে মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে। একটা কথা বলতে চাই শেখার কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যে প্রধানমন্ত্রীর একটা স্বপ্ন এটা কিন্তু নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে এদেশের অর্থনীতিতে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের বর্তমান প্রবৃদ্ধি হার ৭.২ অর্জন কিন্তু নারীদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। নারী বলে তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। আমি বলব সব নারীরই আয় করার অধিকার রয়েছে। এই ক্ষেত্রে শুধু যে তারা পুরুষের উপর নির্ভর থাকবে সেটা যুক্তিযুক্ত নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনি দেশের একজন প্রথম সারির নারী উদ্যেক্তা। আপনার উদ্যেক্তা হওয়ার গল্প বলুন?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ আমার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বো। এই জন্য ভর্তি হলাম বুয়েটে। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমার পরিচিত তেমন কেউ নাই। ওখানে গিয়ে আমার তেমন ভাল লাগেনি। যদিও আমার বন্ধুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক ছিলো, তাই আমি অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে মজা পাইনি। নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। বিষয়টি বেশ মজার ছিলো। পড়াশোনা অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। আসলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তখন সে চাইলে নিজের ইচ্ছাই অনেক কিছু করতে পারে না। এই জন্য বিসিএস দিতে গিয়েও দেওয়া হয়নি। কারণ আমার কাছে চাকুরী করতে কখনো ভালো লাগেনি। তবুও আমি  ভালো লাগা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়িয়েছি, ব্রিটিশ কাউন্সিলে পড়িয়েছি। 

দোহাটেক করার মধ্য দিয়ে আমি ১৯৯২ সালে ব্যবসা শুরু করি। তখন দেশে সবে মাত্র কম্পিউটার এসেছে তাও দেখতে অনেক বড় বড়। আইটি খাতে ব্যবসা করতে যেয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। এখানে শুধু সফটওয়ার ডেভেলাপিং করলেই হবে না। কারণ আইটিখাতে কাজ করতে গেলে প্রচুর পরিমানে তথ্য জানা লাগে। এই ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ খুবই জরুরি।

ওই সময় আমার আমেরিকা যাওয়ার একটা সুযোগ এলো। আমার কিছু নিজস্ব লোকজন বলল কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট এন্ড নজেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে। সেই সময় সিডিরম বাজারে এসেছে মাত্র। নজেল ম্যানেজমেন্টের জায়গা তো অনেক বড়। ওই সময় আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার কাজ পেয়ে যাই। এই যেমন বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউএইচও মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট এন্ড নজেল ম্যানেজমেন্ট এর তথ্য সাজিয়ে দেওয়ার কাজ করতাম। প্রথমে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পাইনি। কারণ দেশে তখন কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়ার সুযোগ সীমিত ছিল।

তাই বাধ্য হয়ে পরিসংখ্যান, পদার্থবিজ্ঞানের লোকজন দিয়ে শুরু করতে হয়েছে। ওই সময় ডাটা ম্যানেজমেন্ট এর কাজও পেলাম। কীভাবে তথ্যগুলি সাজানো যায়। আমেরিকায় কানাডায় কাজ পেয়েছিলাম। আস্তে আস্তে কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। এরইমধ্যে টেক বেসিসে দশবছর অতিক্রম করার পর ২০০৪ সালে ইজিপি শুরু করলাম। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ নিলাম। ইজিপির কাজ করার কারণে টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় দেড় লাখ টেন্ডার অনলাইনে চলে গেছে, এদের মধ্যে ৮০ হাজার টেন্ডার চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেছে।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এসএসএফএর একটা কাজ করলাম। দেশে একের পর এক যখন বড় ধরণের কাজ বাড়তে থাকল আমার প্রতিষ্ঠানের লোকবলও বেড়ে গেলো। বর্তমানে ৩০০ জন প্রকৌশলী আমার কোম্পানিতে কাজ করছে। তারই সূত্রধরে জাতীয় পরিচয়পত্রের সলিউশনের ( সংশোধনী) কাজ করেছি। যদিও সেনাবাহিনীর প্রযুক্তি অংশীদার হিসেবে কাজটা করতে হয়েছে। তবুও জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করতে এর চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে? এই কাজে এদেশের ছেলেমেয়েরা কাজ করেছে এটাই অনেক আনন্দের। আমরা ফেস, ফিঙ্গার ম্যাচিং এর কাজ করেছি। এই কাজের জন্য আমি স্বীকৃতি পেয়েছি মাইক্রোসফট থেকে। দেশে বাংলাদেশ সরকার ছাড়া অন্য কারও কাজ করিনি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনি কর্মক্ষেত্রে কি কি বাঁধার সম্মূখীন হয়েছেন?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ আমি জীবনে অনেকবার কাজে ফেইল করেছি। বার বার ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে শক্তি পেয়েছি। যদিও আইটির কাজগুলো এত সহজ না। সফটওয়্যার ডেভেলাপিং করে কাজ শেষ নয়, এই জন্য প্রচুর লিখতে হয়। একাধিকবার পাসপোর্ট প্রজেক্ট ফেইল করেছি। ফেইল থেকেই বড় কাজ করার সামর্থ্য বেড়ে গেছে।

