ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নানা অভিযোগের জবাব কী!

প্রকাশিত : ১১:৩৮ এএম, ৩০ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার

নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে আকাশপথের নিরাপত্তা ইস্যুতে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সরকারি বেসরকারি অপারেটর এবং কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতোটা তৎপর সেটি নিয়েও হচ্ছে নানা বিশ্লেষণ।

বাংলাদেশি এ বিমানটি এমন সময় দুর্ঘটনার শিকার হলো যার কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা `আইকাও` নিরাপত্তার ব্যাপারে বাংলাদেশে একটি নিরীক্ষা চালিয়েছিল।

আইকাও`র ওই অডিটে ইউএস বাংলা এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেই নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য আইকাও`র সেফটি অডিটে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলেই উঠে আসে।

গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি এবং একজন চীনা যাত্রী নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হন ১০ জন বাংলাদেশি, নয় জন নেপালি এবং মালদ্বীপের একজন নাগরিক।

প্রাকৃতিক কারণে, মানুষের কোনও ভুল বা কারিগরি ত্রুটি প্রধানত এই তিনটি কারণেই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নেপাল দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। এজন্য দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ তদন্ত রিপোর্টে জানা যাবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয় ফ্লাইটটি।

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক সেফটি এন্ড রেগুলেশন্স চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর জানান, নিরাপত্তা ইস্যুতে এক যায়গায় থেমে থাকার কোনও সুযোগ নেই। দুর্ঘটনা হোক বা না হোক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিদিনই একটা নতুন দিন। নেপাল দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রাথমিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা এয়ারলাইনে গিয়েছি। তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠক হয়েছে। সবারটা র‍্যান্ডম চেক করা হয়েছে। আমাদের রেগুলার যে অ্যাক্টিভিটিস আছে সেটি বিশ্বমানের। আইকাও`র সর্বশেষ অডিটে বাংলাদেশের সেফটি রেটিং (ইফেকটিভ ইমপ্লিমেন্টেশন) স্কোর ৫০ থেকে বেড়ে ৭৫ এর বেশি অর্জিত হয়েছে। এশিয়া তো বটেই বিশ্বের মধ্যে ৩০-৩৫টি দেশের এই স্কোর আছে। কিন্তু আমাদের টার্গেট সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দেশের কাতারে যাওয়া।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ১৬টি আন্তর্জাতিক ও ৮টি অভ্যন্তরীণ রুটে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিমান চলাচল করছে। গত প্রায় এক দশকে বাংলাদেশের যাত্রী এবং ফ্লাইটের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আকাশপথে যাতায়াতের চাহিদাও বাড়ছে। বেসরকারি তিনটি অপারেটর এখন দেশ ও দেশের বাইরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

দুর্ঘটনার পর কেউ কেউ বেসরকারি সংস্থার ফ্লাইট পরিচালনায় বৈমানিকদের বাড়তি কাজের চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। অনেক উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ হয় না বলে অভিযোগ তোলেন। অনেক আলোচনায় নিরাপত্তার প্রশ্নে গাফিলতি বা উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। বৈমানিকদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমেও বেশকিছু খবর প্রকাশ হয়েছে।

বেসরকারি অপারেটর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এফ আকবর এ ব্যাপারে বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনও ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ কিন্তু পাইলটকে ফোর্স করতে পারে না। কারণ এটা তার লাইফ। হি ইজ ফ্লাইং। তার নিজের জীবন কিন্তু সেখানে জড়িত।

ইউএস বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বলেন, একজন পাইলট কত ঘণ্টা কাজ করবেন এটি কোনও অপারেটর ঠিক করতে পারে না। এটি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা আইকাও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ ঘণ্টার যে ফ্লাইট ডিউটি লিমিট সেখানে চার সেক্টরের বেশি করা যাবে না এ ধরনের কিন্তু কোনও লিমিট আইকাও দেয়নি।

অপারেটরদের বাধ্য করা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বেসরকারি দুটি কোম্পানির বক্তব্য হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ফ্লাইট পরিচালনা অসম্ভব।

তারা বলছেন, প্রতিটি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের আন্তর্জাতিক বাঁধাধরা নিয়ম আছে। নির্দিষ্ট ঘণ্টা ওড়ার পর প্রতিটি বিমানকে রক্ষণাবেক্ষণ ও চেক করতে হয়।

আসিফ বলেন, রেগুলার ইন্টারভেলে মেইনটেনেন্স না করে ফ্লাইট অপারেটর করা কোনও অপারেটরের পক্ষে সম্ভব না। এফডিএম ডেটা আমাদেরকে সিভিল এভিয়েশন এবং প্রস্ততকারকদের নিয়মিত সরবরাহ করতে হয়। কেউই মেইনটেনেন্সের বাইরে গিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেয় না। পাইলটকে ফোর্স করে ফ্লাইট চালাবো, এবং পাইলট সেই ফ্লাইট নিয়ে চলে যাবেন আবার টাওয়ারও লিমিটেশন যেনে ওই এয়ারক্রাফটকে অনুমতি দেবে! এ ধরনের ধারণা খুবই অর্বাচীনমূলক হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গত ৪৬ বছরে ১৬টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৮৪ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের আগে বিধ্বস্ত হয়। যেখানে ৪৯ আরোহীর সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনা তদন্ত শেষে বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নেপাল দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হলে তার রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ একইরকম দুর্ঘটনা এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানাচ্ছে সবাই।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

একে// এসএইচ/