ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘প্রশাসন নিরপেক্ষ রেখে শেখ হাসিনার অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব’

প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৮ সোমবার

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ

অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ হিসেবেই সমধিক পরিচিত তিনি। তিনি ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফতেপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ ক‌রেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে স্নাতক করেন। যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এমএসসি ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ‌তি‌নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যাপনা ক‌রেন দীর্ঘদিন। ইউএনডিপিসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন নির্বাচন নিয়ে।

সম্প্রতি একু‌শে টি‌ভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকা‌রে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা, নির্বাচনকালীন সরকার কোন পদ্ধ‌তি‌তে হ‌লে সুষ্ঠু-গ্রহণ‌যোগ্য ‌নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনকালে ইসির ভূমিকা নিয়ে নিজের ভাবনাগুলো শেয়ার করেন অধ্যাপক ড. তোফা‌য়েল আহ‌মেদ। তি‌নি ব‌লে‌ন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধী‌নেও একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণ‌যোগ্য করা সম্ভব যদি স্থানীয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখে। ই‌সির প্রতি নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি ব‌লেন, মেরুদন্ড সোজা রেখে নির‌পেক্ষতার সঙ্গে সব আইন প্রয়োগ কর‌তে পারলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব। সংসদীয় সীমানা পুন‌নির্ধার‌ণের পরামর্শও দেন তি‌নি।

রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর সমা‌লোচনায় তোফায়েল আহমেদ ব‌লেন, দলগু‌লোর ম‌ধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় দ‌লের ম‌নোনয়ন প্র‌ক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই। এই এই সুযোগে দুর্নীতিবাজ, কালো টাকা‌র মালিক, পে‌শি শ‌ক্তিধররা নির্বাচনে অংশ নিয়ে‌ সংস‌দেও যাচ্ছে। যার ফলে শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো ও সুশীল সমাজ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে।

সাক্ষাৎকার নিযেছেন মোহাম্মদ রুবেল। এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

একুশে টিভি অনলাইন: আসন্ন একাদশ সংসদ ন‌ির্বাচন গ্রহণয‌োগ্য ক‌রে তুল‌তে কি ক‌ি ব‌িষয়‌ে জোর দেওয়া প্রয়‌োজন।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: নির্বাচন কিভাব‌ে গ্রহণযোগ্য করা যায়  তা সংব‌িধান ও আইন‌ে স্পষ্ট করে বলা আছ‌ে। এই স্ট্রেইট প্রশ্ন‌ের স্ট্রেইট জবাব নেই। কারণ নির্বাচন হচ্ছ‌ে একদিকে আইন‌ি আবার রাজনৈত‌িক প্রক্র‌িয়ায়। আমাদের আইনি প্র‌ক্রিয়ায় কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হ‌চ্ছে রাজনৈ‌তিক প্রক্রিয়ায়। অর্থাৎ রাজ‌নৈ‌তিক নির্বাচন নি‌য়ে যে দ্বন্দ্ধ ও মত‌বি‌রোধ আ‌ছে তা ‌আগে নিরসন কর‌তে হ‌বে। তা না ক‌রে  নির্বাচন ক‌রে ফেল‌লে তা নি‌য়ে প্রশ্ন থেকেই যা‌বে। আইনগতভা‌বে হয়তো নির্বাচন‌কে বৈধ বলা যে‌তে পা‌রে। চা‌পি‌য়ে দেওয়া যে‌তে পা‌রে। ‌কিন্তু সংকট থে‌কেই যা‌বে।  ওই সংকট‌কে বৈধতার সংকট ব‌লে। সুতরাং এখা‌নে আইনি প্র‌ক্রিয়াই মূখ্য বিষয় নয়। এখা‌নে মূলত নির্বাচন নি‌য়েই রাজ‌নৈ‌তিক সমস্যা। তাই নির্বাচনের আগে রাজন‌নৈ‌তিক সমস্যা সমাধানও জরুরি।

একুশে টিভি অনলাইন: বর্তমান সং‌বিধান অনুসারে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভা  স্ব স্ব প‌দে বহাল থাক‌বেন। সং‌বিধা‌নের এ বাস্তবতায় ‌বিএন‌পির দা‌বি অনুযা‌য়ী  য‌দি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ অথবা সংসদ ভে‌ঙ্গেও  নির্বাচন করে তাহ‌লে দল‌টির লাভ কি?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: বিএন‌পির লাভালাভ দেখার বিষয় নয়। বিষয়‌টি হ‌চ্ছে স্বীকৃত পন্থায় আর্ন্তজা‌তিকভা‌বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া। আ‌মি ম‌নে ক‌রি বিএন‌পির দাবি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নয় বরং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃ‌ত্বে এক‌টি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন‌কে নিরপেক্ষ রাখার সব ব্যবস্থা কর‌তে হ‌বে।

