ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রমজানের দশদিন আগেই পণ্য সরবরাহ করবে টিসিবি

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:০৬ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

রোজা শুরু হতে এখনও মাস খানেক বাকি। রমজান শুরুর আগেই পণ্য মজুদ বাড়াতে তৎপর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। লক্ষ্য রোজার বাজারে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ঠিক রাখা এবং জনদুর্ভোগ লাঘব করা। প্রতি বছর রমজানে ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার বাড়তি চাহিদায় দেশের বাজারে দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমনকি ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এ কারণে এবার আগে থেকেই এসব পণ্য পর্যাপ্ত মজুদ করেছে টিসিবি। মজুদকৃত পণ্য শেষ রমজান পর্যন্ত ক্রেতাদের হাতে তুলে দেবে টিসিবি।

এ বিষয়ে টিসিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তবে চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব ও টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে টিসিবি প্রতি বছরই প্রস্তুত থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা আরো সহজ হবে এবং পণ্যের দামও বাড়বে না বলে আশা করছি।

বাজার চাহিদার কতটুকু টিসিবি পূরণ করতে পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য দেশের সব শ্রেণীর মানুষের চাহিদা একসঙ্গে পূরণ করতে পারে না। তবে মানুষের চাহিদা পূরণে আমাদের অংশগ্রহণ একেবারে কমও নয়। জরুরি মুহূর্তে বা অন্য যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটি ২৭৮৪ জন ডিলার রয়েছে। ১৮৭টি ট্রাকসেল কাজ করছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৩৫টি, চট্টগ্রামে ১০টি, বিভাগীয় শহরে ৪টি এবং জেলা শহরগুলোতে ২টি করে ট্রাকসেল কাজ করবে।এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে টিসিবির নিজস্ব ১০টি বিশেষ খুচরা সেলের দোকান রয়েছে। যেগুলো রমজানের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খুচরা পণ্য বিক্রি করবে। অন্য সময় এ কেন্দ্রগুলো দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এবার রমজান উপলক্ষ্যে টিসিবি তিন ধাপে পণ্য সরবরাহ করবে। প্রথম দফায় রমজানের ১০ দিন আগে পণ্য সরবরাহ করা হবে। দ্বিতীয় দফায় রমজানের প্রথম সপ্তাহে এবং তৃতীয় ও শেষ দফায় রমজানের মাঝামাঝি পণ্য সরবরাহ করা হবে। তবে শেষ  দফায় বাজারে পণ্যের চাহিদা বিবেচনা করে পণ্য ছাড়া হবে।

প্রতিবছর রমজানে চাহিদা বাড়ায় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। এ বছরও রমজানকে সামনে রেখে ডিলার চাহিদার বেশি পণ্য মজুদ করেছে টিসিবি। এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রমজানকে সামনে রেখে চাহিদার চেয়ে বেশি মজুদ করা হয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডাল। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রোজার অপরিহার্য পণ্য ছোলা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এরই মধ্যে কী পরিমান ছোলা মজুদ করা হয়েছে তা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এছাড়া বাজারে পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে টিসিবির বিশেষ কোন কমিটি কাজ না। তবে শুধু টিসিবির পণ্য সরবারহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখতে মনিটরিং কমিটি দেশব্যাপী তৎপর থাকবে বলেও জানান মুখপাত্র। টিসিবির পণ্যের দামের ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলেন, রমজানের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব পণ্যের দাম নির্ধারণ করবে। এর আগে দামের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। এমনকি কি পরিমান পণ্য মজুদ করা হয়েছে তাও আগে থেকে বলা যাবে না।

দেখা গেছে, প্রতি বছর রমজানে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বিশেষ কয়েকটি পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়। কখনও চিনি নিয়ে, কখনও ছোলা নিয়ে কেলেঙ্কারি চলে। কখনও পেঁয়াজ ও রসুন চলে যায় সিন্ডিকেটের কবলে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট রমজান মাসের বাড়তি চাহিদা পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রমজান শুরুর দু-তিন মাস আগ থেকে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা শুরু হয়।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে টিসিবির কি প্রস্তুতি আছে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবি মনিটরিং করে না। এটার জন্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও বাণিজ্যমন্ত্রণালয় কাজ করে। তবে সিন্ডিকেটের যে বিষয়টি সেটার জন্যই টিসিবি বাজারে পণ্য সরবরাহ করে। যেন কোন পক্ষ কৃত্তিম সংকট তৈরি করতে না পারে।

আরকে// এআর