ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

দ্য থিউরি অব এভরিথিং

মহাবিশ্বের সূচনা: বিগব্যাং নামকরণ যেভাবে এলো

প্রকাশিত : ০২:২০ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:২৪ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় থাকা স্টিফেন হকিংয়ের মহাপ্রয়াণের পর আবারও আলোচনায় এসেছে বিগব্যাং তত্ত্ব। অনেকের ধারণা, বিগব্যাং তথ্যের সূচনা তাঁর হাত ধরেই। আবার অনেকেই মনে করেন, এই তত্ত্বটি আগেই ছিল, স্টিফেন হকিং কেবল এর একটা সমাধান টেনে দিয়েছেন। আসুন জেনেই নিই-বিগ ব্যাং তথ্যটি কি? কার হাত ধরে এ তত্ত্বের সূচনা হয়েছে? আর স্টিফেন হকিংয়েরই বা এই তত্ত্বে কি অবদান রয়েছে।

বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ শব্দটির প্রথম নামাকরণ করেছিলেন ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল। তবে হোয়েল বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ নামাকরণ করলেও মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় যে বিকট শব্দ হয়েছিল তার প্রথম ব্যাখ্যা করেন বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিদ জর্জেস লেমাইতার। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় যে বিকট শব্দ হয়েছিল, লেমাইতার তার নাম দিয়েছিলেন বিগ নয়েস বা মহাশব্দ।

স্টিফেন হকিংয়ের দ্য থিওরি অব এভরিথিং গ্রন্থে হকিং দাবি করেন, আজ থেকে ১৩৭০ কোটি লক্ষ বছর আগে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে অসংখ্যা ক্ষুদ্র-কণিকা অসীম ঘণাকারে পুঞ্জীভূত ছিল। আর পূঞ্জীভূত কণিকা একসময় উত্তপ্ত হতে হতে ঘটে মহাবিস্ফোরণ। এই মহাবিস্ফোরণের নামই বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। আর এর মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় মহাবিশ্বের। স্টিফেন হকিং সেই বিস্ফোরণের যথার্থ প্রমাণ তুলে ধরেছেন তাঁর দ্য থিউরি অব এভরিথিং গ্রন্থে।

জ্যোতির্বিদ্যায় শুরু থেকেই মহাজগৎ সৃষ্টির রহস্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। মহাজগৎ সৃষ্টির পূর্বে সবকিছু যে পুঞ্জীভূত ছিল, তার প্রথম ধারণা পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা দর্শনার্থীদের দেওয়া বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে। তারা বলেন, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে ধ্রুবতারা যতটা নিচে দেখা যায়, উত্তর মেরুতে ততটা নিচে দেখা যায় না। এর উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা প্রথম ধারণা পান যে, মহাজগতে যা কিছু আছে তা একটি আরেকটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এখন থেকেই মূলত ধারণা জন্মায়, সমস্ত মহাজগৎ কি তাহলে একসময় পূঞ্জীভূত ছিল। আর চরম শক্তি ধারণ করার পর এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে কি সেই মহাজগতের সৃষ্টি হয়েছে?

পরবর্তীতে দার্শনিক অ্যারিস্টটল, টলেমি, কোপার্নিকাস, কেপলার ও গ্যালিলি পৃথিবী, সৌরজগৎ, সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে বিংশ শতকের আগে তাদের কেউই ধারণা করেননি যে, পৃথিবী ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে নাকি প্রসারিত হচ্ছে। তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল পৃথিবী অসীম সময়ে সৃষ্টি হয়েছে এবং অসীম পর্যন্ত এটি বিদ্যমান থাকবে। তবে নিউটনের মহাকর্ষ সম্বন্ধীয় তথ্য এসে পৃথিবী ও মহাজগৎ সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে দেন। নিউটন বলেন, মহাবিশ্বের যে বস্তুকণা আছে তা যেমন পরষ্পরকে আকর্ষণ করে, আবার একইধর্মী হলে বিকর্ষণও করে। এতে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব হয় সংকুচিত হচ্ছে বা সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে অনেকে বিজ্ঞানীই নিউটনের এ নীতি মানতে পারেননি।

পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল প্রমাণ করেন, যেখান থেকেই দেখা যাক না কেন দেখা যাবে, পৃথিবী থেকে দূরবর্তী নক্ষত্রগুলি ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। এর সরল অর্থ পৃথিবী দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। আর এখান থেকেই ধারণা করা হয় যে, আজ থেকে ১০-২০ হাজার বিলিয়ন বছর আগে গোটা নক্ষত্রপুঞ্জসহ সবকিছুই পুঞ্জীভূত অবস্থায় ছিল। আর তার এই পর্যবেক্ষণই ইঙ্গিত দেয় যে, মহাবিস্ফোরণ বা বিগব্যাং নামের কোন একটি কিছুর অস্থিত্ব ছিল। আর এই মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই সময়ের সূচনা হয়েছিল বলে প্রমাণ করেন স্টিফেন হকিং।

সূত্র: স্টিফেন হকিংয়ের ‘দ্য থিউরি অব এভরিথিং’
লেখক: মোহাম্মদ জুয়েল