একুশে টিভি অনলাইন: রাজনৈতিক সরকারের অধী‌নে সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা সম্ভব?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: এখানে দু‌টি বিষয়। এক‌টি হ‌চ্ছে সংসদ ভে‌ঙ্গে‌ দি‌য়ে প্রধানমন্ত্রী একটা ছোট্ট কেবিনেট নি‌য়ে সরকার চা‌লি‌য়ে যাবেন। আরেক‌টি হ‌চ্ছে সংসদ এবং প্রধানমন্ত্রীসহ‌ সবাই ক্ষমতা ছে‌ড়ে দি‌য়ে, নতুন কোনো গ্রুপকে ক্ষমতা দি‌য়ে নির্বাচন করা। আ‌মি ম‌নে ক‌রি এ‌ক্ষে‌ত্রে যেটা সম্ভব, তা হ‌লো সংসদ ভে‌ঙ্গে দি‌য়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃ‌ত্বে ছোট্ট একটা সরকার ক্ষমতায় থে‌কে নির্বাচন প‌রিচালনা করা। পৃ‌থিবীর বহু‌দেশে এভা‌বে নির্বাচন  হয়। এটাই বিশ্ব স্বীকৃত নিয়ম। কিন্তু আমা‌দের এখা‌নে অ‌বিশ্বাসটা হ‌চ্ছে সরকার কর্মচারীদের ব্যবহার ক‌রে নির্বাচ‌ন করার একটা ধারাক্রম সৃষ্টি হ‌য়ে‌ছ। সেটা য‌দি না হয়।

মাঠ পর্যায়ের সরকারী কর্মচারীরা যার যার অবস্থা‌নে নির‌পেক্ষ থা‌কলে এবং নির্বাচনকালে সরকারী কর্মচারী, পু‌লিশ এবং বেসরকারী আইনশৃঙ্খলাহিনীর ভূ‌মিকা য‌দি  নিরপেক্ষ থা‌কে তবে সুষ্ঠুু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব রাজনৈতিক সরকারের অধীনেও। এজন্য নিরপেক্ষভা‌বে আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষ যা‌তে ভোট কে‌ন্দ্রে আস‌তে পা‌রে, তার প‌রি‌বেশ তৈরী কর‌তে হ‌বে। কিন্তু তার বিপরীতে সাধারণ মানুষ‌কে য‌দি ভোট কে‌ন্দ্রে আস‌তে নিরুৎসা‌হিত করা হয় এবং কোনো প্রার্থীকে ভয় ভী‌তির ম‌ধ্যে রাখা হয় তবে ভোট কে‌ন্দ্রে যেই  থাকুক নির্বাচন  নি‌র‌পেক্ষ ও গ্রহণ‌যোগ্য হ‌তে পা‌রে না।  এ কারণে আ‌মি ম‌নে ক‌রি না যে, বিএন‌পির দা‌বি অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী‌কে পদত্যাগ কর‌তে হ‌বে। প্রধানমন্ত্রী‌কে রে‌খেই এক‌টি সুষ্ঠু ও গ্রহণ‌যোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। ত‌বে অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনকে নির‌পেক্ষ এবং জবাবদিহির ম‌ধ্যে রাখতে হবে। 

একুশে টিভি অনলাইন: একাদশ সংসদ নির্বাচন‌ সাম‌নে রে‌খে সংসদীয় সীমানা পূণর্নিধারণের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: সাং‌বিধা‌নিক ভাষায় সীমানা নির্ধারণকে ডি‌লি‌মি‌টেশন ব‌লে। এটা অপ‌রিহার্য। জনসংখ্য বৃদ্ধি পা‌চ্ছে, প্রশাস‌নিক এককের সংখ্য বৃ‌দ্ধি ও কম হ‌চ্ছে।‌ সেই প্র‌ে‌ক্ষি‌তে এখনও সেন্স‌র‌শিপ করা হয়‌নি। ইং‌রে‌জি‌তে এক‌টি কথা আ‌ছে জে‌রি‌মেন্ডা‌রিং। এই জে‌রি‌মেন্ডা‌রিং রোধ করার জন্য নির্বাচ‌নের আগেই  সংসদীয় সীমানা নির্ধারণ করা অপ‌রিহার্য।  এটি করা সাং‌বিধা‌নিক ভা‌বে নির্বাচন ক‌মিশ‌নের দা‌য়িত্ব।

একুশে টিভি অনলাইন: রাজ‌নৈ‌তিক দল ও ভোটার‌দের জন্য ‌লে‌ভেল প্লেইং ফিল্ড কতটা প্র‌য়োজন? 

