ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

হাসিনকে নিয়েই সংসার করতে চাই : সামি

প্রকাশিত : ০৬:০২ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৮ রবিবার

স্ত্রীর একের পর এক অভিযোগে ভারতের প্রতিভাবান পেসার সামির জীবন এখন বিপর্যস্ত। গত কয়েকদিন ধরে সুইং সুলতান হিসেবে পরিচিত এ খেলোয়ারকে নিয়ে তোলপাড় চলছে মিডিয়ায়। স্ত্রী হাসিন জাহান তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, খুনের প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

তার এ অব্যাহত অভিযোগের মধ্যে অবশেষে নীরবতা ভেঙে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সামি। শনিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্ত্রীর সব অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী গুরুতর সব অভিযোগ তুলেছেন। আপনি কী বলবেন সেসব অভিযোগ নিয়ে?

সামি: দেখুন, অভিযোগ তো যে কেউই করতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। সেগুলো কিন্তু প্রমাণও করতে হবে। আমার একটা কথা হচ্ছে, হঠাৎ করে এই অভিযোগগুলো আমার সম্পর্কে তোলা হচ্ছে কেন? দুদিন আগেই তো আমি ঠিক ছিলাম। ভাল মানুষ ছিলাম। দুদিনের মধ্যে এতটা খারাপ হয়ে গেলাম কী করে!

প্রশ্ন: অভিযোগ করছেন আপনার স্ত্রী।

সামি: দেখুন, প্রথমেই বলি স্ত্রীর প্রতি ভালবাসায় কোনো ঘাটতি হয়নি আমার। এই যে এত সব সাংঘাতিক অভিযোগ ও করেছে, তারপরেও আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই। এখনও আমি ওকে আগের মতোই ভালবাসি। হাসিনকে নিয়ে, আমার মেয়েকে নিয়ে আমি আগের মতোই সুখে থাকতে চাই। শুধু এটা বুঝতে পারছি না যে, হাসিন কী করে এমন সব কথা বলছে! মাঝেমধ্যে আমিও বিস্মিত হয়ে ভাবি- এ সব কী বলছে ও! আমি ওর ওপরে শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার করেছি! আমার পরিবার ওর সঙ্গে বর্বরতা করেছে! ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি! জানি না, এ সব কথা ও কী করে বলছে! আমার তো মনে হচ্ছে, কেউ একটা ওকে ভুল বোঝাচ্ছে। না হলে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার অভাব তো কখনও হয়নি।

প্রশ্ন: হাসিন এ সব হঠাৎই বলছেন?

সামি: একেবারেই তাই। হোলিতেও আমরা একসঙ্গে হাসিখুশিভাবে দিন কাটিয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেসব ছবি পোস্ট করেছি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতেই পারে কিন্তু কখনও সীমানা অতিক্রম করেনি। সে কারণে বিস্মিত হচ্ছি দেখে যে, প্রকাশ্যে এসে ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ ও করছে। এ সব অত্যাচার নিয়ে আগে কখনও সরব হল না কেন?

প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়? আপনার স্ত্রী হঠাৎ এ রকম অভিযোগ করছেন কেন?

সামি: সেই প্রশ্নটা হাসিনকে করলেই বোধ হয় ঠিক হবে। একমাত্র ওই এর উত্তর দিতে পারবে। ও আমার পরিবারের কথা তুলে অনেক কিছু বলেছে। আমার পরিবার ওকে আগেও যে রকম ভালবাসত, এখনও সে রকমই ভালোবাসে। এখনও সবাই চায়, আমরা একসঙ্গে থাকি। আর শুনুন, আমার পরিবারের লোকেরা ওর সঙ্গে কথাও বলছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে কলকাতাতেও গেছে আমার পরিবারের লোকেরা।

প্রশ্ন: আপনি কি চেষ্টা করছেন ঘরের সমস্যা ঘরেই মিটিয়ে ফেলতে?

সামি: বারবারই বলার চেষ্টা করছি যে, মিয়া-বিবির ঘরের ব্যাপার ঘরেই থাকুক। এ সব করে কী হবে? যারা হাসি-মজা করার, তারা করে যাচ্ছে। মাঝখানে থেকে ভুগছে একটা পরিবার। ক্ষতি কার হচ্ছে এতে? আমাদের তিনজনের। আমার, হাসিনের, আমাদের মেয়ের। এটা মাথায় থাকা দরকার।

প্রশ্ন: আপনার মনে হচ্ছে কি আর শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট সম্ভব?

