ঢাকা, রবিবার   ২৬ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১২ ১৪৩১

সাঁইত্রিশ বছর পর!

আবু এন.এম.ওয়াহিদ  

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ১২ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার

বহু বছর আগে কবি জসিম উদ্দিন তার বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতায় লিখে গেছেন, ‘এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে..., অথচ আমি কী নির্লজ্জের মতো বলছি, দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর পর আমার প্রথম শিশুপুত্রের কবর প্রথমবারের মতো জিয়ারত করে এসেছি মাত্র আজ! বলুন তো, শুনতে কেমন লাগে! পুরনো এই ঘায়ে, নতুন করে ব্যথার আঁচড় আজই লাগেনি, লাগতে শুরু করেছে কয়েক মাস আগে থেকেই, যখন আমি বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম! দিনটি ছিল এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি। সম্মেলন শেষে ব্যাংকক থেকে ন্যাশভিল ফেরার পথে শেষ ফ্লাইটে শিকাগো এসে বিমানে উঠে বসেছি মাত্র। স্থানীয় সময় রাত ন’টা কি সাড়ে ন’টা হবে। উড়োজাহাজ তখনও গেটে দাঁড়িয়ে, যাত্রীরা একে একে উঠে যার যার আসনে বসছেন। মেঘবিহীন রাতের আসমানে তর্জন-গর্জন ছাড়া মাঝে মাঝে যেমন অকারণে বিজলি চমকায়, তেমনি যথাযথ পরিবেশ-পটভূমি ছাড়া একেবারে সূত্রবিহীনভাবে হঠাৎ আমার প্রথম সন্তানের কথা মনে পড়ে গেল! শুধু কী মনে পড়ল, বুঝলাম ক্ষণিকের মাঝে আমার শরীরের সমস্ত রসায়ন বদলে গেছে! আরও বুঝলাম, অন্তরে আচমকা ঝড়ো হাওয়া বইছে, এলোপাতাড়ি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বাতাসে হৃদয়টি দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে! আর দু’চোখ দিয়ে অনবরত বয়ে চলেছে অশ্রুবারি! মনের অস্থিরতাও কাটছে না আবার চোখের পানিও বাঁধ মানছে না। এ রকম অভিজ্ঞতা আগে  কখনও হয়নি। একদিকে একমনে প্লেনের মাঝখানে আয়েল সিটে বসে কাঁদছি, আরেক দিকে নিজেকে নিজে ধিক্কার দিচ্ছি!  এ কেমন পাষাণ বাবা আমি! সারা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছি, অথচ ছোট্ট ছেলেটাকে ও’ক গাছের নিচে সেই যে একা ফেলে এলাম, আর কোনোদিন ও-পথে পা বাড়ালাম না! তার কবরে গিয়ে দু’ফুঁটো চোখের জল ফেললাম না! তার আত্মার উদ্দেশ্যে একটু দোয়াদুরুদ পড়লাম না! আল্লাহ কাছে মাগফেরাত চাইলাম না! কত স্বার্থপর আমি! পিতা হলেই হয় না, ‘পিতা’ নামের কলঙ্ক আমি! আমি অপরাধী! আমি আজ আসামির কাঠগড়ায়!

ঊনিশ শ’ একাশি সালের ৭ আগস্ট বোস্টনের উপশহর ‘ব্রাইটন’-এর ‘সেন্ট এলিজাবেথ মেডিক্যাল সেন্টারে’ তার জন্ম হয়েছিল। বড় খায়েস করে নাম রেখেছিলাম, ‘উমর’, কিন্তু ছেলেটি আমার বাঁচল না দু’সপ্তাহও! মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার শক্তি সঞ্চয়ের আগেই ছোট্ট সোনা আমার কোনো ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়াই ১৯ আগস্ট নীরবে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল! জন্মের স্বাদ পাওয়ার আগেই মৃত্যু তাকে টেনে নিয়ে গেল। কে জানে, তরুণ বয়সে তাকে এতো সহজে ভুলে গিয়েছিলাম বলেই সে হয়তো তার ন্যায্য পাওনা আজ কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নিচ্ছে! না হলে তিন যুগ পর তার স্মৃতি কেন আমাকে এত তীব্রভাবে নাড়া দিচ্ছে! এত নিগূড়ভাবে কাঁদাচ্ছে! তাকে হারানোর ব্যথা পাষাণ হয়ে বারবার কেন আজ আমার বুকে আঘাত হানছে! হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহে যন্ত্রণার ঢেউ তুলছে আর আমার ধমনী-শিরা-উপশিরা ওই কষ্ট-সঙ্কেতগুলোকে পৌঁছে দিচ্ছে শরীরের তাবৎ কোষে কোষে।  কান্নায় এক ধরনের স্বস্তি পেলেও, কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলছে না। ভাবছি, দায়মুক্তির কি কোনো পথ আছে?