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: সব রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর জন্য সমান সু‌যোগ থাক‌বে। সং‌বিধান অনুযায়ী সে অধীকারগুলো দেওয়া আছে।যেমন:নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমা‌বেশ করার অধিকার, প্রার্থী হওয়ার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার এগু‌লো উন্মুক্ত থাক‌বে সবার জন্য।

একুশে টিভি অনলাইন:আরপিও সংস্কা‌রের প্র‌য়োজন আ‌ছে এই মুহূর্তে?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ:  আর‌পিও নি‌য়ে নির্বাচন ক‌মিশন সংলা‌পে ব‌সে‌ছিল নাগ‌রিক‌দের সঙ্গে এবং  রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোসহ ক‌মিশ‌নের কর্মকর্তা‌দের সঙ্গে। তারা সবাই সংসদীয় এল‌াকাগু‌লো চি‌হ্ণিত ক‌রেছেন। তা‌দের প্রস্তা‌বিত মতামতগু‌লো দেখার পর বোঝা যা‌বে কোন কোন সংসদীয় এলাকার সংস্কা‌রের প্রস্তাব ছিল। তা‌দের মতামতের ভি‌ত্তি‌তে এ নি‌য়ে ক‌মিশ‌নের এক‌টি রি‌পোর্ট করার কথা ছি‌লো। জা‌নি না  নির্বাচন ক‌মিশন তা ক‌রে‌ছেন কি না?

একুশে টিভি অনলাইন: আগামী নির্বাচন কেমন হ‌বে বলে আপনি আশা করেন?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: আগামী নির্বাচন কেমন হ‌বে তা এখনই বলা যা‌‌চ্ছে না।  বর্তমা‌নে দেখা যা‌চ্ছে একদল ক্ষমতায় থে‌কে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও সমা‌বেশ চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে। সমা‌বে‌শেই নি‌জে‌দের ম‌ধ্যে সংঘাত হ‌চ্ছে। কিন্তু সরকার তা‌তে কোনো হস্ত‌ক্ষেপ কর‌ছে না। অপর‌দি‌কে অপ‌জিশন কোনো সমা‌বেশ কর‌তে গে‌লে  বাধা দেওয়া হ‌চ্ছে। বাধাগু‌লো কখ‌নো রাষ্ট্রীয় পু‌লি‌শি আক্রমণ ধারা,‌ কিংবা মাঠপর্যা‌য়ে কর্মীদের আ‌ন্দোলন বা আক্রমনের মাধ্য‌মে, যেভাবেই ব‌লেন। সেগু‌লো সমা‌নে চল‌ছে। এ অবস্থায় আমা‌দের রাজনী‌তির অসমতল ক্ষেত্রতাই র‌য়ে‌ই‌ যা‌চ্ছে। সাং‌বিধা‌নিকভা‌বে মুক্ত সভা-সমা‌বেশ কর‌তে দেওয়া হ‌চ্ছে না। উভয়ই উভ‌য়ের বিরু‌দ্ধে কুৎসা রটা‌চ্ছে। অতি রাজ‌নৈ‌তিক কথাব‌ার্তার ভূ‌মিকায় ম‌নে হ‌চ্ছে নির্বাচনী প‌রি‌বেশ সুষ্ঠ ও সুন্দর প‌থে এগোচ্ছে না। আ‌গের মতই অমসৃণ,আকা-বাকা প‌থেই আগা‌চ্ছে। এগু‌লো সুষ্ঠু নির্বাচ‌নের জন্য ই‌তিবাচক নয়। 

