ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

খুলনায় মনি গাজীপুরে এগিয়ে মান্নান

দুই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা আজ

প্রকাশিত : ১১:০৩ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আগ্রহী নয়জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড দুই সিটিতে আগ্রহী নয়জনের সাক্ষাৎকার নেয়। তবে প্রার্থিতা নিয়ে একাধিক নেতা অনঢ় অবস্থানে থাকায় এখনো দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। আজ সিনিয়র নেতারা নিজেদের সঙ্গে বৈঠক করে সন্ধ্যায় প্রার্থী ঘোষণা করবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সামনে প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থিতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তাদের যুক্তি ও মনোনয়ন পেলে জয়ের সম্ভাব্যতার বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আজ প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, গাজীপুর সিটিতে সাতজন ও খুলনা থেকে তিনজন বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের মধ্যে গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি ছাড়া সবাই গতকাল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। সেখানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মনোনয়ন দিতে আগ্রহী ছিল কেন্দ্র। তিনি তার অনাগ্রহের কারণে বর্তমান মেয়র ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।
অন্যদিকে গাজীপুরের বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান শুরুতে নীরব থাকলেও শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাই এই সিটিতে প্রার্থী ঠিক করতে বিএনপিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ বার্ধক্যজনিত কারণে এম এ মান্নানের বদলে বিকল্প প্রার্থী ঠিক করে রেখেছিল দলটি। শেষ মুহূর্তে মান্নানের সক্রিয়তায় এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা দেখে প্রার্থী নির্বাচন করতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।
দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গতকাল বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা না দেওয়ার একটি কারণ হচ্ছে তারা দেখতে চেয়েছিল দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেয়। সেই অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই করতে যাচ্ছে দলটি। প্রসঙ্গত গতরাতে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুরে মনোনয়ন নিয়ে এক ধরণের বিপাকে পড়েছে দল। মান্নানের অসুস্থ্যতা ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আলোচনায় এতোদিন আজমত উল্লাহ খান এগিয়ে থাকায় রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এই সিটিতে হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছিল দল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে হাইকমান্ড। কেন্দ্রের কাছে ম্যাসেজ আছে যে, গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জিততে হলে জনমতে এগিয়ে থাকা এবং অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দিতে হবে। তাই বিএনপি বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকেই শেষ পর্যন্ত বেছে নিতে যাচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আজ দিনের যেকোনো সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির ১০ নেতা বৈঠক করবেন। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত দেবেন। যদিও অপর একটি সূত্র দাবি, গাজীপুরে আওয়ামী লীগ যেহেতু নতুন প্রার্থী বেছে নিয়েছে বিএনপিও একই পথে হাটবে। কারণ এম এ মান্নান দীর্ঘসময় কারাগারে এবং অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। সিটি কর্পোরেশন সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেননি। এড়াছা তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই দল বিকল্প প্রার্থী হিসেবে টঙ্গীর জনপ্রিয় বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে ভাবছে।
এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। এরপর গাজীপুর সিটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
সাক্ষাৎকার দেওয়া পর খুলনা সিটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম বলেন, মনোনয়ন বোর্ডে বলেছি আমাকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রাখেন। খুলনায় মনিরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেন।
মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, র‌ফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গ‌য়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও‌ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১২ এপ্রিল তো নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দ্রুতই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সিটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ সোমবার যেকোনো সময় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা গুলশানে বসবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও সাক্ষাৎকারের প্রার্থীদের মতামত জানানো হবে। এরপর প্রার্থী ঘোষণা হবে।
গতরাত সাড়ে নয়টার দিকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, আবার আলোচনা হবে। এরপর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
গাজীপুর সিটি থেকে সাক্ষাৎকারে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন সরকার, সাবেক পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সালাম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন।
খুলনা সিটি থেকে সাক্ষাৎকারে অংশ নেন খুলনার বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা।

/এআর /