বাজেটে কালো টাকা সাদার সুযোগ থাকলে দুর্নীতি বাড়বে: ড. সালেহউদ্দিন
প্রকাশিত : ০৬:৪৪ পিএম, ৬ জুন ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:২১ এএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার

২০১৮-১৯ সালের বাজেট আসন্ন। আগামী এক বছরে সরকারের এ আয়-ব্যয়ের হিসেবকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে চলছে বিভিন্নমুখী আলোচনা। অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন নানা দিক নির্দেশনা। ব্যবসায়ীরা তুলে ধরছেন তাদের বিভিন্ন দাবি। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে ধরছে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর গবেষণালব্ধ যৌক্তিক দিক।
বাজেটকে কেন্দ্র করে আলোচিত এসব বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের। যার কথায় উঠে আসছে আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া সম্ভাব্য খাত, কালো টাকা সাদা করা, অর্থপাচার, আরোপিত কর, এনবিআরের সক্ষমতা, বেকারত্ম, কর্মসংস্থান ও খেলাপি ঋণ নিয়ে করণীয় নানা দিক।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব আজ তুলে ধরা হল।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এবারের বাজেটকে নির্বাচনী বাজেট বলা হচ্ছে। এ বাজেটে সরকারের কোন কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন আছে?
সালেহউদ্দিন: এই বাজেটে সরকার চেষ্টা করবে মানুষকে সন্তুষ্ট করার। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের এলাকার দাবি দাবাগুলো মেটাতে। সরকারের ধারাবাহিক যে বড় বড় প্রকল্পগুলো আছে সেগুলোর বাস্তবায়ন ও সম্পন্যে জোর দিবে। সরকার এবার যোগাযোগ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ব্রিজ কাল ভার্ট নির্মাণে গুরুত্ব দিবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতেও এবার নজর বাড়বে। তবে সবচেয়ে নজর বাড়ানো দরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। আর প্রযুক্তিখাতেও কিছুটা বরাদ্দ বাড়তে পারে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আয়কর অধ্যাদেশে দীর্ঘদিন যাবত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া আছে। এখন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চাইছেন- এটি সমর্থন করেন কিনা?
সালেহউদ্দিন: নীতিগতভাবে কালো টাকা সাদা করা আমি সমর্থন করি না। কালো টাকা সাদা যতোই করতে যাবেন। দূর্নীতি ততই বেড়ে যাবে। কারণ কালো টাকার তো আলাদা রঙ থাকে না। টাকার উৎস্য জানতে চাইলে ওটা বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে।
তবে যেহেতু ব্যপক টাকা দেশের বাইরে রয়ে গেছে। আবার আবাসন খাতে একটা সংকট রয়েই গেছে। তাই সরকার একবারেই একটা বড় ধরণের জরিমানা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ শতাংশ নয়, সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে। অর্থাৎ ১০০ টাকা হলে ৪০ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে বাকী টাকা সাদা করে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এরপর আর কোন সুযোগ দেওযা যাবে না। অবশিষ্ট টাকাগুলোর নিয়মিত করের আওতায় আনতে হবে। প্রতিবছরই সে অর্থের ওপর করারোপ করতে হবে।
তবে কালো টাকা আবাসন খাতে দেওয়ার ক্ষেত্রেও আবার তদারকি বাড়াতে হবে। যারা ফ্লাট কিনছে, তারা ডিক্লিয়ার করে টাকাটা দিচ্ছে কি না? কারণ টাকা সাদা করার সুযোগ দিল, আর অনেকেই ফ্লাট কিনলো কিন্তু তা পর্যবেক্ষণ বা তদারকী করা হলো না। তাতে কোন লাভ হবে না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কর্পোরেট কর হার কমালে বিনিয়োগ বাড়বে- দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসায়ীরা এ কথা বলছেন। এর যৌক্তিকতা কতটুকু?
সালেহউদ্দিন: আমাদের দেশে কর্পোরেট কর সবচেয়ে বেশি। এই ট্যাক্সটা কমালে আমার মনে হয় ব্যবসায়ীরা আরো বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভূক্ত নয় সব ধরণের কোম্পানির জন্য ট্যাক্স কমাতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষা জাতির মেরুদ্বন্ড। কিন্তু প্রতিবছরই বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আসলে এ খাতে বরাদ্দটা কেমন হওয়া উচিত?
সালেহউদ্দিন: বাজেটের একটা বড় অংশ শিক্ষা খাতে যায়। কিন্তু তার বেশিরভাগ ব্যয় হয় প্রশাসনিক কাজে। শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য কাজে।আসল যেখানে খরছ করার দরকার সেখানে হয় না। স্কুলে শিক্ষার উপকরণ, লাইব্রেরী, শ্রেণী কক্ষের বেঞ্ছ-চেয়ার, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রগ্রাম, ছাত্রদের জন্য এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস। আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে জিডিপি ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্যয় হয়। যেটা কোরিয়াসহ উন্নত দেশে ১২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করে। তাই মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় আরো বাড়াতে হবে।