একুশে টিভি অনলাইন: ৫ জানুয়ারীর নির্বাচ‌নের ১৫৪ জন বিনা প্র‌তিদ্ব‌ন্দ্ধিতায় নির্বা‌চিত হওয়ায় যে ধারা সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে তার প্রভাব কি একাদশ সংসদ নির্বাচ‌নে পড়‌বে?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: ওই ধারা একাদশ সংসদ নির্বাচ‌নে পড়‌বে কি পড়‌বে না তা ভ‌বিষ্য‌তে দেখা যা‌বে। কিন্তু বর্তমা‌নে তা পড়‌ছে। সম্প্র‌তি যাওয়া স্থানীয় ইউ‌নিয়ন প‌রিষদ নির্বাচনগুলো‌ একই ধারায় হ‌য়ে‌ছে। শুধু ব্য‌তিক্রম হ‌য়েছে ক‌য়েক‌টি সি‌টি কর্পো‌রেশন নির্বাচ‌নে। কিন্তু মূল  বিষয় ওই ধারাবা‌হিকতায় মানুষ নির্বাচন বিমুখ। মানুষ ভোট দি‌তে যা‌চ্ছে না। আর সুফল তা‌দের প‌ক্ষ‌ে যা‌চ্ছে, যারা অংশগ্রহণ নির্বাচন চায় না।

একুশে টিভি অনলাইন: নির্বাচ‌নের ৯ মাস আগে ১৯ জেলায় নতুন ডি‌সি নি‌য়োগ, পু‌লিশ সুপার‌ পদমর্যাদায় ২৯ জন‌কে বদ‌লি ও পদায়ন করা হ‌য়ে‌ছে, জনপ্রশাসনে এই রদবদল‌কে আপ‌নি কিভা‌বে দেখ‌ছেন?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: এটা‌ স্বভাবতই এক‌টি রু‌টিন কাজ। সুতরাং আ‌মি ম‌নে ক‌রি না ওমুক‌কে ডি‌সি কর‌লে, ওমুককে ডি‌সি না কর‌লে,ব‌ি‌শেষ কোনো ব্য‌ক্তি‌কে এস‌পি পদায়ন না ক‌রে আ‌রেক জন‌কে কর‌লে এটা নির‌পেক্ষ হ‌বে বা পক্ষপাতযুক্ত হ‌বে। এই  মুহূ‌র্তে তা বল‌তে চাই না। বিষয়‌টি হ‌চ্ছে যি‌নি প‌রিচালনায় থাক‌বেন তি‌নি নির‌পেক্ষ থাক‌বেন। প্রশাস‌নে বদ‌লি এবং পদায়ন স্বীকৃত প্র‌ক্রিয়া।

একুশে টিভি অনলাইন:‌ নির্বাচনকালীন সময় সংকট সমা‌ধা‌নে ‌ই‌সি কি‌ ব্যবস্থা নি‌তে পা‌রে।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ:‌ নির্বাচনকালীন সংকট ই‌সি সৃ‌ষ্টি ক‌রে না। এ সংকটগু‌লো রাজনীতির পূর্ব সৃষ্ট। কখনো কখনো সরকার ও বি‌রোধী দল এ সংকট সৃ‌ষ্টি ক‌রে। ত‌বে বে‌শিরভাগই  সরকা‌রের দিক থেকেই সংকট সৃ‌ষ্টি হয়। সরকার‌কেই রাজ‌নৈতিকভা‌বে  এই সংকটগু‌লোর সমাধান দিতে হ‌বে। য‌দি তা নয়, তাহ‌লে অবশ্য নির্বাচন কালীন সময় ইসি তার প্রাপ্ত আইনী ক্ষমতা প্র‌য়োগ কর‌বে। দলমত, ব্যা‌ক্তি না দে‌খে ই‌সি আইন প্র‌য়োগ কর‌লে সংকট ক‌মে যা‌বে। আর যা‌দের‌কে ক‌ন্ট্রোল করা যা‌বে না সেই নির্বাচন গুলো বা‌তিল ক‌রে দি‌তে হবে। অস্ত্র নির্বাচন ক‌মিশ‌নের হা‌তেই আ‌ছে।  কিন্তু অতী‌ত রেকর্ড বল‌ছে সংকট নিরস‌নে তা প্র‌য়োগ করা হয় নি।  কখনো কখ‌নো বাছাই ক‌রে করা হ‌য়ে‌ছে। এবার সেগু‌লো না কর‌লেই হ‌লো। 