নারী বলে আমাকে কেউ সুবিধে দেয়নি, আবার নারী বলে কেউ অসুবিধেও করেনি। সমস্যা সব সময় থাকবে আমি নারী বলে ঘরে বসে থাকবো সেটা ঠিক নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলি থেকে নারীরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারে এই ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কি?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ নারীদের জন্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আইনে কিন্তু কোন বাঁধা নাই যে নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে না। আমি বলতে চাই আপনারা আমাদের প্রগতির পথে দেবেন না। আমাদের বিশেষ কোটা দিবেন না, সহযোগিতা করবেন না, তাই বলে আমাদের বাঁধাও দেবেন না। আমাকে আপনি ঠেকাবেন না। আমাকে না ঠেকালে আমি অধিকার চাইব কেন? আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারীকে বাদ দিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। এখন তো পাঠাও উবারে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। নারীদের সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রধান মাধ্যম হল তাদের অধিকারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে আরও।

                        লুনা শামসুদ্দোহার সঙ্গে প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে আপনার পরামর্শ কি? আমাদের দেশে নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ কর্মক্ষেত্রে নারীরা একসময় আসতে চাইত না। আমি নারী-পুরুষ কোন ভেদাভেদ দেখি না। আমার অফিসে নারীরা কাজ করে। আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছেলেমেয়েকে চাকুরি দিয়েছি। কে কোথায় থেকে এসেছে তা নিয়ে আমি কোন ভেদাভেদ করিনা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের এখনও পুরোপুরি স্বাধীনতা আসেনি। অনেক সময় দেখা যায় ৫ টায় অফিস শেষ হলেও অনেক অফিসে অযথা ৮টা পর্যন্ত আটকে রাখা হচ্ছে। কাজ থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কাজ না থাকলে আটকে রাখার প্রবণতা হচ্ছে আমাদের মানসিক সমস্যা। নারীর ঘরে ফেরার পথ এখনও নিরাপদ হয়নি। বাহিরের পরিবেশ সম্পর্কে মালিক পক্ষ অবগত থাকলেও নারীদের প্রতি একটু সহমর্মী হতে দোষ কোথায়? এখনও একটা মেয়ে রাত বারোটার পরে বাসায় ফিরলে সমাজের লোক সেটাকে ভাল চোখে দেখে না।

আমি যখন ন্যাশনাল আইডির প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতাম তখন আমাকে প্রায় রাতের পর রাত অফিসে থাকতে হয়েছে। আমার সাথে আমার ছেলেরাও কাজ করেছে। আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলোর জন্য মেয়েদেরকে কাজে আনতে পারছি না। এতে করে তাদের হৃদয়ের সুকুমারবৃত্তিগুলো প্রকাশ পাচ্ছে না। এতে করে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সমাজের বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হচ্ছে মেয়েদের শুধু রান্না আর বাচ্চা পালন করতে হবে। এর বাহিরে যাওয়া বোধ হয় পাপ। কিন্তু আমি শিক্ষিত নারীদের সমস্যা বেশি দেখতে পাচ্ছি। আর দেশজুড়ে তো প্রান্তিক পর্যায়ে নারীরা আরও বেশি অবহেলিত। এই প্রবণতা থেকে আমাদের সকল কে বেরিয়ে আসতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ নারীরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এই ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পুরুষের কাছে কি আশা করেন?

লুনা শামসুদ্দোহাঃ দেখুন নারীরা প্রতিনিয়তই সমস্যার বালুচরে বসবাস করছে। নারী পুরুষের সহযোগী না হয়ে ব্যবহারের বস্তুতে পরিণত হয়ে পরছে। পুরুষ নারীকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসেবে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখলে সমাজে নারী নির্যাতন কমে যেতো।

শহরে কর্মজীবি নারীদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে পরিবহন। সাধারণত শহরের গণপরিবহনগুলোতে নারীরা উঠতে যেতে চায় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে নারী পুরুষরা একই সাথে যাতায়াত করছে অথচ কোন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের দেশে নারীরা বাসে উঠতে গেলে ধাক্কাধাক্কি করে উঠতে হয়। নারীদের চিমটি কাটা হয়, শরীরে হাত দেয়। ইভটিজিং করে হেরেজমেন্ট করা হয়। অনেক সময় বাসে মেয়েদেরকে উত্যক্ত করা হয়। পুরুষদের উচিত নারীদের উপর সহনশীল আচরণ করা। এর থেকে রক্ষা পেতে নারীদের জন্য কোন আলাদা গাড়ি থাকা দরকার।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ হল হয় ছেলেদেরকে বলতে হবে ঘরে বসে থাকতে, আর না হয় নারীদের বলতে হবে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠো। আমার সে রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। আমি ছোটবেলায় সাইকেল চালিয়ে স্কুল গেছি। কিন্তু এখন মেয়েরা কি সাইকেল করে স্কুল যেতে পারবে? সে পরিবেশ কিন্তু বর্তমান সমাজে নেই। সমাজ মেয়েদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে।

প্রযুক্তির কারণে নারীরা বেশি অনিরাপদ বোধ করছে। সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নারীরা প্রতিদিন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। মেয়েদের সরলতার সুযোগে এই কাজগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহরহ ঘটছে। এই ব্যাপারে আইন থাকলেও প্রয়োগ সীমিত। ফলে অনেকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়ে যাচ্ছে। এই জন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।

পরিশেষে একটা কথায় বলব যে যায় বলুক, আর যে যেই পেশায় কাজ করুক আমরা দিন শেষে কিন্তু নারী। নারীও মানুষ এটা সবার আগে পুরুষের উপলব্ধিতে আনতে হবে। তাহলেই আমাদের পারস্পরিক বৈষম্য দূর হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা রইলো । এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

লুনা শামসুদ্দোহাঃ আপনাকে ও একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদেরকেও ধন্যবাদ।