পথ থাকুক বা না থাকুক, শিকাগোর প্লেনে বসেই তৎক্ষণাৎ ঠিক করলাম, অনেক হয়েছে, আর দেরি নয়, ঠাণ্ডার প্রকোপ কমলেই সপরিবারে বোস্টন যাব। বাড়িতে এসেই আমার ছেলে-আসাদকে বললাম, মে মাসে তোমার ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে যাব, তুমি তার সেমিটারির সাকিন ঠিকানা ও কবরের বিস্তারিত খোঁজখবর নাও এবং সবার টিকেট কর। ঠিক হলো, ওই মাসের ১২ তারিখ শনিবার সকালে রওয়ানা দিয়ে সবাই দুপুরের দিকে  মোটামুটি একই সময় গিয়ে বোস্টন পৌঁছব। সরাসরি এয়ারপোর্ট থেকে গোরস্থান, তারপর শহর দেখাদেখির কাজ যা পারি তাই করব এবং পরদিন বিকেলে যার যার গন্তব্যে ফিরে আসব। আসাদ, তার মা ও আমি ন্যাশভিলের যাত্রী, বাল্টিমোর থেকে আসবে আমার বড় মেয়ে - নাজলা, ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকে ছোট মেয়ে - নায়লা, সেও এসে যোগ দেবে একই জায়গায়। সবার টিকেট এবং বোস্টনে এক রাতের জন্য হোটেলে দুই রুম বুকিং দেওয়া হলো। এভাবে সফরসূচির সব ঠিক হয়ে গেলো। আসাদ দফায় দফায় ফোন করে ‘বোস্টন সিটি অফিস’ থেকে উমরের কবরস্থানের ঠিকানা, কবরের লট নং,  ইত্যাদি যতদূর সম্ভব যোগাড় করে নিল।  যাওয়ার দিন যখন ঘনিয়ে এলো তখন দেখা যায়, শনি ও রোববার বোস্টনের আবহাওয়া থাকবে রীতিমত ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ! সারা দিন দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হবে এবং ‘সেলসিয়াসে’ তাপমাত্রা উঠবে সর্বোচ্চ ৫০-এর কোঠায়। সবার মন খারাপ! আমিও ভাবনায় পড়ে গেলাম, কিভাবে এত অল্প সময়ের মাঝে নিরাপদে জরুরি কাজটি সেরে ঘরে ফিরব! তার ওপর ফ্লাইট বিভ্রাটের আশঙ্কা তো রয়েই গেল! মনে আরও প্রশ্ন দেখা দিল, বৃষ্টি-বাদলের মাঝে এত বড় সেমিটারি, ঠিকমতো বাচ্চাদের সেকশন খুঁজে পাব তো, সেই ও’ক গাছের নিচে আমার ছেলের কবরটি সনাক্ত করতে পারব তো, ইত্যাদি, ইত্যাদি। গিন্নি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, ‘এত বছর যখন দেরি করেছ, তো আরও দু’মাস পরে গেল কী হতো, জুলাই-আগস্টে বৃষ্টি হলেও ঠাণ্ডা তো আর থাকতো না?’ আরও দু’মাস যে আমি, কিংবা তুমি, কিংবা আমরা দু’জন বেঁচে থাকব, তার কোনো নিশ্চয়তা তুমি দিতে পারবে? এ ব্যাপারে আমার গুরুগম্ভীর মনোভাব বুঝতে পেরে তিনি আর কথা বাড়ালেন না।