একুশে টিভি অনলাইন : কোনো নির্বাচ‌নের সৌন্দর্য নির্ভর ক‌রে প্রার্থীদের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এবার সেটা কতটা সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: অবশ্যই। যারা প্রার্থী হতে চায় তাদের স্বতস্ফর্তভাবে সুযোগ দি‌তে হ‌বে। ত‌বে এটা তা‌ত্ত্বিকভা‌বে বলা সম্ভব হ‌লেও, বাস্ত‌বে তা সম্ভব নয়। এর দু‌টি কারণ আ‌ছে। প্রথমত যে জনপ্রিয়,‌ যে যোগ্য দল যে তাকে ন‌মি‌নেট কর‌বে তার‌ তো কোনো ভি‌ত্তি নাই। দলের যখন কাউ‌কে একবার মনোনযন দিয়ে দি‌য়ে‌ছেন‌ তিন‌ি তো বৈধতা পে‌য়ে‌ গে‌ছেন। কিন্তু এখা‌নে তার ‌চে‌য়ে যোগ্য প্রার্থী থাক‌তে পা‌রে। সুতরাং  সবার প্রার্থী হওয়ার অধিকার আ‌ছে। কিন্ত সবাই তা এ‌ক্সারসাইজ কর‌তে পার‌ছে না। আর‌কে‌টি বিষয় বর্তমান আইনগত সমস্যা ও চলমান রাজ‌নৈ‌তিক সংস্কৃ‌তির যে বিকাশ তার কার‌ণে  স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থী হওয়া ক‌ঠিন হ‌য়ে দাঁড়ি‌য়ে‌ছে।  যেমন- স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্র‌ে টাকার বিষয়টা অনেক জ‌টিল হ‌য়ে দাঁড়ায়। নির্বাচনী প্রচারনাও অ‌নেক অসাধ্য। দ‌লের‌ মার্কার যে প‌রি‌চিতি, দ‌লের‌ মার্কার যে ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী তা পা‌চ্ছে না। প্রার্থী পদে প‌দে বি‌ভিন্ন জায়গায় ব‌াধাগ্রস্থ হয়। এর ফ‌লে প্রার্থীতা নিরঙ্কুশভা‌বে নি‌শ্চিত করা য়ায় না। রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর ম‌ধ্যে গণতা‌ন্ত্রিক চর্চার অভাব এবং দ‌লের ম‌নোয়ন প্র‌ক্রিয়ায় অস্বচ্ছটার ফলে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যা‌য়ে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যা‌য় না। এর ফ‌লে অ‌নেক অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবা‌রী দ‌লের প্রার্থী হ‌য়ে নির্বা‌চিত হয়ে সংসদে যাচ্ছে। রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো য‌দি গণতা‌ন্ত্রিক হ‌তো তাহ‌লে এ সমস্যগু‌লো মোকা‌বেলা করা যেত। এখনকার রাজনী‌তির সংস্কৃ‌তির সঙ্গে সন্ত্রাস, কা‌লো টাকা ও পে‌শিশ‌ক্তি ব্যবহা‌রের কার‌ণে বে‌শির ভাগ শা‌ন্তিপ্রিয় নাগরিক রাজনী‌তি বিমুখ। আ‌রেক‌টি কারণ হ‌চ্ছে রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর ভেত‌রে স্বৈরতন্ত্র  থাকায়  সু‌শীল সমাজও রাজনী‌তি বিমুখ হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। তারা রাজ‌নৈ‌তিক দ‌লের সদস্য পদও গ্রহণ কর‌ছে না।

একুশে টিভি অনলাইন: সুষ্ঠ নির্বাচন ও নির্বাচন ক‌মিশন‌কে রাজ‌নৈ‌তিক প্রভাব মুক্ত রাখ‌তে স্বাধীন নির্বাচন ক‌মিশন আইন কতটা জরুরি?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: বর্তমান নির্বাচন ক‌মিশন গঠন করার আ‌গেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আইন করার দরকার ছিল। কিন্তু সেটা‌তো হয়‌নি। নির্বাচন ক‌মিশনও গঠন হ‌য়ে‌ গে‌ছে। আইন দি‌য়েই নিরপেক্ষতা নি‌শ্চিত করা যায় না। এটা হ‌চ্ছে একটা মনস্তা‌ত্বিক এবং সদিচ্ছার ব্যাপার। প্রশ্ন হ‌চ্ছে সেটা ঘট‌ছে কিনা? তা বুঝ‌া যা‌বে, ইসি নির্বাচন চলাকালীন সময় কিভা‌বে নির্বাচন প‌রিচা‌লনা ক‌রে তা দে‌খে। নির্বাচন কাছাকা‌ছি চ‌লে এ‌সেছে। তা‌দের কাজ দে‌খেই বুঝা যা‌বে ক‌মিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচ‌নের জন্য উপযুক্ত কিনা?

