ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

তিন যুগ ধরে ফাইল বন্দী স্বতন্ত্র যাকাত বোর্ডের প্রস্তাবনা

প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ১ জুন ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১১:০৪ এএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার

দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের ওপর ভর করে চলছে যাকাত বোর্ডের কার্যক্রম। স্বতন্ত্র যাকাত বোর্ড প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় লোকবল ও নীতি সহায়তার অভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এর কার্যক্রম। তিন বছর আগেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ১৭ জন লোকবল চেয়ে স্বতন্ত্র বোর্ডের প্রস্তাবনা দিলেও তার কোন সাড়া মেলেনি। ফলে বিত্তবানদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে তা হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণে ১৯৮২ সালে গঠিত যাতাক বোর্ডের আজও স্বতন্ত্রতা পায়নি। আবার তার আশানুরূপ সেবা সাধারণের দোরগোড়াইও পৌঁছায়নি।

জানা গেছে, আজ থেকে তিন যুগ আগে ১৯৮২ সালের ৫ জুন এক অধ্যাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি যাকাত বোর্ড গঠন করা হয়। বর্তমানে সেই বোর্ডের কার্যক্রম চলছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই। বোর্ডের নিজস্ব কোন লোকবল নিয়োগ না পাওয়ায় ফাউন্ডেশনের লোকবলে দিয়ে এর কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাকাত বোর্ড স্বতন্ত্র না হওয়ায় এর প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও নেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। খুড়িযে চলা এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বেগবান করার জন্য গত ২০১৬ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ১৭ জন লোকবল চেয়ে একটি অগ্রানোগ্রামের প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। যেখানে একজন  পরিচালক, দুইজন উপ-পরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক, দুজন হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা, দুজন সহকারী হিসাব রক্ষক, দুজন কম্পিউটার অপারেটর ও পাঁচজন অফিস সহকারীর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। যা আজও মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী হয়ে আছে।

রাজধানীর আগাওগাঁওয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের যাকাত বোর্ড হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই মোল্যা বলেন, এতোদিন হয়ে গেল আজও যাকাত বোর্ড স্বতন্ত্রতা পেল না। আমাদের ফাউন্ডেশনের কাজ করতে হয়, আবার বোর্ডের কাজও করতে হয়। এ কাজের ফাঁকে আবার স্বতন্ত্র বোর্ডের দাবিতে মন্ত্রণালযে সময় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে তিন বছর আগেও স্বতন্ত্র বোর্ডের জন্য লোকবর চেয়ে প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হলেও তা মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। ধর্মমন্ত্রণালয়ে সময় দিয়ে ফাইল নিতে হবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে, সেখান থেকে আবার সেটা অর্থমন্ত্রণালয়ে নিতে হবে। এই যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যাওয়া-আসার সময় আমাদের নেই। যার কারণে ৩৬ বছর আগের বোর্ড আজও স্বতন্ত্রতা পায়নি।

বর্তমানে ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীন যাকাত বোর্ডের দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে রয়েছেন একজন ‘পরিচালক’পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেখ ভাল করছেন জাকাত বোর্ড। এছাড়া, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রয়েছেন একজন, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক একজন, নিম্নমান সহকারী কাম সহকারী হিসাবরক্ষক একজন, ক্যাশিয়ার একজন, টাইপিস্ট একজন ও  এলএমএসএস রয়েছেন দুইজন।

বর্তমানে এ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ধর্মবিষয়কমন্ত্রী, সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। তিন বছরের জন্য বোর্ডের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হলেও হয় না নিয়মিত বৈঠক। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্তের বাইরে বোর্ড সদস্যদের অভিমতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে বোর্ডটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সংগ্রহ করা হয়। জেলা কমিটির মাধ্যমে আদায় হওয়া অর্থের অর্ধেক সরাসরি জেলা জাকাত কমিটির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্ররা সাহায্যের জন্য আবেদন করলে তা যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়। সেই আবেদন যাছাই-বাছাই করে অর্থ দিতে প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, দুস্থদের কর্মসংস্থান কার্যক্রম, জাকাত ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, নওমুসলিম স্বাবলম্বীকরণ ও দুস্থ-গরিব রোগীদের চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহায়তা করা। জাকাত ফান্ডের একটা নির্ধারিত পরিমাণ অর্থে টঙ্গীতে জাকাত বোর্ডের অধীনে শিশু হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা সেবায় দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ২৩টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ ও যাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, জনবল নিয়োগ না হওয়ার কারণে আমাদের কার্যক্রম সেইভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রচার-প্রচারণা ও অন্যান্য কাজের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। আমাদের খোদ রাজধানীতেই কেউ যাকাতে অর্থ দিতে চাইলে  কেউ গিয়ে সেটা আনবে সেই ধরণের লোকবল বা গাড়ীও আমাদে নেই। নানাবিধ সংকটের মধ্যেই চলছে আমাদের কার্যক্রম।

ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি জাকাত ফান্ড নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা নেওয়া হয়। এছাড়া জেলা কমিটিগুলোর মাধ্যমেও জাকাতের অর্থ নেওয়া হয়। এই অর্থ আয়করমুক্ত হওয়ায় অনেকে এ ফান্ডে টাকা দিয়ে থাকেন।

 

এসএইচ/