ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মৃতদের খাবার না দিয়ে যে গ্রামে কেউ খায় না

প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ২ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ৩ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের একটি গ্রামে ঢুকলে যে কারোরই মনে হবে `কোনো কবরস্থানে এসে পরলাম নাকি! প্রশ্নটা মনে আসা স্বাভাবিক। কেননা কুরনুল জেলার এই আইয়া কোন্ডা গ্রামের প্রতিটি ঘরের সামনে রয়েছে একটা বা দুটো করে কবর। সেই কবরের সামনে খাবারও রয়েছে।

এই আইয়া কোন্ডা গ্রামটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। মালাদাসরী সম্প্রদায়ের একশ থেকে দেড়শ পরিবার বসবাস করে এখানে।

মৃত আত্মীয় পরিজনকে ঘরের সামনেই কবর দেওয়ার এই রীতি এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে।

বাড়ির মহিলা ও শিশুরা প্রতিদিন কাজে কর্মে যান এই কবরগুলো পার হয়ে।প্রতিদিন ওই কবরে পুজো আর প্রসাদ দেন পরিবারের জীবিত সদস্যরা।

বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটাও কবরে না দিয়ে কেউ তা মুখে তোলেন না।

গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীনিবাসুলু গণমাধ্যমকে বলেন, "আধ্যাত্মিক গুরু নাল্লা রেড্ডি আর তার শিষ্য মালা দাসারী চিন্তলা মুনিস্বামী এই গ্রামের উন্নয়নের জন্য নিজেদের উজার করে দিয়েছেন। কঠিন পরিশ্রম করেছেন তারা গোটা গ্রামের জন্য। অর্থও ব্যয় করেছেন। তাদের কাজকে শ্রদ্ধা জানাতেই গ্রামে তাদের একটা মন্দির রয়েছে, পুজো হয় নিয়মিত। আর ওই গুরুদের সম্মান জানানোর মতোই নিজের পরিবারের মৃত সদস্যদেরও সম্মান জানাতে বাড়ির সামনেই তাদের কবর দেওয়ার রীতি চালু আছে।"

শুধু যে পুজো দেওয়া হয় বা প্রসাদ দেওয়া হয় কবরগুলোতে তা নয়। বাড়িতে যদি কেউ পাখা, টিভি-র মতো যন্ত্র কেনে, সেগুলোও ব্যবহার করার আগে কবরের সামনে রাখা হয়।

শ্রীনিবাসুলু জানিয়েছেন যে, গ্রামের মানুষদের মনে যে অন্ধ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছেন তারা, যাতে এরা বড় হয়ে অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে।

শিশুদের পড়াশোনা আর দেখভালের জন্য একটা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন। যার জন্য পাহাড়ের কোলে একটা ছোট জমির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন শ্রীনিবাসুলুরা।

অন্ধবিশ্বাস দূর করতে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চাইছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।

তবে গ্রামের সমাজপতি রঙ্গাস্বামী জানাচ্ছিলেন, "বহু যুগ ধরে যে রীতি রেওয়াজ আমরা পালন করে আসছি, সেটা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সকলেরই ক্ষতি হতে পারে। আমরা তো চিন্তিত এই কারণে যে ভবিষ্যতে গ্রামে তো কবর দেওয়া জায়গাই থাকবে না। তখন কি হবে!"

এমএইচ/টিকে