ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঈমান সম্পর্কিত কুরআনের ৬ আয়াত ও ৫ হাদিস

মীর লুৎফুল কবীর সা’দী

প্রকাশিত : ১০:০৮ এএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

ঈমান বা বিশ্বাসের মূল্য আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে দামি। তাইতো মুসলমানের কাছেও ঈমানের চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছুই নেই। ঈমানের উপর ভিত্তি করে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সব হিসাব-নিকাষ চূড়ান্ত হবে। ঈমান সম্পর্কিত কুরআনের ৬ আয়াত ও ৫ হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো:

কুরআন মাজীদের ৬ আয়াত-

১. ওহে যারা ঈমান এনেছে! তোমাদের পিতাদেরকে ও তোমাদের ভাইদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের ওপর কুফ্‌রীকে প্রাধান্য দেয়। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই জালিম। (সূরাহ্‌ তাওবাহ্‌ ৯:২৩)

২. হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি (এই বলে) যে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন,’ সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের পাপসমূহ মোচন করুন এবং আমাদেরকে পুণ্যবানদের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন। (সূরাহ্‌ আলি ‘ইমরান ৩:১৯৩)

৩. তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেভাবে প্রশ্ন করতে চাও যেভাবে ইতঃপূর্বে মূসাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো? আর যে ঈমান দিয়ে কুফ্‌রী বদল করে দেয়, সে অবশ্যই সরল পথ হারিয়েছে। (সূরাহ্‌ বাকারাহ্‌ ২:১০৭)

৪. আজা তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হলো। এবং যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল ও তোমাদের খাদ্য তাদের জন্যে হালাল। এবং মু‘মিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী (তোমাদের জন্যে হালাল)-যখন তোমরা তাদেরকে তাদের মাহ্‌র প্রদান করবে সচ্চরিত্রবান থেকে; ব্যভিচারী হয়ে বা গোপন প্রেমিকা গ্রহণকারী হয়ে নয়। আর যে (আল্লাহ্‌র বিধানে) ঈমান আনতে অস্বীকার করে তার কর্ম বিফল হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরাহ্‌ মায়িদাহ্‌ ৫:৫)

৫. যে ব্যক্তি তার ঈমানের পর আল্লাহ্‌কে অবিশ্বাস করে (তার ওপর রয়েছে আল্লাহ্‌র ক্রোধ), তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যাকে (কুফ্‌রীর জন্যে) বাধ্য করা হয়, অথচ তার হৃদয় ঈমানে প্রশান্ত, কিন্তু যে (ইচ্ছাকৃতভাবে) কুফ্‌রীর জন্যে তার বক্ষ প্রশস্ত করে তার ওপর রয়েছে আল্লাহ্‌র ক্রোধ এবং তার জন্যে রয়েছে মহাশান্তি। (সূরাহ্‌ নাহ্‌ল ১৬:১০৬)

৬. মানুষ কি মনে করে যে, তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে (এজন্যে) যে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না। এবং অবশ্যই আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম, এবং আল্লাহ্‌ অবশ্যই জেনে নিবেন (স্পষ্ট করবেন) যারা সত্য বলেছে তাদেরকে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নিবেন মিথ্যাবাদীদেরকে। (সূরাহ্‌ ‘আনকাবূত ২৯:২-৩)

রাসূলুল্লাহ্‌ সা. এর হাদীস-

১. হযরত ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনি ‘উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. ইরশাদ করেন, ইসলামকে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তা হলো-

ক. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সা. তার বান্দা ও রাসূল,

খ. সালত প্রতিষ্ঠা করা,

গ. যাকাত প্রদান করা.

ঘ. হাজ্জ করা এবং

ঙ. রমাদান মাসে সিয়মা পালন করা। (সহীহ্‌ বুখারী: ৮, সহীহ্‌ মুসলিম: ১৬)

২. হযরত ‘উসমান রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যূবরণ করবে এমতাবস্থায় যে , সে বিশ্বাস করে আল্লাহ ছাড়া কোনও মা‘বূদ নেই, সে অবশ্যই জানানাতে পবেশ করবে। (সহীহ্‌ মুসরিম: ২৬)

৩. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তরটির বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। অন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোনও উপাস্য নেই। এর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (সহীহ্‌ বুখারী: ৯, সহীহ্‌ মুসলিম:৩৫)

৪. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলা এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরবতা অবলম্বন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলা এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলা এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। (সহীহ্‌ মুসলিম:৪৭)

৫. হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ওই বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

ক. যারা নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল সা. অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে।

খ. যে ব্যক্তি কোনও বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে।

গ. যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে কুফ্‌র হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্‌ বুখারী: ২১, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)

(লেখকের ‘কুরআন মাজীদের আদেশ ও নিষেধ’ বই থেকে সংকলিত)

একে//