যাওয়ার দিন ন্যাশভিলের আকাশ ফকফকা, রোদ ঝলমল। ওদিককার অবস্থা যেমনই থাকুক, নাজলা-নায়লার ফ্লাইটেও কোনো অসুবিধা হয়নি। সময়মতো সবাই গিয়ে মিলিত হলাম বোস্টনের ‘লোগান’  আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বোস্টনে নেমে দেখি, আকাশ ঘনকালো মেঘে ঢাকা, ঝরঝর বৃষ্টি, ঝরছে তো ঝরছে, থামাথামির কোনো আলামত নেই। প্রকৃতির এমন কান্না দেখে আমাদেরও কাঁদো কাঁদো অবস্থা! আমি সবার মনে একটু সান্ত্বনা  দেওয়ার কোশেশ করলাম এই বলে যে, দেখ, আমরাতো বেড়াতে আসিনি, একটি আবেগঘন ধর্মীয় ও পারিবারিক কাজে এসেছি। আল্লাহ্ তো দেখছেন, প্রতিকূলতা যত বেশি হবে, আমরা ‘হাসানাও’ তত বেশি পাব, কিন্তু আমার কথাটি কারো মনকে এতটুকু নাড়া দিতে পারল বলে মনে হলো না। তার ওপর আমাদের মাঝে কেউ একজন বলে বসলেন, ‘আব্বু, কাল বৃষ্টি থেমে যাবে, আমাদের ফিরতি ফ্লাইট তো সেই বিকেল বেলা, আগামীকাল সকালে গ্রেভইয়ার্ডে গেলে কেমন হয়’। আরেকজন বললেন, ‘না, আসল কাজটি আজকেই সেরে ফেলা উচিৎ,’ আমিও জোর দিলাম, আজই যাব এবং এখনই। আগে থেকেই বলা ছিল, স্যুটকেস ছাড়া সবাই এক প্রস্থ কাপড় পরে ছোট হ্যান্ডবেগ নিয়ে আসবে। তাই হলো, ‘উবার’ ডেকে প্রথমে গেলাম ডাউনটাউনের কাছে ‘ব্যাক ব্যে’ এরিয়াতে, সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে আরেকটি ‘উবার’ নিয়ে সোজা  বেছরের পুরনো এবং দেশের সবচেয়ে বড় বড় সেমিটারির অন্যতম। যাওয়ার পথে  ১৯৮১-৮৩-তে  আসাদ-নাজলা-নায়লার জন্মের আগে বোস্টনের যে অঞ্চলে আমরা থাকতাম, যে ইউনিভার্সিটিতে আমি পড়তাম, যে সব রাস্তা দিয়ে দিন-রাত হাঁটাহাঁটি করতাম, তাদেরকে সেসব দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে গেলাম। যে হাসপাতালে আসাদের জন্ম হয়েছিল, তার সামনে দিয়ে গেলাম, আসাদ ডানে-বাঁয়ে চেয়ে দেখল, পরিবর্তন কিছুই হয়নি। এর মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে বিরামহীম, পিচ্ছিল পথে এঁকেবেঁকে চলছে গাড়ি, সবার মাঝে সংশয়, শঙ্কা, নিরাপদে সঠিক জায়গায় সময়মতো পৌঁছব তো! কারো মুখে কথা খুব একটা ফুটছে না, যেন সবার মনে দুঃখ, আবেগ, উত্তেজনা এক সঙ্গে এসে ভর করেছে! যেন সবার বুকে দীর্ঘদিনের জমাট বাঁধা কান্না উথলে ওঠার জন্য আকুলি বিকুলি করছে! এভাবে চলতে চলতে সেমিটারির জুইশ অংশের দ্বিতীয় গেটে এসে ‘উবার’ থামল, আমরা দরজা খুলে নামলাম। টপ টপ বৃষ্টি পড়ছে, সঙ্গে ভেজা ভেজা ঠাণ্ডা বাতাস। আমি ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, আসাদ ও নায়লা সেল ফোনে বিশাল গোরস্থানের নকশা ডাউনলোড করে বোঝার চেষ্টা করছে, কোথায় ‘সেন্ট ভিনসেন্ট চিলড্রেন’ সেকশন যেখানে সাত এবং আট নম্বর পিলারের মাঝখানে ছোট্ট ও’ক গাছের তলে আমার ‘উমর’কে শুইয়ে রেখেছিলাম ১৯৮১ সালের ২০ আগস্ট বেলা ১টার দিকে। নায়লা ভাবনাচিন্তা করে একটি সূত্র বের করেছে। তার অনুমান, জুইশ সেমিটারির যেদিকে আমরা এসে ঢুকেছি সেই প্রান্তেই উমরের কবর। ফের গাড়িতে উঠে ফিরে গেলাম ওই দিকে। গেট দিয়ে ঢুকেই বুঝতে পারলাম, সঠিক জায়গায় এসেছি। ড্রাইভারকে আগেই বলা ছিল, জায়গামতোই গাড়ি থামল।

