ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

রোহিঙ্গা শিশুদের সেক্স ওয়ার্কার বানিয়ে ফেলছে পাচারকারীরা

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮ বুধবার

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও খাদ্য সংকটের ফলে পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে, সেখানকার ক্যাম্পগুলো থেকে শিশুদের বিদেশ পাঠানোসহ রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে গৃহকর্মীর কাজ, হোটেলে পাচকের কাজ দেওয়ার নাম করে শিশুদের তুলে দিচ্ছে যৌনব্যবসায়ীদের হাতে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন শিশু ও তাদের বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাদের সঙ্গে ক্যাম্পছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তারা যাননি। এদিকে তারা ক্যাম্প না ছাড়লেও বেশ কয়েকজন তরুণীকে ক্যাম্প থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছে পাচারকারী দলের সদস্যরা।

এদিকে মাসুদা নামের এক তরুণীকে যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি দাতব্য সংস্থা। বিবিসির সহায়তায় সংস্থাটি নারী ও শিশুদের পাচারকারী দল থেকে বাঁচানোর বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাসুদা বলেন, ‘আমি জানতাম আমার সঙ্গে কি হচ্ছে। যে মহিলাগুলো আমাদের চাকরির প্রস্তাব দিচ্ছিলো, তারা যে সেক্সকর্মী, তা সবাই জানতো। তিনিও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এখানে আছেন। কিন্তু জানা সত্ত্বেও আমার কিছুই করার ছিল না। কারণ, বাঁচার জন্য আমার দ্বিতীয় কোন সুযোগ ছিল না’।

মাসুদা আরও বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমার কাছে বর্তমানে কোন টাকা নেই। আমাকে মিয়ানমারে বারবার ধর্ষণ করা হয়েছে। আমার ভাই এবং বোনের সঙ্গে আমি আমাদের গ্রামের বনে খেলতাম, নাচতাম,গাইতাম। একদিন সব শেষ হয়ে গেছে। কিভাবে খেলতে হয়, তাও আমি আজ ভুলে গেছি’।

এদিকে অনেক বাবা-মা তাদের শিশুকে ফেরত না পাওয়ার শঙ্কাই ভোগছেন। আবার অনেকেই ক্যাম্পগুলোর দিনগুলোকে দোযখ হিসেবে দেখছেন। তাইতো মেয়েকে কোথায় নেওয়া হয়েছে, তার চেয়েও বড় কথা ওই মায়ের কাছে, ওই ক্যাম্প আর রাখাইনের চেয়ে পৃথিবীর অন্য যে কোন জায়াগায় তার মেয়ে ভাল থাকবে। এদিকে এই মেয়েগুলোকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তাদের বাবা-মায়েরা।

বিবিসির একটি টিম সেক্স খদ্দের সেজে এই বিষয়টি সামনে বের করে আনে। সমুদ্রের পাশে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কটেজ ও হোটেলে চেষ্টা চালিয়ে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় দালালদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন বিবিসির টিমের লোকজন। পরে পুলিশের সহায়তায় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিদেশিদের জন্য কোন তরুণী ভাড়া করে আনতে পারবেন কি না। বিশেষ করে রোহিঙ্গা তরুণী বা শিশু লাগবে। জবাবে এক দালাল জানায়, সে পারবে।

কিছুক্ষণ পরই একটি সিএনজি চালিত যানে করে দুই রোহিঙ্গা তরুণীকে নিয়ে আসে ওই দালাল। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এতে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। জানা যায়, রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের কক্সবাজারে সেক্স ওয়ার্কার হিসেবে তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বিবিসির অন্য আরেকটি টিম ওই দালাল চক্রের মাধ্যমে পৌঁছে যায় যৌন পল্লীতে। যেখানে তাদেরকে শতাধিক রোহিঙ্গা শিশুর ছবি দেখানো হয়। যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। বিবিসির ওই টিমকে বলা হয়, ‘আপনাদের পছন্দ না হলে, আমাদের কাছে আরও আছে’।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওইসব রোহিঙ্গা তরুণীর বেশিরভাগই থাকছেন দালালদের পরিবারের সঙ্গে। যখন খদ্দের থাকে না, তখন তাদের দিয়ে পরিবারের কাজ করানো হয়।

সূত্র: বিবিসি
এমজে/