ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

ভারতে লোকেরা টয়লেটে যায় না কেনো?

প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাজ্য মহারাষ্ট্রের সরকার ঘোষণা করেছে, রাজ্যে আর কাউকে খোলা আকাশের নিচে মল-মূত্র ত্যাগ করতে হবে না। পুরো রাজ্যে সবার হাতের নাগালে শৌচাগার বানানোর কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ জানিয়েছেন, গত সাড়ে তিন বছরে মহারাষ্ট্রে অন্তত ৫৫ লাখ নতুন শৌচাগার বানানো হয়েছে।

গত কয়েক মাসে এভাবে ভারতের অনেক রাজ্যই নিজেদের `ওপেন ডিফেকেশেন ফ্রি` বা ওডিএফ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনও অনেক জায়গাতে শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয়রা উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করতেই বেশি পছন্দ করছেন। কিন্তু কেনো এই পরিস্থিতি? কেনো শৌচাগার বানানোর পরও মানুষ সেখানে যেতে চাইছেন না?

এর আগে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে `স্বচ্ছ ভারত অভিযান` শুরু হয়েছিল, তার আওতায় দেশ জুড়ে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি শৌচাগার তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতীয়দের উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করার অভ্যাস পুরোপুরি পাল্টানো যায়নি।

কেনো তারা শৌচাগারে যাচ্ছেন না, এ প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, দেওয়ালে ঘেরা বদ্ধ জায়গায় মলত্যাগ করতে তাদের ভাল লাগে না। গরম লাগে, গ্যাসে-দুর্গন্ধে নাকি বমি পায়।

গ্রামীণ মহিলাদের অনেকের আবার বলছেন পানির অভাবের কথা। উত্তরপ্রদেশের এক নারী বলছিলেন, চাষের ক্ষেতে গেলে এক লোটা পানিতেই কাজ সারা যায়। কিন্তু শৌচাগারে গেলে লাগে পুরো এক বালতি পানি লাগে। এলাকায় পানির সমস্যা, তাই শৌচের জন্য এত পানি খরচ করা যায় না। কাজেই ভোরবেলায় কেউ ওঠার আগে আমি নিজের মায়ের সঙ্গে গিয়ে ক্ষেতেই কাজ সেরে আসি।

গ্রামীণ স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করেছেন সুস্নাত চৌধুরী। তিনিও বলছিলেন একটা টয়লেট বানানোর পর তার প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ সময় থাকে না। আর সেটাই মানুষকে টয়লেট থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি টয়লেট নামে একটা ঘর তাকে বানিয়ে দিলাম। কিন্তু সেই ঘরটা পুরোদস্তুর ব্যবহারযোগ্য থাকার জন্য আর যে সুবিধাগুলো দরকার - অর্থাৎ নর্দমা, পানির জোগান, জীবাণুনাশক ...

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামে গ্রামে এখন ভোররাতে স্বেচ্ছাসেবীদের টহল শুরু হয়েছে। শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও যারা ক্ষেতে যাচ্ছেন তাদের বুঝিয়ে নিরস্ত করাই এদের কাজ। চেষ্টা হচ্ছে কিছুটা লজ্জায় ফেলারও।

বিহারে এমনই একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, আমরা তাদের বলি যখন তোমার বউ-মেয়ে লোটা নিয়ে সকালে ক্ষেতে যায়, তখন তার শরীরের এমন সব অংশ গোটা গ্রাম দেখতে পায়, যা স্বামী ছাড়া কারুর দেখার কথাই নয়। তখন তোমাদের লজ্জা-শরম কোথায় যায়?"

শৌচাগার আন্দোলনে যুক্ত ভারতের বৃহত্তম এনজিও সুলভ ইন্টারন্যাশনাল অবশ্য মনে করে, ভারতের আবহমান সংস্কৃতি যেহেতু বলে শৌচের কাজ বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত, তাই বাড়ির ভেতরে বা লাগোয়া শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হতে আরো সময় লাগবে। পানি বা পরিচ্ছন্নতার সমস্যা দূর করতে সেই সঙ্গে লাগবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও।

সুলভের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মদন ঝা জানান, এত বড় দেশে পাইপ দিয়ে সব জায়গায় পানির সরবরাহ অসম্ভব। এ জন্য আমরা সুলভ মডেলের টয়লেটে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করি যাতে প্রতিবার ব্যবহারের পর মাত্র এক লিটার পানিতেই ফ্লাশ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যেহেতু ভারতের অনেক শহরেও সিওয়ার নেই, তাই মল পরিশোধনের জন্য আমরা ব্যবহার করি টু-পিট সিস্টেম। এক একটা পিট এক এক বছরে ব্যবহার হয়, অন্যটা ততদিনে সারে পরিণত হয়। এই পদ্ধতি এখন ভারত সরকারও অনুসরণ করছে।

মহারাষ্ট্রের মতো অনেক রাজ্যই লাখ লাখ শৌচাগার বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন রেখে মানুষকে সেখানে টেনে নিয়ে যাওয়াটাও কম বড় চ্যালেঞ্জ নয়! সূত্র: বিবিসি

 

আর