দরজা খুলে মাটিতে পা রাখার আগেই আমার বুক ফেটে জমা-কান্না বেরিয়ে এলো। মনের তরল কান্না নীরবে অশ্রু হয়ে সহজেই ঝরে পড়ে, কিন্তু চাপা পড়া জমাট বাঁধা পুরনো কান্নার গতিপ্রকৃতিই আলাদা, সে বড় বেয়াড়া, সে এমনি এমনি প্রকাশিত হয় না, বাতাসে শব্দতরঙ্গ তুলে হঠাৎ বিষ্ফোরিত হয়! আমার বেলা তাই হলো। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম, কথা বলা তো দূরে থাক, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসেও কষ্ট হচ্ছিল। পেছনে ফিরে দেখি বউ-ছেলেমেয়ে সবার একই অবস্থা! বাঙালির এমন বাঁধভাঙ্গা  কান্না দেখে মেক্সিকান ‘ফবারওয়ালা’ তো হতভম্ব! তারা এমন আবেগঘন কাঁদাকাটিতে অভ্যস্ত নয়! বুঝলাম, খুশিবাসির মতো কান্নাকাটিও মানুষের সংস্কৃতির একটি অংশ। জাতিতে জাতিতে যেমন আনন্দ-উদযাপনে ভিন্নতা আছে, তেমনি আছে ব্যথাবেদনার বহিঃপ্রকাশেও।

সেই ছোট্ট ও’ক গাছের চারা - আজ বিশাল বৃক্ষ! দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছরে মাটির ‘উমর’ মাটির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, অথচ গাছটি এখনও সবুজ, সতেজ, ক্রমবর্ধমান! আমি একবার আমার ছেলের কবরের দিকে তাকাই, আরেকবার দেখি গাছটাকে। অদ্ভুত এক মনের অবস্থায় হতবিম্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি! পরপর আমি যেন দু’টো কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি। ভারী অভিমানের সুরে ‘উমর’ যেন বলছে, ‘বাবা, এতদিন পর আমার কথা মনে পড়ল!’ আমি কী উত্তর  দেবো, গাছটি যেন আমার হয়ে জবাব দিচ্ছে, ‘ভয় নেই বন্ধু, আমি তো আছি!’ কথা তো ঠিকই, এ-তো কেবলই একটি বনের গাছ নয়, সেও আমার প্রিয়, আমার ছেলের বন্ধু যে, আমি আমার প্রাণপ্রিয় শিশুসন্তানকে এখানে ফেলে গেছি, এই গাছের তলে। গাছটি তো তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে যায়নি কোথাও। সে-ই তো তার আপন বন্ধু, একমাত্র বন্ধু, সে-ই তাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সঙ্গ দিচ্ছে, ছায়া দিচ্ছে, মায়া দিচ্ছে! কী ঝড়, কী বৃষ্টি, কী তুষারপাত, কী আঁধার, কী আলো, - জগতের তাবৎ বিপদে আপদে ও’ক গাছই আমার ছেলেকে আগলে রেখেছে! বিনিময়ে কিছুই চায় না, চাইবেও না!

একটি গাছ, সে কত বড়, কত মহৎ! জীবিত মানুষকে ফল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, ঝরা পাতা দেয়, নিজেকে পুড়িয়ে মানুষকে আলো দেয়, তাপ দেয়, আসবাবপত্র হয়ে আদম সন্তানের ঘরে ঘরে শোভা পায়! মৃত মানুষের আত্মাকে সঙ্গ দেয়, হয়তোবা আরও কত কিছু দেয় যা আমরা জানি না! আজ আমি আমার প্রয়াত ছেলের কাছে অপরাধী, ক্ষমাপ্রার্থী! ও’ক গাছের কাছে আমি ঋণী, চির ঋণী! আমি আজ মেঘে ঢাকা বোস্টনের আকাশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আকাশ তার কান্না থামিয়ে আমাদের কাঁদতে দিল। যতক্ষণ ‘উমরের’ কবরের পাশে ছিলাম, ততক্ষণ বৃষ্টি পড়েনি এক ফোঁটাও। আমরাও এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কসুর করিনি, সবাই মিলে ‘চার-কুল’ পড়লাম, সুরা ফাতেহা পড়লাম, আল্লাহ কাছে কাঁদলাম, দোয়া করলাম, মাগফেরাত চাইলাম! ও’ক গাছের ছবি তুলে নিয়ে এলাম। ‘উবার’ ড্রাইভার আমাদের ফেলে গেল না, গাড়িতে বসে বসে সব দেখল! কী বুঝল, কে জানে? গোরস্থানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে, গাড়িতে এসে বসলাম, সে টিস্যু এগিয়ে দিল, ফের নিয়ে এল বোস্টন! তার কাছেও আমি ঋণী, চির ঋণী!

লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি।

এসএইচ/