ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘আমার শিক্ষক আমাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচিয়েছেন’

প্রকাশিত : ১০:৪৯ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১১:৫৮ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিল ব্রিটিশ কিশোরী হাটি স্পারে। হয়তো সে আবারও চেষ্টা করতো, হয়তো সফলও হতো সে। তবে তার একজন শিক্ষক তার এই মানসিক টানাপোড়েন টের পেয়ে তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। সফল হয়েছিলেন ওই শিক্ষক। তাই নতুন জীবন ফিরে পাওয়ায় হাটি তার শিক্ষকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এখন হাটির বয়স ২৬, কাজ করছেন একজন শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে। তার লক্ষ্য, আজকের কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বের করে আনা। তিনি বলেন, "আমি হয়তো বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে যেতাম। তখন হয়তো আমার পরিস্থিতি আমার তিন বন্ধুর মতোই হতো। যারা ২০ বছর বয়সের মাথায় জীবনকে বিদায় জানিয়েছে।"

কি কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা আকড়ে ধরেছিল হাটিকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, ছোটবেলায় বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর হাটি মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা সেই সঙ্গে কারো মনযোগ না পাওয়া তার ছোট্ট মনকে বিষিয়ে তুলেছিল। হাটি বলেন, "মা অসুস্থ থাকায় সবাই তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আমি কিভাবে এই পরিস্থিতিতে টিকে আছি, আমার কেমন লাগছে, আমার মানসিক অবস্থা কি কেউ জানতে চায়নি। এসব কারণে ১৪ বছর বয়সেই আমাকে বিসন্নতা গ্রাস করে। সব সময় মন ভীষণ খারাপ থাকতো, ঘুমাতে পারতাম না, এই হতাশা বেড়েই যাচ্ছিল।"

সে বছর ছিল হাটির জিসিএসই পরীক্ষা। এ নিয়ে প্রস্তুতি চলার মধ্যেই স্কুল প্রাঙ্গনে হাটির সঙ্গে দেখা করেন তার ডিজাইন ও প্রযুক্তি কোর্সের শিক্ষক। জিজ্ঞেস করেন সে কেমন আছে? সব ঠিক আছে কি না। তিনি যেন দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন, এই মেয়েটি তার নিজের মধ্যে নেই। তারপর একে একে নিজের সব কথা জানান হাটি।

"সেই প্রথম আমি কাউকে আমার কথাগুলো জানাই। তিনি আমার সব কথা মনযোগ দিয়ে শুনলেন। এক পর্যায়ে আমি কাঁদতে থাকি। তিনি আমাকে থামাননি, আমার কথার মাঝখানে কোন কথা বলেননি, প্রশ্ন করেননি, আমি যেন অনেকটা নিজের সঙ্গেই নিজে কথা বলছিলাম, যেটা আগে হয়নি। তিনি শুধু শুনে গেছেন। তার এই নিস্তব্ধতা, উদারতা আমার ভেতরে সাহস জুগিয়েছে।"

সেই থেকে হাটি স্কুলের ভেতরে বাইরে পুরো সময়টা তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মানসিক বিসন্নতার বিরুদ্ধে আর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সমান তালে চালিয়ে যান তার যুদ্ধ। এভাবে সফলতার সঙ্গে তিনি জিএসসি এবং "এ" লেভেল পাস করেন। এরপর কিছু সময় চাকরি করেন। পরে ফ্যাশন ও টেক্সটাইলে ডিগ্রি নেন। একদিন বিয়ে করেন পছন্দের মানুষটিকে।

স্বামী আর সেই স্কুল শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন হাটি। এখন তিনি কাজ করছেন ডিজাইন ও প্রযুক্তি কোর্সের শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে। ঠিক তার প্রিয় শিক্ষকের মতো। তার লক্ষ্য প্রতিটি শিশুর জীবনে ভরসা হয়ে পাশে থাকা।

শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ চলাকালীন হাটি বুঝতে পারেন, সেখানকার কয়েকজনের অবস্থা তার সেই বিষন্ন কৈশোরবেলার মতো। তারপর তিনি অবসরে তাদেরকে সময় দিতে শুরু করেন, তাদের পাশে দাঁড়ান।

"চুল অসমান করে ছাটা, হাত কচলানো, কোনো একটা হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এসব দেখে বুঝতাম তারা আমার মতো নিজের ক্ষতি করতে চাইছে। তারপর থেকেই আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাই। তবে কখনোই তাদের কিছু নিয়ে চাপ দেইনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমার দারুণ আলাপ হতো।"

একপর্যায়ে হাটি চোখের সামনে দারুণ সব পরিবর্তন দেখতে শুরু করেন। অনেকেই নামে বেনামে চিঠি লিখে তাদের কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেন। তারমধ্যে একটি চিঠিতে লেখা ছিল। "আপনি আমাকে যে সাহায্য করেছেন, সেটা আপনার ধারণার বাইরে, আপনি একজন দারুণ শিক্ষক।

হাটি বলেন, "এই চিঠিটা যতোবার পড়ি, চোখ ভিজে আসে।”

হটি আরও বলেন "একটা শিশুকে কেমন আছো জিজ্ঞেস করা খু্ব সাধারণ শোনালেও এর যে কতো শক্তি আছে তা আমাদের ধারণার বাইরে। তাদের বারবার প্রশংসা করা, গুরুত্ব দেয়া, ভালবাসি বলা। এই কথাগুলো একটা মানুষকে সারাজীবনের জন্য বদলে দিতে পারে।"

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

 

এমএইচ/ এসএইচ/