ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিদেশি আইটি কোম্পানির আধিপত্য কমাতে চাই: লুনা শামসুদ্দোহা

কাজী ইফতেখারুল আলম

প্রকাশিত : ১১:০৫ এএম, ২৩ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:৩১ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৩ শনিবার

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারী উদ্যোক্তা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন লুনা শামসুদ্দোহা। তিনি বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটির (বিডাব্লিউআইটি) এর সভাপতি। দেশের  খ্যাতনামা সফটওয়্যার কোম্পানি দোহাটেক নিউ মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তিনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন।

সুপরিচিত এই তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখায় আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন। প্রযুক্তি খাতে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির কারণে গ্লোবাল উইমেন ইনভেন্টরস অ্যান্ড ইনোভেটরস নেটওয়ার্ক (গুইন) সম্মাননা পেয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি সুইস ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (সিসমা) পান।

সফটওয়্যার উদ্যোক্তা হিসেবে দেশে এবং বিদেশে তিনি একজন পরিচিত মুখ। এ খাতে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। আর সেজন্যই হয়তো দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বেসিস নির্বাচনে এবার প্যানেল ঘোষণা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা লুনা শামসুদ্দোহা।

নারীর ক্ষমতায়ন, বেসিস নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম এর সঙ্গে কথা হয় লুনা শামসুদ্দোহার।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের সংযুক্ত করতে সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

লুনা শামসুদ্দোহা: আমাদের দেশে প্রযুক্তি ইকো-সিস্টেম সরকারের তৈরি করা। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। ট্যাক্স কমাচ্ছে, এ সবই করছে সরকার। এটাকে ব্যবহার করে আমরা যদি মেয়েদের আনতে পারি তবেই সফলতা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দোহাটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আপনি। এই প্রতিষ্ঠানটিকে আজকের অবস্থানে আনতে কোন ধরনের বাধা এসেছে কী?

লুনা শামসুদ্দোহা: দোহাটেককে আজকের অবস্থানে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কারণ অনেকবার ফেল করেছি। আবার দাঁড়িয়েছি। অনেক কাজ পাইনি, কিন্তু যে কাজ পেয়েছি সেটাতে ফেল করিনি। কেউ নিজের খাবার প্লেটে করে সাজিয়ে দেয় না। নিজে নিজে সেটা করে নিতে হয়। নিজে জেনে, বুঝে, এগিয়ে, সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাজ করছি। এটা একটা তৃপ্তির যে, আমাকে কেউ না দিলেও আমি একটা জায়গায় প্রতিযোগিতা করে কাজ নিতে পারছি, সেটা সফলভাবে করতে পারছি। এই চিত্র শুধু যে দেশে তা নয়, আমরা বাইরের দেশেও অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলে কাজ পেয়েছি, সেগুলো সফলভাবে করেছি। এটা আসলে কাজের যোগ্যতা। কোম্পানির যোগ্যতায় এটা করা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নারীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলো কী?

লুনা শামসুদ্দোহা: এ এক মহা চ্যালেঞ্জ। আর এমন চ্যালেঞ্জ হাজারোটা রয়েছে। প্রথম কথা হলো, যদি অনেক ওপর থেকে বলি তবে বলতে হয়, মেয়েরা কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং খুব কম পড়ে। এটাকে অনেকেই ছেলেদের লেখাপড়া ভাবে। সেখানে একটা বাধা রয়েছে। তারপর মেয়েরা যাও পড়ে, তাতে ছেলেদের তুলনায় ক্যারিয়ারে যায় না। এটাও হয়। খুব কম মেয়ে দেখা যায়,পড়ালেখা করে, কিন্তু কাজ করতে আসে না। এটাও সামাজিক চ্যালেঞ্জ। অনেকেই মেয়েদের রাতের বেলায় আসা যাওয়া, কাজ করাকে স্বাভাবিকভাবে নেয় না। এটা এখনো আমাদের দেশে হচ্ছে। এখনো সামাজিক বাধাটাই সবচেয়ে বড় বাধা। এসব সামাজিক বাধা অতিক্রম করে তাদের কাজে নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জের।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কর্মক্ষেত্রের বাইরে পারিবারিক জীবনে আপনি নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?

লুনা শামসুদ্দোহা: আমাদের একমাত্র মেয়ে রীম শামসুদ্দোহা। মা-বাবাকে দেখে মেয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে এলেও মা-বাবার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হননি। নিজেই ‘যেতে চাও ডটকম’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। যেখানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইভেন্টের আপডেট খবরাখবর থাকে। মেয়ের এ উদ্যোগ আগামীতে বড় ধরনের সাফল্য পাবে বলে আশাবাদী।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নির্বাচনে বিজয়ী হলে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার থাকবে?

লুনা শামসুদ্দোহা: আমি সেই ১৯৯২ সাল থেকে শিখে আসছি, এখনও শিখছি। এখন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথেও প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকছি। আমার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে বেসিসের কাজে লাগাতে চাই। আমি যেভাবে নিজের কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি সেভাবে বেসিসের সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বেসিস যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে অনেকটাই সরে গেছে। আমি বেসিসের সেই ভিত্তি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ফোকাস ইনিশিয়েটিভ ও যথাযথ রিসার্চ করে সেটা যদি সবার সঙ্গে শেয়ার করা যায় তাহলে সবাই উপকৃত হবে। তাই এটি আমার অন্যতম লক্ষ্য হবে। এছাড়া সচিবালয়কে শক্তিশালীকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটি অনেকটা পরিবারকে সামলানোর মতো। তাই আমার নিজের পরিবার বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে সামলেছি বা এগিয়ে নিয়েছি ঠিক সেভাবেই বেসিস সচিবালয়কে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমার আরেকটি লক্ষ্য হলো, বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য কমানো। বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করবে সেটা সমস্যা নয় বা আমরা স্বাগত জানাই। তাদের কাছ থেকে আমরা শিখবো। তাই বলে তাদের আধিক্য বা সব কাজ তারা করবে এটা মানা যায় না। আমরা লোকাল সফটওয়্যার তৈরি করে বিদেশে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করছি। সব জায়গায় টেকনোলজি এক, আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা রয়েছে, তাহলে আমাদের দেশে কেনো দেশি কোম্পানিকে বাদ দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে? এই বিষয়টাতেও আমার ফোকাস থাকবে। আমাদের প্রশিক্ষণও বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে বিদেশি পরামর্শক রাখবো, তাই বলে দেশের প্রশিক্ষণ বিদেশিদের দিতে চাই না। এই বিষয়েও কাজ করতে চাই।

 

এসএইচ/