ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘আবু গারিবে করা নির্যাতনের জন্য আমি লজ্জিত’ 

প্রকাশিত : ১২:১৭ এএম, ১৮ মে ২০১৮ শুক্রবার

ইরাকের অভিশপ্ত আবু গারিব কারাগার। হাজারো ইরাকি বন্দী যেখানে অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সেই নির্যাতন খুব সামনে থেকে দেখেছিলেন সাবেক মার্কিন সেনা জেরেমি সিভিটস। তবে সেই সময়ের লোমহর্ষক সেসব ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় জেরেমিকে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে অংশ নিয়েছিলেন বন্দী নির্যাতনে। তবে সেসব কাজের জন্য লজ্জিত তিনি।  

বাগদাদের আবু গারিব কারাগারে এই সাবেক মার্কিন সেনার সাক্ষাৎকার নেন বিবিসির প্রতিবেদক তারা মেককেলভে। তারার সাথে ইরাকে নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করেন জেরেমি। তিনি জানান, “কারাগারে যা হয়েছিল সে সময়, তা ছিল ভয়াবহ। তবে আমার মনে হয় সবাই এর থেকে কিছু শিক্ষা নিয়েছে। আমি সেখানে সরাসরি কোন নির্যাতনে জড়িত ছিলাম না। আমি শুধু একটি ছবি তুলেছিলাম। তবে আবু গারিবে করা নির্যাতনের জন্য আমি লজ্জিত”।

২০০৬ সালে আবু গারিব কারাগারে বন্দিদের ওপর করা নির্যাতনের সেসব ছবি প্রকাশিত হয় তার একটি ছবি তুলেছিলেন এই জেরেমি সিভিটস। জেরেমির তোলা সেই ছবিতে দেখা যায়, চার্লস গ্রানার নামের এক সেনা কর্মকর্তা এক ইরাকী বন্দীর দেহের ওপর বসে আছেন। ইরাকী ঐ বন্দীর পুরো শরীর স্ট্রেচার দিয়ে পেচিয়ে রাখা হয় এ সময়। জেরেমির দিকে ক্যামেরা বাড়িয়ে দিয়ে তাকে সেই মুহুর্তের ছবি তোলার আদেশ দেন গ্রানার।

জেরেমি বলেন, “তিনি আমাকে ক্যামেরা দিয়ে বললেন ছবি তোল। আমি তুললাম। ঐ একটি ছবিই আমি তুলেছিলাম। আমি সেখানে ছিলাম। আর আমার ঐ কাজে শুধু এটুকুই সম্পৃক্ততা ছিল”।

বাবা ডেনিয়েলের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন বলে জানান জেরেমি। ডেনিয়েল ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং যুদ্ধে তার সাহসীকতার জন্য দুইটি পদক লাভ করেন।

১৮ বছর বয়সে মার্কিন সেনায় নিজের নাম লেখান জেরেমি। ৮০০ মিলিটারি পুলিশে স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে পাড়ি জমান জেরেমি।

জেরেমি জানান, “আমি ভাবছিলাম যে, যাক! খুব বড় কিছু করতে যাচ্ছি। ইরাকে যাওয়ার কিছুদিন পর আবু গারিব কারাগারে আমার পোস্টিং হয়। সেখানে মেকানিক ও চালক হিসেবে আমার কাজ শুরু হয়”।

“২০০৩ সালের নভেম্বর মাসের এক দিন কারাগারের ভেতরে যাই আমি। আমার সহকর্মী ইভান ফ্রেডরিক এক বন্দীকে এসময় নিয়ে যাচ্ছিল। আমাকে সঙ্গে যেতে বললে আমিও যাই। ভিতরে গিয়ে দেখি যে, পুরো হল জুড়ে বন্দীদের উলঙ্গ করে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ফ্রেডরিক তার সাথে করে নিয়ে আসা বন্দীদেরও সেখানে শুইয়ে দিলেন”-বলছিলেন জেরেমি।

তিনি আরও বলেন, “সেখানে আসলে সবাই এসব কাজের সাথে জড়িত ছিল। বিষয়টা এমন যে, সবাই তো করে। আমি নই কেন? আমি প্রথমবার সেখানে যাওয়ার পরই ঐ ছবি তোলার ঘটনাটি ঘটে। তবে সেটিই আমার শেষ ছিল”।

মার্টিনসবার্গের ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ রবার্ট ক্লাইটস বিবিসি’র ঐ প্রতিবেদককে বলেন, “জেরেমি খুব ভদ্র এক কিশোর ছিল। কেউ তার কাছে কোন সাহায্য চাইলে তা করতো জেরেমি। আর দেখুন কী হয়ে গেল! তাকে কেউ কিছু করতে বলল। জেরেমি করল। আর ফেঁসে গেল বেচারা ছেলেটি”।

প্রসঙ্গত, আবু গারিব কারাগারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসার পর আভ্যন্তরীন তদন্তের নির্দেশ দেন সেসময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তদন্তে বন্দীদের ওপর করা সেনাসদস্যদের নির্যাতনের চিত্র ধারণ এবং সেই অপরাধ থামাতে ব্যররথ হওয়ার দায়ে ১ বছরের জন্য জেল হয় জেরেমির।

বর্তমানে নিজ আবাসস্থল পেনসিলভেনিয়ার মার্টিনসবার্গে অনেকটা ‘নির্বাসিত’ জীবন কাটাচ্ছেন জেরেমি। কারও সাথে খুব একটা মেশেন না। তিনি বলেন, “সেখানে যে অপকর্মের সাথে আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য আমি লজ্জিত। তা আমাকে এখনও তাড়া করে”।

সূত্রঃ বিবিসি

//এস এইচ এস//এসি