ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ঈদ অফারের নামে প্রতারণা

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০৭:২৬ পিএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার

আব্বাস আলী একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। অফিস মতিঝিল এলাকায়। থাকেন মুহাম্মদপুরে। অফিসের জন্য প্রতিদিন যাতায়াতের পথে তার চোখে পড়ে মাহে মরজান ও পবিত্র ইদুল ফিতর উপলক্ষ্যে রাস্তার দুপাশে বড় বড় দোকানের বিশেষ অফারের দিকে। ঈদ উপলক্ষে  বাজারে এখন সব দ্রব্যমূল্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এসময় কিছু কম মূল্যে নিজের পছন্দের পণ্য কিনতে পারলে মন্দ হয় না। সেই ভাবনা থেকেই রাজধানীর এলিফ্যান্ট আইডিয়া শোরুম থেকে বিশেষ ছাড়ে পাঞ্জাবী নেন তিনি। দুই মাস যেতে না যেতেই পাঞ্জাবী কালার নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া পরিবারের জন্য ঈদের নতুন পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন বিশেষ ছাড়ের দোকানে। ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে ভীষণ হতাশ তিনি। কারণ ঈদের অফারের নামে চলছে প্রতারণা। ছাড়ের মানে বেশিরভাগেরই মান অত্যন্ত নিম্ন। এক প্রকার বাতিল পণ্য বললেও চলে। মূলত ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্যই ঈদ সামনে রেখে এমন ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তার। শুধু আব্বাস আলী না, দেশ-বিদেশের নামকরা কম্পানিগুলোর এমন আচরণে হতাশ ক্রেতারা।

রোববার দেখা যায়, ধানমণ্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, গাউছিয়ার বেশকিছু দোকানে এখনও চলছে ঈদ অফার। এলিফ্যান্ট রোডে ইস্ট ওয়ে শো রুমে গিয়ে দেখা যায়, শতকরা ৫০ ভাগ ছাড় পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ের কথা উল্লেখ থাকলেও দোকানের এক কোনে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি শার্ট। সেগুলোর বেশিরভাগেই লেগে আছে ময়লার দাগ। এছাড়া দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন আগের।

ছাড়ের বিষয় জানতে চাইলে উপস্থিত বিক্রয়কর্মী সবুজ জানান, পবিত্র মাহে রমজান ও ইদুল ফিতর উপলক্ষে ইস্ট ওয়ে শতকরা ৫০ ভাগ পযর্ন্ত ছাড় দিচ্ছে।

পোশাকের রং ফ্যাকাশে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকায় এবং ক্রেতারা হাতে ধরে দেখে বলে এ রকম হয়েছে। তবে বিশেষ ছাড়ের নেপথ্যে প্রতারণার কথা মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। ছাড়ের নামে ভোক্তা ঠকানো হচ্ছে কি?

এব্যাপারে জানতে চাইলে ইস্টওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে আমাদের প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছাড়া দিয়ে থাকে। এছাড়া শতভাগ সততার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি।

এদিকে ইদুল ফিতর উপলক্ষে বাটার সিগন্যাল লোটো আউটলেট  উৎসাবে- আনন্দে হাজার হাজার জুতা ফ্রি নামে একটা অফার দিয়েছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে লোটো থেকে এক হাজার টাকা মূল্যোর যে কোনো জুতা কিনলে ২৫ শতাংশ পযর্ন্ত ছাড় মিলছে। তবে এমন ছাড়ের কথা সব আউটলেটে উল্লেখ থাকলেও সব আউটলেট মিলছে না ছাড়। এ বিষয় জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আশিক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত এই অফার থাকে। এখন নেই। ব্যানার ঝুড়িয়ে রাখছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে লংকাবাংলা ঈদ হোক আনন্দের এমন অফার লিখে ১০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। কথা হয় লংকাবাংলা আউটলেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আলিম। তিনি বলেন, সাধারণ ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি। সবাই যেতে পোষাক কিনতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি ঈদে মূল্য হ্রাসের নামে বিশেষ করে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি ও থান কাপড় জিঞ্জিরা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি করিয়ে আনেন অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। পরে সেগুলোই বিক্রি করা হয়।

গাউছিয়া মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মতিন বলেন, আমরা ঈদ উপলক্ষে সাধারণ ক্রেতাদের সুবিধার জন্য প্রতিবছর বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করি। এতে অবশ্যই ক্রেতা বেশি পাওয়া যায়। যাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গিতেও থাকে বিশেষ ছাড়। ক্রেতাদের অভিযোগ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে কম দামে যেসব পণ্য বিক্রি করা হয় সেগুলোর মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ ছাড়ে বিক্রির নামে চালানো হয় মানহীন পণ্য। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়েও এসব পণ্যের বেশি দাম নির্ধারণ করে পরে তা থেকে কিছুটা কম দাম দেখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

 আসলে প্রতারণার মহাউৎসব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে সেল মানে প্রকৃত অর্থে এমন সব পণ্য বিক্রি করা হয়, যেগুলো ব্যবহারের উপযোগী নয়। দীর্ঘদিন দোকানে পড়ে থাকায় গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ডিসকাউন্টের নামে বিক্রি করা হচ্ছে।

আবার কেউ কেউ ব্যবসা পরিবর্তন বা বিভিন্ন উৎসব ঘিরে পুরনো পণ্য কম দামে বিক্রি করে নতুন পণ্য দোকানে তোলে। এ সময় তারা আগের পণ্যে বেশি দাম ধরে পরে তাতে কিছুটা ছাড় দিয়ে বিক্রি করে। তেমন কোনো নজরদারি না থাকায় অসৎ ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ ।

 টিআর/ এসএইচ/