ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ফুটবলে সর্বকালের সেরা সেই গোল (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৪৩ এএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার

১৯৯৭ সালের ৩ জুন কনফেডারেশনস কাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে রবার্তো কার্লোসের সেই জাদুকরি ফ্রি-কিকের গোলটির কথা মনে আছে? ২০ বছর পার হয়ে গেছে, তবু ইতিহাসের পাতায় এখনো ঠাঁই জায়গা ধরে রেখেছে কার্লোসের সেই গোল। এই গোলটিকেই ফুটবলের সর্বকালের সেরা গোল হিসেবে বিবেচনা করেন ফুটবল বোদ্ধারা।

আজ এত বছর পরও রাবার্তো কার্লোসের এ গোলটি নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। ডি-বক্সের ৪০ গজ দূর থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে বাঁ-পায়ের শটে ফ্রান্সের গোলরক্ষক ফ্যাবিয়েন বার্থেজকে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠিয়েছিলেন কার্লোস। সেই ফ্রি-কিকের সময় বলটি এতটাই বাঁক খেয়েছিল যে গোলরক্ষক বার্থেজ নিজের জায়গা থেকে নড়ারই সময় পায়নি।

সেদিন টুর্নোয় ডি ফ্রান্স নামের এক প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ফ্রান্স। ম্যাচের ২১ মিনিটে ফ্রান্সের অর্ধে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। গোলপোস্ট থেকে ৪০ মিটার দূরের ফ্রি-কিক নিয়ে খুব একটা চিন্তিত ছিল না কেউ। প্রায় মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে কার্লোসের শট নেওয়ার পরও না। কারণ সে শট যে বাঁক নিয়ে ছুটছিল গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে। মাঝপথেই হঠাৎ দিক বদলে গেল বলের। ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক ফ্যাবিয়েন বার্থেজকে স্তব্ধ করে সেই বলই জায়গা করে নিল জালে!

গোলটি হয়ে যাওয়ার পর তা বিশ্বাস হচ্ছিল না কার্লোসেরও। ফ্রান্সের খেলোয়াড়েরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মাঠে। এ কী করে সম্ভব! সে অবিশ্বাস এখনো তাড়া করছে সবাইকে। রবার্তো কার্লোস নিজেও যে জানেন না কীভাবে হয়েছে সে গোল, ‘সত্যি বলছি, আমার নিজেরও কোনো ধারণা নেই কীভাবে করেছিলাম। এটা খুব সুন্দর একটা গোল ছিল অনেক পরিশ্রম ও অনুশীলন করতে হয়েছে এর জন্য।’

 

ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি দল গোলটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছে, যেকোনো গোলাকার বস্তু (এ ক্ষেত্রে ফুটবল) যখন ঘূর্ণন-প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে, তখন এর পথপরিক্রমা হয় সর্পিলাকার। তারা আরও বলেছে, সর্পিল পথপরিক্রমায় বল যত সামনে যেতে থাকে, এর ঘূর্ণন তত বেড়ে যায়। রবার্তো কার্লোস সেদিন ফ্রি-কিকটি নিয়েছিলেন ৪০ গজ দূর থেকে এবং বেশ জোরে। কিকটি জোরে নেওয়ায় এবং দূরত্বের কারণে সাধারণ গোলাকার বস্তুর ধর্ম মেনেই বলটি বাঁক নিয়ে গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে জালে ঢোকে।

রবার্তো কার্লোসের সেই ফ্রি-কিকটি ছিল ‘বুলেট শটের’ সার্থক প্রতিচ্ছবি। সেই শটটির এতটাই গতি ছিল যে গতির কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের মাত্রা কমে বলটি অনেক দূর যাওয়ার পথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই। শট নেওয়ার স্থান থেকে গোলপোস্টের দূরত্বই ছিল মূলত সেই ঐতিহাসিক গোলের মূল অনুষঙ্গ। কয়েকজন বিজ্ঞানী বলেছেন, যদি কোনো কারণে ফ্রি-কিক নেওয়ার স্থান থেকে গোলপোস্টের দূরত্ব কম থাকত, তাহলে বিশ্বের ফুটবল-অনুরাগীরা একটি অসাধারণ গোল উপভোগ করা থেকে হয়তো বঞ্চিত হতো।

এদিকে নিজের গোল নিয়ে নিজেই কটকায় পড়ে গেছিলেন সর্বকালের সেরাদের অন্যতম খেলোয়াড় রবার্তো কার্লোস। বিবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্লোস জানিয়েছিলেন, এ ধরণের শট নেওয়ার জন্য তিনি ছোটবেলা থেকেই কঠোর অনুশীলন করে আসছিলেন। তবে অনেকবারই তিনি এ ধরণের শট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যদিও বারবার তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

এমজে/