ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

হত্যার ২৭ বছর

যে কারণে খুন হন রাজীব গান্ধী

প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ২১ মে ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ২১ মে ২০১৮ সোমবার

রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আজও প্রশ্নের জন্ম দিয়ে চলছে। সময়ে সময়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তারা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যার বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের আইএসআই এর দিকে আঙ্গুল তুলে যাচ্ছেন। তবে আদালতে বিষয়টির সূরাহা হলেও ভারতীয়দের মনে আজও প্রশ্ন শুধু কি এলটিটিই রাজীব হত্যার পেছনে দায়ী। নাকি অন্য কোনো সূত্র এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে?

এদিকে অনেক তদন্ত কর্মকর্তা-ই দাবি করেছেন বোফর্স কেলেঙ্কারি ইস্যুতে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে দেশটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার। একটি পক্ষ রাজীব গান্ধী পরবর্তী সময়ে লাভবান হয়েছেন বলে ওই পক্ষের দিকেও অভিযোগের তীর রয়েছে। রাজীব গান্ধী হত্যার ঝট খুলতে এলটিটিই স্বীকারোক্তি দিলেও এখন পর্যন্ত অনেকের কাছে প্রশ্ন রয়েছে, এলটিটিই কেন রাজীবকে হত্যা করেছে।

এদিকে রাজীব গান্ধী হত্যার পাঁচ বছর আগে থেকেই হত্যার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। ১৯৮৬ সালে সংস্থাটি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুতে নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে আজকের এই দিনে (২১ মে) খুন হন কংগ্রেস নেতা রাজীব গান্ধী। সেই ঘটনার পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৮৬ সালেই একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল সিআইএ। ২৩ পাতার ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘রাজীব-পরবর্তী ভারত...’। শিরোনামের পরবর্তী অংশ অবশ্য মুছে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, রাজীব-পরবর্তী সময়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হতে পারে।

প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, ‘১৯৮৯ সালে ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী আততায়ীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন।’ প্রতিবেদনের শেষ ভাগে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়াটাই এখন তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। রাজীব গান্ধীর প্রতি হুমকি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল শিখ উগ্রবাদী ও কাশ্মীরের মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। বলা হয়, যদি শিখ উগ্রবাদী কিংবা কাশ্মীরের মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে রাজীব গান্ধী খুন হন, তাহলে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে।

যেহেতু প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ মুছে ফেলা হয়েছে, তাই তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইর হুমকি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য এতে ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
রাজীবের অনুপস্থিতিতে পি ভি নরসিমা রাও অথবা ভি পি সিংয়ের মধ্যে কেউ ভারতের প্রধানমন্ত্রিত্ব করবেন, এমনটাও উল্লেখ ছিল সিআইএয়ের প্রতিবেদনে।

তবে সিআইএর প্রতিবেদনে যাই থাকুক না কেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে এলটিটিই খুন করেছে সে ব্যাপারটির সূরাহা হয়েছে দেশটির আদালতে। আদালতে প্রমাণিত হয়, শ্রীলঙ্কার সরকার ও দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী তামিলনাড়ুর মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান চেষ্টার ফলেই খুন হন রাজীব গান্ধী। ওই সময় আদালত রাজীব গান্ধী হত্যার অভিযোগে ২১ জনকে সাজা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাদের।

তাদেরই একজন রবার্ট পিওস, যে এলটিটিই এর একজন কমান্ডো। প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার ছকে রবার্ট পিওসও যুক্ত ছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে। পিওস ছাড়াও এই ঘটনায় বাকি অভিযুক্তরা শান্তন, নলিনী, তাঁর স্বামী মুরুগানের ফাঁসির সাজা হয়। পরে অবশ্য এই ৩ জনকে সেই সাজার পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।

এদিকে রাজীব গান্ধী হত্যার পেছনে এলটিটিইর বিরুদ্ধে দমন অভিযানকেই দায়ী করছেন অনেকে। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কায় তামিল স্বাধীনতাকামী সংগঠন এলটিটির সশস্ত্র বিদ্রোহ জোরালো হয়। এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ তখন জঙ্গলে সরকারবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে পরাজিত কংগ্রেস প্রধান রাজীব সাক্ষাৎকারে অঙ্গীকার করেন, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি আবারো ভারতীয় শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের দমন করার চেষ্টা করবেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সরকারে থাকাকালে তিনি ভারতীয় বাহিনী পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কার এলটিটি বিদ্রোহীদের দমনের চেষ্টা করেছিলেন। বলা হয়, রাজীব গান্ধী আবারো সেনা পাঠিয়ে বিদ্রোহ দমন ঠেকাতেই তাকে হত্যার নির্দেশ দেয় এলটিটি প্রধান প্রভাকরণ।

এরপরই তাকে হত্যা করতে ছক কষতে থাকে এলটিটিই যোদ্ধারা। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ২১ মে এক জনসভায় উপস্থিতকালে তাকে হত্যা করে এলটিটিইর এক নারী কর্মী। তার পায়ে ধরে কুর্নিশ করার পরই ওই নারী কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঘটনাস্থলেই রাজীবগান্ধীসহ আরও ১৭ জন নিহত হন।

সূত্র: এনডিটিভি, জি নিউজ, ওয়ান ইন্ডিয়া
এমজে/