ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প

ভাগ্য বদলেছে দেড় কোটি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০২:২৮ পিএম, ৫ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১৬ এএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। আগামী ২০২১ সালে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পেন উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে ৩৪ লাখ সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের দেড় কোটি মানুষের জীবন। সারা দেশে ৪৯০ উপজেলার ৪ হাজার ৫০৩টি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। গঠন করা হয়েছে ৬২ হাজার ৪০০ গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। যার মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তাদের বার্ষিক আয় বেড়ে হয়েছে গড়ে ১১ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার দেশের দারিদ্র বিমোচন ও সুবিধাবঞ্চিত জনগষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়’কাজ দেয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে স্থায়ী তহবিল গঠনের মাধ্যমে পুঁজির অভাব দূর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। প্রকল্পের সদস্যরা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের জমির পরিমাণ ০.০৫ থেকে ১.০ একর। এর দুই-তৃতীয়াংশ নারী। প্রতিটি সমিতির সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০, সর্বনিম্ন ৪০। প্রকল্পে বাস্তবায়নের লক্ষ্য করা হয়েছে ৬২ হাজার ৪০০ গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। এ ক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির খামার, মত্স্য খামার, দুগ্ধ উৎপাদন, মৌমাছি পালন, শস্য উৎপাদন, বনায়নসহ নানা ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। সমিতির সদস্যরা বাধ্যতামূলক যে সঞ্চয় করেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক সমপরিমাণ টাকা দিয়ে তহবিল গঠনে সমিতিগুলোকে সহায়তা করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি সমিতিকে সরকার থেকে ঘূর্ণায়মান ঋণ হিসেবে সমপরিমাণ টাকাও দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সরকার এ প্রকল্পকে দেশের দারিদ্র বিমোচনে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ আমাদের এ বিষয়টিকে উৎসাহ দিচ্ছে। আমরাও অনেক দেশের কাছে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এ কৌশলটি তুলে ধরছি। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ আমাদের এ ক্ষেত্র থেকে উদ্বুদ্ধ করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আকবর হোসাইন বলেন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে মূলধন গঠনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে, যা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের একসঙ্গে উঠান বৈঠকে বসতে, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োজন মাফিক ছোট পারিবারিক খামার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যরা ইতোমধ্যে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এখন তারা নিজেদের ব্যবসা নিজেরাই স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। এ প্রকল্প পরিচালনার ফলে প্রকল্প এলাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারের হার ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাবলম্বী পরিবারের হারও ২৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ শতাংশ হয়েছে।

প্রকল্পের উপপরিচালক প্রণবকুমার ঘোষ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন,  দ্রুত আয় বৃদ্ধি, মানুষের জীবন যাত্রায় মান উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনীতে সমৃদ্ধি করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। এর মধ্যে গরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হলো একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। ইতোমধ্যে বিপুল জনগোষ্ঠী এর সুফল পেয়েছে। শুধু তাই নয়, সুবিধাভোগীদের জীবনেও এসেছে পাঁচটি ইতিবাচক পরিবর্তন। এরমধ্যে রয়েছে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, খাদ্য ঘাটতি কমে আসা, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি। এছাড়া প্রতিটি পরিবার আয় বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের দুই ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে কাজ শেষ ২ কোটি জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক গ্রাম বাস করে। ভূমি এবং জনগণ হল পল্লী-অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নউপর দেশের সার্বিক উন্নয়ননির্ভরশীল। পল্লী অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক বাড়িকে কেন্দ্র করে অব্যবহৃত জমি, উঠান, পুকুর/ডোবা, খাল ইত্যাদি এবং দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি, বেকার যুবক ও নারী রয়েছে। পাশাপাশি পল্লী অঞ্চলে সেবা সমপ্রসারণের নিমিত্ত বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক বিভাগের প্রশিক্ষিত জনশক্তি রয়েছে। অর্থাৎ গ্রামে আমাদের ভূমি, শ্রম, পুঁজি মানব সম্পদসহ বিভিন্ন উপাদান এবং সম্পদ রয়েছে। যার সঠিক এবং যথাযথ ব্যবহার হলে স্থানীয় ও জাতীয় উন্নয়নে  ভূমিকা রাখবে। সম্পদ ও জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ীকে আর্থিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ নিয়ে চালু হয় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।যার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভাগ্য বদলেছে প্রায় দেড় কোটি মানুষের।

টিআর/ এআর