ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রোযা পালনে ৫টি  শর্ত

প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ৩ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:০২ এএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

রোযাদারের পুরুস্কার আল্লাহ নিজে দিবেন। রোযাদারের জন্য আল্লাহ নিজে হয়ে যান মেজবান, আর রোযাদার হন তার মেহমান। এ জন্যই এ মাসটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত বরকতের মাস। ধর্মের প্রতিটি কাজের মতই রোযারও উদ্দেশ্য হল আল্লাহ  এবং তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি। সে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে দেহ মনকে একান্তভাবে প্রস্তুত করতে হবে একাগ্রতা দিয়ে  নিবিষ্টতা দিয়ে। দেহের সব গুলো জানালা বন্ধ করতে হবে।  মুখ  এবং জিহ্বা মিলে হচ্ছে একটি জানালা – যে পথ দিয়ে পৃথিবীর সুস্বাদু সব বস্তু ভেতরে প্রবেশ করে। নিয়ত করলেন – হে আল্লাহ আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এক অন্ধকার শেষ হবার আগে এবং অন্য অন্ধকার শুরু হবার সময় পর্যন্ত তোমার দেওয়া খাদ্য এবং পানীয়ের সমস্ত নেয়ামত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবো।

অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য একটা জানালা বন্ধ করা হল। আমাদের সমাজের অনেকেরই জন্য এটাই রোযা- এর বেশি তেমন কিছু নয়। কিন্তু আরও অনেকগুলি আনালা খোলা রয়ে গেল। চোখ একটা জানালা যা বন্ধ না করলে একাগ্রতা আসবে না। রোযা রাখলে অথচ চোখের খোলা জানালা দিয়ে পৃথিবীর রূপ যৌবনকে প্রাণ ভরে দেখলেন, সারাদিন ভিডিও দেখে সময় কাটালে, তাহলে তো সমস্ত একাগ্রতা নিয়ে আল্লাহকে চাইলে না। কিন্তু রোযা রাখতে হলে এ জানালাটা বন্ধ করতে হবে। জানালাটা বন্ধ করলেই ভেতরের আলো ধীরে ধীরে জলে উঠবে। কিন্তু আরও জানালা এখনোও খোলা। কান দিয়ে শুনছো এমন সব মিষ্টিমধুর শব্দ এবং সঙ্গীত যা একাগ্রতাকে নষ্ট করছে। সুতরাং একাগ্রতার জন্য এ জানালাটাও বন্ধ করতে হবে। এবার খোলা রইলো নাক।

আতর ছাড়া অন্য আরও কিছু মিষ্টি গন্ধ আছে যা চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে। সুতরাং এ জানালাও বন্ধ করতে হবে। ত্বক  যা দিয়ে স্পর্শ করো এটাও একটা জানালা যা দিয়ে জগতকে উপলব্ধি কর। চিত্তকে বিভ্রান্ত করে এমন জিনিস স্পর্শ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। মুখ কিন্তু একটা দ্বিমুখী জানালা। খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থেকে একটা পথ বন্ধ করলে-কিন্তু আর একটা পথ হচ্ছে মানুষের বাকশক্তি, সেখানেও সংযম অভ্যাস করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কথা, অশালীন কথা, কটুকথা এ সবই পরহেজ করতে হবে তবেই সে জানালাটিও বন্ধ হবে। এরপর রইলো সর্বশেষ জানালা। অন্তজগতের বিচিত্র সব ছবি দেখতে পাও। অন্তরের যে ছবি চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করে সে ছবি দেখাও বন্ধ করতে হবে।

এবার সবগুলো জানালা বন্ধ হল। এবার একাগ্রতার আয়োজন পূর্ণ হল। এরকম করলে তো সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করা হল। না মুসলমানের সন্ন্যাস একটু ভিন্ন ধরণের। মানুষের সমাজে সে চলবে অন্য মানুষের মতই। কিন্তু  পৃথিবীর জানালাগুলো তাঁর বন্ধ থাকবে। অথচ অন্যরা বাইরে থেকে সব গুলো জানালাই খোলা দেখবে । মুসলমানের সন্ন্যাসের জন্য বনে যেতে হয় না। জীবনটাই তাঁর সন্ন্যাস।

এ যেন সেই হাঁসের মতো। কাদার মধ্যে চলবে অথচ পাখায় কাদা লাগবে না। অথবা ডিমে তা দেয়  যে পাখি তার মত – চোখ দিয়ে সবই দেখছে কিন্তু মন পড়ে আছে ডিমের মধ্যে।  

আমাদের একটি আমলকে অন্য আমল থেকে পৃথক করে দেখা যায় না। ইমান যার নেই তাঁর নামাজ অর্থহীন। হাজার বছর নামাজ পড়লেও কোন লাভ নেই যদি ইমান না থাকে। তুমি রোযা রাখবে অথচ নামাজ পড়বে না। - এও হতে পারে না। নামাজহীন রোযা ও কবুল হবার নয়। ইমান, নামাজ, রোযা নেই- অথচ হজ করবে সেও হবার নয়। সে হজ কবুল হবে না। রুজি হালাল নয়, অথচ যাকাত দিচ্ছ, তাও আল্লাহ কবুল করবেন না। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মিলে একটি স্থাপত্য – এর কোন একটিরও ব্যত্যয় হলে আর যাই হোক ইসলামের ইমারতের নিচে তোমার ঠাঁই হবে না। তাই বলি, ইসলামের পূর্ণতায় এসো, তবেই তুমি পূর্ণ হবে। আসার আগে জানালাগুলো বন্ধ করে এসো।

# হযরত সৈয়দ রশিদ আহমেদ জৌনপুরি (রহঃ) সংলাপ সমগ্র থেকে নেওয়া

কেআই/টিকে