ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

‘দি ডক্টরস্’ (ভিডিও)

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীরা যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

প্রকাশিত : ০৪:১০ পিএম, ৬ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০২:১১ পিএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আসছে মাহে রমজান। রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীদের বিশেষ কিছু নিয়ম মানতে হয়, বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। কারণ রক্তে গ্লুকোজের পরিমান কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোজার মাসে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান ৫-১৫ হলে নরমাল। এর কম, কিংবা ১৫ এর বেশি হলে রোজা রাখা যাবে না। ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন তারা বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে : (১) রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাসেমিয়া) । (২) রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) । (৩) ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস । (৪) পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন।

তবে ডায়াবেটিক রোগীও রোজা রাখতে পারবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ডায়াবেটিস এমন কোন বাধা নয়। প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি।

একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয়- ডায়াবেটিস ও রমজান’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- প্রফেসর ডা. মোঃ ফরিদ উদ্দিন (চেয়ারম্যান, এ্যন্ডেক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)

‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন- ডা. তাজনূভা জাবীন

শ্রুতিলিখন করেছেন- সোহাগ আশরাফ

 প্রশ্ন : রমজান আসছে। ডায়াবেটিক রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে কোন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কি?

উত্তর : আগেই বলে রাখি, ডায়াবেটিক রোগীদের রমজানের তিনমাস পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। কারণ অনেকেই আছি যারা আমরা বেখেয়ালি। দেখা যায় যে, প্রায় ছয় মাস ধরে কোন পরীক্ষাই করি না। পরে দেখা যায়, লিভারের অবস্থা খারাপ, চোখের অবস্থা খারাপ, কিডনীতে সমস্যা। তাই রমজানের পূর্ব প্রস্তুতিতে এটা থাকতে হবে।

প্রশ্ন : রমজানে আরও কি কি প্রস্তুতি নিবে?

উত্তর : রোজা রাখার পূর্ব প্রস্তুতি যদি বলি তবে, তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ আছেন কি না তা চেক করতে হবে। তিনি মানসিক ভাবে রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত কিনা তা দেখতে হবে। আর সেই সঙ্গে তিনি বায়োক্যামিকাল তিনি ফিট কিনা তা দেখতে হবে। আর এ জন্য আগেই বলেছি তাকে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রশ্ন : রোজার মাসে ডায়াবেটিক রোগীরা কি খাবেন, কতটুকু খাবেন?

উত্তর : রমজানের পূর্বে খাবারের ধরণ থাকে এক রকম, আর রোজার সময় অন্য রকম। সাধারণত ডায়াবেটিক রোগী দিনে ৫ থেকে ৬ বার খায়। ধরুন তিনি দিনে ১৬০০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করে। রোজার সময় লাইফস্টাইল কিন্তু পরিবর্তন হয়। তখনও তাকে ১৬০০ ক্যালরি খাবার খেতে হবে। তবে সেই ধরণটা জানতে হবে। রমজানের আগে সে দিনে ৫/৬ বার খায়, রোজার সময় তাকে সেটা তিন বারে করতে হবে। আমরা সেহেরী, ইফতার এবং রাতের খাবার খাই। তিনটার একটিও মিস করা যাবে না। পানি বেশি করে খেতে হবে। ইফতারের সময় সবাই শরবত খায়, ডায়াবেটিক রোগীর কোন চিন্তার কারণ নেই, তিনি ডাবের পানি খাবেন। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে শারীর যেনো পানিশূণ্য না হয়।

প্রশ্ন : রমজানের খাদ্য তালিকায় কি কি থাকবে?

উত্তর : আগেই বলেছি, একজন ডায়াবেটিসের রোগী রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতেন, রমজান মাসেও তার হেরফের হবে না। কেবল এর সময়সূচি ও উপাদান পরিবর্তিত হতে পারে। ইফতারির সময় ও পরে হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করা, চিনি, মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসের মাধ্যমে এ সময় অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়। রক্তে দ্রুত সুগার বাড়ায় না, এমন খাবারকে লো গ্লাইসেমিক ফুড বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে পড়ে লাল আটা, লাল চালের ভাত, গোটা শস্য, শস্যবীজ ইত্যাদি। রোজার মাসে এসব খাবারের পরিমিত গ্রহণ রক্তে সুগারের মাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে সুষম রাখতে সাহায্য করবে। হাই ক্যালরি ও হাই গ্লাইসেমিক ফুড যত সুস্বাদু ও মুখরোচকই হোক না কেন, যেমন জিলাপি, লাড্ডু, শরবত, হালুয়া, কেক, আলুনি, সফট ড্রিংক ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। বেশি পরিমাণে তেল আছে এমন খাবার, যেমন—কাবাব, বেগুনি, পেঁয়াজু বা ভাজাপোড়ায় কেবল ওজনই বাড়াবে না, রক্তে চর্বি বাড়িয়ে দেবে, পেটে বদহজম ও গ্যাস সৃষ্টি করবে। রোজা রাখলে সূর্যাস্তের পর অন্তত তিনবার খাদ্য গ্রহণ করুন। ইফতারির সময় সুষম ও পুষ্টিকর পরিমিত আহার, রাত ১০টার দিকে রুটি বা হালকা ডিনার এবং অবশ্যই শেষ রাতে ভাত বা রুটিসহযোগে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ ও তরল খাদ্য গ্রহণ করুন। সেহির না খেয়ে কোনো অবস্থাতেই রোজা রাখা উচিত নয়। রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে রক্তে সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন : রোজার সময় ব্যায়াম করা কতটা জরুরী?

উত্তর : সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম বা আধা ঘণ্টা হাঁটা যেতে পারে। যাঁরা নিয়মিত দীর্ঘ ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটিই ব্যায়ামের বিকল্প, আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।

বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন :

 

এসএ/