ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

একটু সুখের আশায় রাজধানীতে আসা

আব্দুল করিম

প্রকাশিত : ০৩:৫৩ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:০৫ এএম, ১৫ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার

আনোয়ার হোসেন

আনোয়ার হোসেন

যানজট আর শব্দ দূষণে নাকাল রাজধানী ঢাকাবাসী। পাশপাশি রয়েছে কর্ম ব্যস্ততা। আর এসব থেকে একটু শান্তির পরশ নিতে অনেকেই ছুটে যান রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন রকম মানুষ প্রতিদিনই সেখানে ভিড় করেন। কেউবা একটু শান্তির আশায় আবার কেউবা ছোট শিশুদের বিনোদনের পাশাপাশি নির্মল বাতাশের জন্য এখানে আসেন। সেই অর্থে বলা যায়, এটি এক ধরনের বিনোদন কেন্দ্র।

তবে, শুধু পর্যটকরাই যে সেখানে যায় এমন না। পর্যটকদের কাছে কিছু বিক্রি করে দুমুঠো খাবারের আশায় সেখানে বিড় করেন অনেক হকার। যদিও তাদের সেখানে বসতে দেওয়া হয় না। তবুও তারা একটু বিক্রি বেশির আশায় ভিড় করেন প্রশাসনের চোখকে ফাকি দিয়ে। অনেকেই ভালো বিক্রি করেন আবার অনেকেই আশানুরুপ বিক্রি করতে পারেন না। এই হকারদের সম্পর্কে কেউ তেমন জানতে চান না। তাদের সুখ-দুঃখের কথা। কিন্তু বয়স্ক একজন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তার জীবন সংগ্রামের কথা। ৭৫ বয়সী আনোয়ার হোসেন। পেশায় চানাচুর বিক্রেতা। থাকেন মহাখালির কলেরা হাসপাতেলর পিছনে সাততালে নামক এক বস্তিতে।

আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তার দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে।

তার ছেলেরা বিয়ে করে যে যার মতো থাকে তাদের কোনো খোজ খবর নেয় না। তার মেয়েটির বয়স ১৮।

তিনি বলেন, অনেক কষ্টে মেয়েটাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। আর সম্ভব হয় না।

এখানে বিভিন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চানাচুর বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লাভ থাকে। এ দিয়ে নিজে কোনো রকম কষ্ট করে চলি। আর বাকি টাকা বাসায় পাঠাই।

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে দিবো, তা নিয়ে খুব দুঃচিন্তায় আছি। বিয়ে দিতে যে খরচ লাগবে, তা কোথায় পাবো

সে অনেক কষ্ট নিয়ে বলেন, অনেক আশা ছিলো ছেলেরা বড় হলে আমার আর বুড়ো বয়সে কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু নিয়তি... থাক, সেসব বলে আর কী লাভ! এখন মেয়েটাকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলে বাচি। একটু সুখের আশায় এই শহরে আসা।

শুধু আনোয়ার হোসেনই নয়, এরকম আরও অনেক লোক প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশে রয়েছে, যারা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রাজপথ, ফুটপাত ও গলিপথে জীবন ও জীবিকার তাগিদে নেমে আসে। রাজধানীবাসীর দরকারি উপকরণটি সরবরাহ করেন। কিন্তু রাজধানীরবাসীর চাহিদা মিটাতে পারলেও নিজের জীবনের চাহিদা মিটাতে পারেন না। চাপা কষ্টে দিন যায়, আনোয়ার হোসেনের মতো অনেকেরই।

 

এসএইচ/