ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ওরে আইল বৈশাখ নয়া সাজে…

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০৯:৫৯ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:১৪ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার

ভোর ছ`টা। সূর্য উঠলেও রমনার বটমূলে তখনো অন্ধকার। কিন্তু তাতে কী! নারী- পুরুষ ও শিশুদের ভিড় সামলানো দায়। সবার গায়ে রঙিন পোশাক, মুখে হাসি।

বুড়ো বটগাছটার তলার ততক্ষণে বেজে উঠেছে বাঁশিবাদক মর্তুজা কবির মুরাদের বাঁশিতে `রাগ আহীর ভাঁয়রো`।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। নিরাপত্তা কর্মীরা হিমশিম খেতে থাকে। কোথাও কোনো বিশৃংখলা নেই। শুধু বটমূল নয়, বরং আশপাশের সব এলাকায় রয়েছে মানুষের ঢল।

মিরপুর  শেওড়াপাড়া থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বটমূলে এসেছেন হাসান আলম অ্যানি। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই আসি। বাঙালির ঐতিহ্য বৈশাখ। আমাদের সংস্কৃতি বৈশাখ। একজন বাঙালি হিসেবে আমার সন্তান যেন ছোট বেলা থেকে তার সংস্কৃতিকে বুঝতে শিখে সেটাই আমি দেখি।

সুনিপুণ বড়ুয়া চৌধুরী। তেজগাঁও থেকে এসেছেন। তিনি জানালেন সেই ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিবছর আসেন রমনার বটমূলে। তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বৈশাখ বাঙালিয়ানা উৎসব। একে ধারণ না করলে একদিন আমরা আমাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলব। তাই একে ধরে রাখতে হবে আমাদেরকেই।

বাঁশিবাদন, সম্মেলক, একক মিলিয়ে টানা বত্রিশটি পরিবেশনা নিয়ে করা হয়েছে এ আয়োজন। পরিবেশিত হচ্ছে পূর্বগগনে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত, ওই পোহাইল তিমিররাতি, শুভ্র প্রভাতে পূর্ব গগনে, প্রথম আলোর চরণধ্বনি, জাগো অরুন ভৈরব, ও আমার বাংলাদেশের মাটি, হিমালয় থেকে সুন্দরবন, শিরনি খাওয়ার লোভ যার আছে, ওরে আইল বৈশাখ নয়া সাজে...

প্রায় দশহাজার লোকের উপস্থিতিতে বটমূলসহ পুরো রমনা এলাকা গিজগিজ করছে। বটমূল প্রাঙ্গনে পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, সময়ের ব্যবধানে বৈশাখকে বরণের পরিসর বড় হচ্ছে। তাই এটিকে অন্য কোথাও আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু তার কথার প্রতিবাদ করলেন তার মেয়ে মাহমুদা শান্তা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শান্তা বলেন, বটমূলে একটা ঐতিহ্য আছে। আছে পুরনো গন্ধ। আমরা এ গন্ধ হারাতে চাই না।

উল্লেখ্য বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা বছরের প্রথম দিনে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগঠন নতুন বছরকে বরণের জন্য এ আয়োজন করে থাকে। বাংলা ১৩৭১ সাল থেকে ছায়ানট এ আয়োজন করে আসছে। ছায়ানট বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠন যারা ১৯৬১ সালে আত্মপ্রকাশ করে। বিশুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাকারী সংগঠন হিসেবে ছায়ানট বিখ্যাত। নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে তাদের এ আয়োজন ও আজ স্বীকৃত।

/ এআর /