ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বাজেটে যুবসমাজকে কর্মমুখী করে তোলার বরাদ্দ থাকতে হবে: সালেহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:২১ এএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার

আসন্ন বাজেট ২০১৮-১৯, আগামী এক বছরে সরকারের এ আয়-ব্যয়ের হিসেবকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে চলছে বিভিন্নমুখী আলোচনা। অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন নানাবিধ পরামর্শ ও মতামত। ব্যবসায়ীরা তুলে ধরছেন তাদের বিভিন্ন দাবি। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে ধরছে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর গবেষণালব্ধ যৌক্তিক দিক। বাজেটকে কেন্দ্র করে আলোচিত এসব বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের। যার কথায় উঠে আসছে আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া সম্ভাব্য খাত, কালো টাকা সাদা করা, অর্থপাচার, আরোপিত কর, এনবিআরের সক্ষমতা, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান ও খেলাপি ঋণ নিয়ে করণীয় নানা দিক। একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির শেষ পর্ব আজ তুলে ধরা হলো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  দেশ জন সংখ্যাতাত্তিক বোনাসকাল অতিক্রম করছে। আমাদের এ বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনায় বাজেটে কি ধরণের পদক্ষেপ থাকতে পারে?

সালেহউদ্দিন: ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে কর্মক্ষম তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী বেশি। যাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। কিন্তু তারা বেকার। আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারছি না। কারণ আমাদের দেশের শিল্পকারণায় তরুণদের চাহিদা তৈরি হলেও তাদের শিক্ষাটা চাহিদার সঙ্গে সামাঞ্জস্য না। অর্থাৎ তারা যে শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে তা কর্মসংস্থানের উপযোগী বা মানের না। তাই তাদের কর্মমুখী শিক্ষা দিতে হবে, কারিগরি শিক্ষায় আরো গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য বাজেটে যুবসমাজ কর্মমুখী করে তোলার বিশেষ বরাদ্দ থাকতে হবে। নয়লে এ বিশাল মানবভান্ডার আমরা কাজে লাগাতে পারবো না।

 একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিৎ বলে মনে করেন কি না?

সালেহউদ্দিন: আমি মনে করি ব্যক্তিশ্রেণির আয়সীমা বাড়ানো উচিৎ। কারণ আমাদের আয়ও বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। অনেক সময় এনবিআর মনে করে যে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালে কর কমে যাবে, এটা ঠিক না। এনবিআর যেটা করতে পারে সেটা হরো ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে ট্যাক্সের নেটটাও বাড়াতে। বহু লোকের টিন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) আছে ট্যাক্স দেয় না। আবার বহু লোকের ব্যাপক ইনকাম আছে কিন্তু তাদের টিন নাই। জেলা পর্যায়ে অনেক বড় বড় ভবন ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক আছে যারা ট্যাক্সের আওতায় নাই। তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনলে এমনিতেই ট্যাক্স বেড়ে যাবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অর্থ পাচারের অভিযোগ বহু পুরনো। নির্বাচনের আগে টাকা পাচার বেড়ে যায় বলে বিদেশি গবেষণা সংস্থার পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এটি বন্ধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ?

সালেহউদ্দিন:  প্রথম কথা হলো দেশে যখন দুর্নীতি থাকে, সুশাসনের অভাব হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে। তখনই কিন্তু টাকা পয়সা পাচারের বিষয় চলে আসে। সততা ও স্বচ্ছতার ওপর টাকা পয়সা তো বিদেশে পাঠানোর দরকার নেই। দেশের বাইরে সাধারণত অভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, ফলস ডিক্লিয়ারেশন, ফলস এলসি খুলে টাকা পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও কাস্টমস এ বিষয়টা খুব গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করতে পারে। সর্বপরি অর্থপাচারে যাদের নাম ইতিপূর্বে এসেছে তাদের কয়েকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার নিশ্চিত করতে পারলে এটা বন্ধ হতে পারে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা জনগণ- ব্যবসায়ীদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে কি না?

সালেহউদ্দিন:  অবশ্যই এটা সাধারণের ওপর গিয়ে পড়বে। কারণ সরকার যখন রাজস্ব আয়ের পরিধি বাড়াবে, তখন এনবিআর এটা আদায়ে যথাযথ চেষ্টাই করবে। তাতে করহার বাড়বে, পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূল্য ও ফি বেড়ে যাবে। যার প্রভাব ভোক্তা সাধারণের ওপর গিয়েও পড়বে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: করদাতা হয়রানি কমাতে ও এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?

সালেহউদ্দিন: এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে অনলাইন বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। করদাতা এবং ইনকামট্যাক্স অফিসারের সঙ্গে যেন মুখোমুখি দেখা না হয়।  সামনা সামনি যোগাযোগ ও দেখাশোনা বেশি হলে দুর্নীতি বেশি হওয়ার সুযোগ থাকে। যখনই পরিচয়  হয়, তখনই নেগোসিয়েশন হয়। পৃথিবীর অন্য কোথাও এটা হয় না। আর আমাদের ট্যাক্স দেওয়ার প্রকৃয়াটাও আরও সহজতর করতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপির লাগাম টানতে আসলে করণীয়টা কি হতে পারে?

সালেহউদ্দিন: খেলাপি ঋণ বাড়ছে কারণ যারা খেলাপি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাদের কোন বিচার হয় না। ব্যাংকের যারা অবলোপন করে এবং রিশিউল করে তাদের বিরুদ্ধেও কোন নজরদারি বা পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের হিসেবে কারসাজির জন্যও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এগুলো বন্ধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এভাবে যারা খেলাপি করছে, তারা যেন কোন ধরণের ব্যবসা না চালাতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ক্রেডিট কার্ড পাবে না, বাড়ি ভাড়া করতে পারবে না। এছাড়া খেলাপির বিষয়ে যে মামলাগুলো আছে সেগুলো কয়েকটি বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে খেলাপি কমে আসবে। সেজন্য প্রধান বিচারপতি, গভর্নর, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা বসে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

 

এসএইচ/