ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আ.লীগে নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৫:৩০ পিএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে নতুন নেতৃত্ব দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের চিন্তা-ভাবনাও করতে বলেছেন তিনি।

নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭তম দিবস উপলক্ষে বৃহস্পিতবার গণভবনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শুভেচ্ছা গ্রহণের পর তিনি এই কথা বলেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় পৌনে ছয় বছর সপরিবারে ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
এর আগেই একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে টানা ৩৭ বছর ধরে দলের হাল ধরে আছেন শেখ হাসিনা।
দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নিজের জীবদ্দশায় নতুন নেতৃত্বের হাতে দলের দায়িত্ব দেখার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।  
বৃহস্পতিবারও সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৩৭ বছর হয়ে গেছে.. একটা দলের সভাপতি হিসাবে ৩৭ বছরের বেশি থাকা বোধ হয় সমীচীন হবে না।’



আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, সংগঠন যদি শক্তিশালী হয়, সংগঠনে যদি ঐক্য থাকে, আর এই সংগঠন যদি জনগণের পাশে থেকে জনমত সৃষ্টি করতে পারে, তখনই যেকোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়; যা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।’

এসময় শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।

শেখ হাসিনা হেসে বলেন, “নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবা উচিত।”

আবারো সবাই ‘না না’ বলে ওঠেন।

তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “যতক্ষণ আছি.. সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার।”

প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর আগের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এই দিনে তাঁর স্বদেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থনে বারবারই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই তাঁকে বরণ করে নেওয়ার জন্য মানুষের যে ঢল দেখেছেন, মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তা তাঁকে এখনো আপ্লুত করে। মা-বাবা, ভাই, পরিজনদের হারিয়ে বাংলার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাই তাঁকে চলার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের আশ্রয়েই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছে, তা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং দেশের গণতন্ত্রায়ণ ও নিরন্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য।

ছাত্ররাজনীতি করলেও আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়াটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক কঠিন সময়ে তিনি দেশে ফেরেন। জাতির পিতার খুনিরা তখন পুরস্কৃত হয়ে বহাল তবিয়তে, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স থাকায় বাবা হত্যার বিচার চাইতে পারছেন না, জিয়া তখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। আর ভাঙার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগকে।

গণভবনে আজ বৃহস্পতিবার প্রথমে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর একে একে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সূত্র : বাসস।
/ এআর /