ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

যে কারণে আগাম নির্বাচনের ডাক দিলেন এরদোগান

প্রকাশিত : ০৫:২৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৩৯ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা চলার মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। দেশে ক্রমান্বয়ে মুদ্রার মান কমে যাওয়া ও বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জর্জরিত তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান কেন আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

এদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সমস্যা কুর্দী যোদ্ধাদের ইতোমধ্যে কোণঠাসা করে ফেলেছে তুর্কী বাহিনী। সিরিয়ার আফরিনে সফল অভিযানের পর তুর্কী প্রেসিডেন্টও আছেন ফুরফুরে মেজাজে। তাই আগামী জুনেই নিজের জনপ্রিয়তার আরেকটা টেস্ট নিতে চাচ্ছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট। ধারণা করা হচ্ছে, কুর্দীদের হঠানোসহ বিরোধী দলগুলোকেও দমাতে সমর্থ হয়েছেন এরদোগান। এই মুহুর্তে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি (একে) পার্টি নিরঙ্কুশ জয়লাভ করবে।

নির্বাচনের প্রায় ১৮ মাস আগে আগাম নির্বাচনের এই পরিকল্পনার কথা গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান প্রেসিডেন্ট এরদোগান। একে পার্টির প্রধান জোটসঙ্গী ও মধ্যবামপন্থী দলের নেতা দেভলেট বাচেলি আগাম নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানোর পরই এরদোগান এ ঘোষণা দেন। আগামী ২৪ জুন দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

২৪ জুন দেশটিতে প্রথমবারের মতো নতুন পদ্ধতির সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে দেশটিতে সংবিধান সংশোধনীর জন্য গণভোট হয়। ওই ভোটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ওই গণভোটের ফলে নতুন করে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়। ওই গণভোটে বলা হয়, দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও উঁচু পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও জৈষ্ঠ্য বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়।

তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছে একে পার্টি। টেলিভিশন বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, যদিও সরকার ও প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব, তবু সনাতন পদ্ধতি আমাদের কিছুটা ভুগিয়েছে।

এদিকে সিরিয়া ইসূতে ওয়াইজিদি ও কুর্দী যোদ্ধাদের দমাতে সিরিয়ায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তুর্কী বাহিনী। অন্যদিকে ন্যাটো ওয়াইজিদি ও কুর্দীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। তাই ন্যাটের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে আগামী সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে এরদোগানকে। তবে সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তার মতবিরোধ দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে দেশটি ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে মিলেঝুলে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবল প্রেসিডেন্ট নিজেই একক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বলেও মনে করছে একে পার্টি।

এদিকে আগাম ঘোষণা দেওয়ার পরই দেশটির মুদ্রার মান ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। জানা গেছে, এরদোগান ১৫ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে। কখনোই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিজেকে তুরস্কের প্রধান হিসেবে আবির্ভূত করেছেন। ২০০১ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে মুদ্রাস্ফতি ৭০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল, যা গত বছর ১২ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।

এদিকে একে পার্টির শরীক দলের নেতহা ব্যাচেলির ডাকে তুর্কী প্রধানের নির্বাচনের ডাক দেওয়ার ঘটনাকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই জোটের পুনরায় জয় নিশ্চিত করতেই আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন এরদোগান। তবে একে পার্টির সাবেক নেতা আহমেদ দাভাতোগলো জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক উদ্বেগ, সিরিয়া যুদ্ধে নিজেদের জড়ানোর কারণেই আগাম নির্বাচন দিচ্ছেন এরদোগান। এতে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করার ঘটনায় তিনি আরও বলেন, এরদোগান ও তার শরীক দলের নেতারা চান, বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ গোছানোর সুযোগ দেওয়ার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

এদিকে দেশটির আরেক রাজনৈতিক গবেষক ও কলামিস্ট তাহা আকিয়াল জানান,ডানপন্থী গুড (আওয়াইআই) পার্টির ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় একে পার্টি জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে রয়েছে। তাই দলটি আগাম নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ফের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাইছে। আওয়াইআই পার্টির মূল টার্গেট হলো একে পার্টি ও এমএইচ পার্টির সমর্থকদের ভোট টানা।

সূত্র: আল-জাজিরা
এমজে/