ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লন্ডনে তারেকের নির্বাসিত জীবন: বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ?    

প্রকাশিত : ০৯:৪৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

২০০৮ সাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে তাঁর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে চলছে নানা তর্ক বিতর্ক। তবে বিএনপির জন্য তারেক রহমানের এমন নির্বাসনে থাকা নতুন করে দলটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

বরাবরই বিএনপি দাবি করে আসছে যে, চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। চলতি বছর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় লন্ডনে থাকা এই তারেক রহমানকেই।

তবে পাসপোর্ট বিতর্কের পর নিজেদের বক্তব্য পাল্টিয়েছে দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন তারেক রহমান ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। আর এই আশ্রয়ের আবেদন করা হয়েছে আরও পাঁচ বছর আগে। যা আবেদনের অল্প কিছুদিন পরেই গৃহিত হয়।

লন্ডনে তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় এবং বাংলাদেশী পাসপোর্ট হস্তান্তরের সূত্র ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন যে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন তারেক রহমান। আর যদি তাই হয় তাহলে নতুন করে বিপাকে পরতে যাচ্ছে বিএনপি।

একই সাথে তারেক রহমান যদি পাঁচ বছর ধরে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকেন তাহলে বিষয়টি এতদিন কেন গোপন রাখল বিএনপি সে বিষয়েও নিন্দিত হচ্ছে দলটি।

যদি কোনভাবে তারেক রহমানের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বাতিল হয় তাহলে বাংলাদেশে কোন ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আর জড়িত থাকতে পারবেন না তারেক রহমান। আর এমনটা হলে দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিপাকে পড়বে দলটি। একদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেলে থাকা অন্যদিকে তারেক রহমানের দেশীয় রাজনীতিতে অযোগ্য হলে যে সংকট দেখা দেবে তা কীভাবে মোকাবেলা করবে দলটি সেটিই এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

তবে দলীয় কর্মীরা ভাবছেন তারেক রহমানের এই রাজনৈতিক আশ্রয় বা নির্বাসিত জীবনের প্রভাব বিএনপির রাজনীতিতে পরবে না।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা মনে করেন, রাজনৈতিক আশ্রয়ের থাকার বিষয়টি দলের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ নয়।

বার্তা সংস্থা বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমি মনে করি এটা ওনার জন্য নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। উনি অনেক তরুণ বয়সে রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। আমাদের দেশের বহু নামকরা পলিটিশিয়ান এক্সাইলে (নির্বাসনে) ছিলেন। পলিটিশিয়ানদের লাইফে এক্সাইলটা নাথিং নিউ (নির্বাসন নতুন কিছু নয়।)।"

লন্ডনে অবস্থান করেই তারেক রহমান নানাভাবে বিএনপির নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, বিষয়টিকে দুইভাবে দেখা যেতে পারে।

দীর্ঘ দিন নির্বাসনে থাকলে নেতা-কর্মীদের সাথে বিচ্ছিন্নতা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। এটি হচ্ছে প্রথম দিক।

ভিন্ন আরেকটি দিক হচ্ছে, তারেক রহমানের প্রতি তাঁর দলের সমর্থকদের সহানুভূতি আরো বাড়তে পারে।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, "একটা সময় আমাদের দেশে বাম রাজনীতিতে দেখা যেত যে নেতারা পলাতক জীবন-যাপন করতেন। আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতেন। সেসব রাজনৈতিকদের নিয়ে নানা মিথ যেমন তৈরি হতো, আবার জন বিচ্ছিন্নতাও তৈরি হতো।... আবার এটাও ঠিক যে এ দলের (বিএনপি) যারা সমর্থক তারা তাকে নেতা হিসেবেই দেখেন।"

পাসপোর্ট বিতর্ক তারেক রহমানের জন্য নতুন কোন `রাজনৈতিক ঝামেলা` তৈরি করবে না বলে ধারণা মহিউদ্দন আহমেদের।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা এবং দুর্নীতির বেশ কিছু মামলা আছে। একাধিক মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছে।

মূল ধারার গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। একজন ফেরারি আসামীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করা যাবে না বলে আদালত উল্লেখ করেছে।

তারেক রহমানের বক্তব্য সংবাদপত্র কিংবা টেলিভিশনে প্রচার না হলেও তারেক রহমানকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই।

প্রতিনিয়ত তাকে ঘিরে নানা তর্ক-বিতর্ক কিংবা অভিযোগ তোলা হচ্ছে শাসক দল আওয়ামী লীগের তরফ থেকে।

সেটিকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা চলছে মূল ধারার গণমাধ্যমে।

বিএনপি মনে করে তারেক রহমানের বক্তব্য কিংবা বিবৃতি মূল ধারার গণমাধ্যমে না আসলে সেটি তেমন কোন সমস্যা তৈরি করছে না।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, " ফেসবুকে কিন্তু তাঁর ছোট্ট একটা বক্তব্যও মুহূর্তের মধ্যে কয়েক লক্ষ ভিউ হচ্ছে, শেয়ার হচ্ছে। এখানেই তাঁর সাকসেস (সাফল্য)।"

তিনি মনে করেন, সরকারের মধ্যে `তারেক ভীতি` কাজ করছে। সেজন্য তাঁকে ঘিরে ক্ষমতাসীনরা নানা ধরনের বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে বলে বিএনপির ধারণা।

*বিবিসি বাংলা অবলম্বনে

//এস এইচ এস//এসি