একুশে টিভি অনলাইন : জাল ভোট, ব্যালট পেপার ‌ছিনতাই রো‌ধে ই‌ভিএম কতটা কার্যকর ভূ‌মিকা রাখ‌তে পা‌রে?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: জাল ভোট, ব্যালট  পেপার ছিনতাই এগু‌লো রো‌ধের জন্য ইভিএম কার্যকর নয়।  ই‌ভিএম হ‌চ্ছে কৌশলগত উন্ন‌তি, বৈজ্ঞা‌নিক উন্ন‌তি। ই‌ভিএম ব্যবহার অ‌নেক সুু‌বিধা আ‌ছে। কিন্তু আমা‌দের দে‌শে রাজজনী‌তি‌তে ভোট নি‌য়ে যে সমস্যা তা এ পদ্ধ‌তি‌তে সমাধান হ‌বে না। এ পদ্ধ‌তি ব্যবহার নি‌য়ে আ‌গে থে‌কেই অ‌নেক পরীক্ষা নী‌রিক্ষা চা‌লা‌নো দরকার ছি‌লো। স্থানীয় নির্বাচনগু‌লো‌তে ই‌ভিএম ব্যাপকভা‌বে ব্যবহার করা দরকার ছিল। কিন্তু তা হয়‌নি।তাই এ বিষয়টা উহ্য থাকাই ভা‌লো।

একুশে টিভি অনলাইন: নির্বাচন বিশেজ্ঞরা বল‌ছেন, বর্তমান নির্বাচন ক‌মিশ‌নের আইন শৃঙ্খলা বা‌হিনীর সদস্য‌দের নিয়ন্ত্র‌ণের ব্যবস্থা নেই।নির্বাচন ক‌মিশ‌নের নিরাপত্তা ও কম‌প্লেইন ম্যানু‌য়েল নেই।এ বাস্তবতায় দলীয় সরকা‌রের অধী‌নে সুষ্ঠ নির্বাচন করা কিভা‌বে সম্ভব?

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ: সং‌বিধা‌নরে ১২৬ অনু‌চ্ছেদ অনুয‌ায়ী নির্বাচনকালে ই‌সি সব ক্ষমতার অধিকারী। ওই সময় আইনশৃংখলা বা‌হিনীসহ পু‌রো প্রশাসন নির্বাচন ক‌মিশ‌নের অধী‌নে থাক‌বে। আইনশৃংখলা বা‌হিনী কি ধর‌নের ব্যবহার কর‌লে আইন ভঙ্গ হ‌বে, তারা নি‌র্দেশ না মান‌লে এর ফ‌লে কী ধর‌নের শা‌স্তি হ‌বে। সেটা নিরুপণ ক‌রে দিক। এক‌টি নির্বাচন আচরণ ম্য‌ানুয়েল তৈরি করুক। এখন প্রশ্ন হ‌চ্ছে দোষটা প্রমাণ হ‌বে কোথায়? সেটা কি প্রশাসনের কা‌ছে রেফার ক‌রে। না‌কি নির্বাচন ক‌মিশ‌নের তদন্ত রি‌র্প‌োটের ভি‌ত্তি‌তে। ই‌সির মতামতটা যেন চূড়ান্ত হয় সেখানে ইস‌ি নির্বাচনী আচরণ ম্যানু‌য়েল তৈরি ক‌রুন। প্রয়োজ‌নে বিশেষজ্ঞ নি‌য়োগ দি‌য়ে ম্যানু‌য়েল তৈরি করুণ। এখ‌নও য‌থেষ্ট সময় আছে। জাতীয় নির্বাচ‌নের আ‌গে অ‌নেকগু‌লো সি‌টি ক‌র্প‌োরেশন নির্বাচন আ‌ছে। সেখা‌নে তারা এই আইনগু‌লো যথাযথ ভা‌বে প্র‌য়োগ করে প্রমাণ করুক নির্বাচন ক‌মিশন অক্ষম নয় সক্ষম। আমরা আশাবা‌দী, এ কার‌ণে যে, সম্প্র‌তি নারায়ণগঞ্জ, কু‌মিল্লা ও রংপুর সি‌টি কর্প‌ো‌রেশন নির্বাচ‌নে ই‌সি সক্ষমতার প‌রিচয় দি‌য়েছে। সুতরাং আগামী‌তে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ : একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা।

/ এআর /