সামি: অবশ্যই সম্ভব। আমি এখনও খুবই আশাবাদী, হাসিন বুঝতে পারবে এবং আমরা আবার একসঙ্গে থাকব। যে অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো আইনি পথে সমাধান করা হোক, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমিও চাই সব অভিযোগ নিয়েই তদন্ত করা হোক।

প্রশ্ন: আপনার স্ত্রীর দাবি, একটি মোবাইল পাওয়া গেছে। সেই মোবাইলে রয়েছে ইংল্যান্ডের নম্বর। সেই মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই এই সব অভিযোগ করেছেন তিনি। মোবাইলটি কি আপনার?

সামি: না। মোবাইলটি আমার নয়, এর মধ্যে যে নম্বরটি রয়েছে সেটিও আমার নয়। অভিযোগ করার হলে অনেক কিছুই বলে দেয়া সম্ভব। তারজন্য কিছু চিন্তাভাবনা করার দরকার নেই। তদন্ত হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, মোবাইলের মধ্যে কী আছে।

প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী কয়েকটি অডিও শুনিয়েছেন। সেগুলো অনুযায়ী, বিদেশের কয়েকজনের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ রয়েছে।

সামি: দুবাইয়ে যাওয়া নিয়ে অডিওটা আমি শুনেছি। এ নিয়ে যথা সময়ে উত্তর দেব। আপাতত একটা কথাই বলব যে, সন্দেহজনক প্রশ্ন তোলার মতো কোনো ঘটনা দুবাইয়ে ঘটেনি।

প্রশ্ন: একাধিক অশ্লীল চ্যাট পাওয়া গেছে আপনার মোবাইলে। সেগুলো?

সামি: তদন্ত হোক। সব প্রমাণ হয়ে যাবে। সেসব ছবি আর চ্যাট তো নিশ্চয়ই জমা পড়বে পুলিশের কাছে। তদন্ত হলে মোবাইল সম্পর্কে সব কিছুই বেরিয়ে আসবে।

প্রশ্ন: এক দিকে স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে আইনি লড়াই। আবার পরিবারের সঙ্গেও আগের মতো থাকতে চান। আপনার স্ত্রী ও বাচ্চার সঙ্গে। দুটো দিক কীভাবে সামলানো সম্ভব?

সামি: লড়াইয়ের কোনো ব্যাপার নেই। আমি শুরু থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে সমঝোতার মাধ্যমে আমরা দুজনে আবার এক হতে পারি। তাতেই আমার পরিবারের জন্য মঙ্গল, আমাদের বাচ্চার জন্য মঙ্গল। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, হাসিন কোথাও একটা ভুল বুঝেছে। কেউ ওকে ভুল পথে চালিত করেছে। ও নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে। আমি আশাবাদী, ওর শুভবুদ্ধি ফিরবে আর আমাদের জীবন আগের মতোই আবার সুন্দর হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন: কলকাতায় এসে তা হলে বোঝাচ্ছেন না কেন স্ত্রীকে?

সামি: আমি অবশ্যই কলকাতায় যাব। প্রথমে ওর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ফোনে কথা বলে আসব ভেবেছিলাম।

প্রশ্ন: কথা কি হয়েছে স্ত্রীর সঙ্গে?

সামি: না, আমার সঙ্গে সরাসরি হয়নি। তবে আমার পরিবারের লোকদের সঙ্গে ওর কথা হয়েছে।

প্রশ্ন: এসব অভিযোগের পরও আপনি বলছেন, স্ত্রীর সঙ্গেই থাকতে চান। সত্যিই কি সেটা চান?

সামি: হ্যাঁ, চাই। স্ত্রী, মেয়েকে নিয়েই আমি থাকতে চাই। আমার দুটো সংসার। একটা ক্রিকেটের, সেখানে আমি দেশের হয়ে ম্যাচ জিততে চাই। অন্য সংসারটা আমার পরিবার। যেমন ক্রিকেট সংসারে আনন্দে থাকতে চাই তেমনই স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই।

প্রশ্ন: সেটা কি সত্যিই সম্ভব?

সামি: অবশ্যই সম্ভব। আমি খুবই আশাবাদী, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের জীবন আগের মতোই আবার সুন্দর হয়ে যাবে। টুইটারে যখন আমার স্ত্রীকে সবাই আক্রমণ করেছিল খোলামেলা পোশাক পরার জন্য, আমি পাশে দাঁড়াইনি? সব সময়ই আমি স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনও দাঁড়াচ্ছি। যা অভিযোগ করার, করেছে। আমার হয়ত বদনাম হয়েছে। ঠিক আছে। সব ভুলে যেতে রাজি আছি। পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চাই আমি। তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমি।

আরকে// এআর