ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঈদের দিনের খাবার-দাবার

সামিয়া তাসনীম

প্রকাশিত : ০৮:৪৮ এএম, ১৬ জুন ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৯:০৬ এএম, ১৬ জুন ২০১৮ শনিবার

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি।বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বড় বয়স পর্যন্ত ঈদের খুশি সবার মনে এক অন্যরকমের অনুভূতি দেয়।মানুষ যখন ছোট থাকে তখন ঈদের আনন্দটা যেনো অনেক বেশি থাকে, কারণ দায়িত্বটা থাকে বাবা মায়ের উপর।আর বড় হলে দায়িত্ব চলে আসে নিজের উপর।সেটা যে কোনো কিছুর দায়িত্বই হতে পারে।এই ধরুন খাবার দাবারের ব্যাপারটা।আপনি ছোট বেলাই কিন্তু চিন্তা কম করতেন যে, আপনি কি খাবেন কি খাবেন না।কিন্তু বড় হওয়ার পর আপনার নিজেরসহ পরিবারের সবার চিন্তা করতে হচ্ছে।
আমরা সবাই জানি, পুষ্টি চাহিদা বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিংগ এবং রোগ ভেদে পরিবর্তন হয়।আনন্দ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকলেও খাবার গ্রহণ এর ব্যাপার এ প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিৎ।
ঈদের দিনে আমরা কম বেশি সবাই একটু নিয়মের বাইরে যেতে চায়, কিন্তু তাই বলে খেয়াল রাখতে হবে যেনো খুব বেশি যেনো অনিয়ম না হয়ে যায়।
ঈদের দিনের খাবার
আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা অন্যান্য দিনের মত এই দিনও একি থাকবে।তবে দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের পর হঠাত করে বেশি খাওয়াটা সবার জন্য সহনীয় হয় না।তাই যার যার ডাইজেশন পাওয়ার অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ ভিন্ন হওয়া জরুরি। আর একটি জিনিস এবারের ঈদে সবাই কে মাথায় রাখতে হবে, সেটা হল ঈদ টা পরেছে গরমে।তাই খাবার গ্রহনের সময় এই জিনিস টিও মাথায় রাখতে হবে।

ঈদের সকালের নাশতা
সকালের নাশতা খুব সাধারন এবং সহজপাচ্য হতে হবে। প্লেইন রুটি, সঙ্গে সবজি অথবা পরিমিত পরিমাণে সেমাই বা পায়েশ নেওয়া যেতে পারে।সে ক্ষেত্রে যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি এবং ডায়েট কন্ট্রোল এ আছেন তারা সেমাই বা পায়েশ খেলে রুটি টা বাদ দিবেন।কারণ সেমাই বা পায়েশ দুইটার মধ্যেই শর্করা আছে। সঙ্গে আধা ঘন্টা পর যে কোনো একটি ফল বা ফলের সালাদ খেতে পারেন।যারা ডায়াবেটিক রোগী তারা অতিরিক্ত শর্করা গ্রহনেও সচেতন থাকবেন।

ঈদের দুপুরের খাবার
ঈদের দিন দুপুরে সময়মত খাবার খাওয়া হয়ে ওঠে না। ঘোরাঘুরি আর বন্ধু দের সঙ্গে আড্ডায় খাওয়ার কথা অনেকেই ভূলে যান বা দেড়ি করে ফেলেন।এই ব্যাপারে সবারই সচেতন হওয়া উচিৎ। যারা ডায়াবেটিক রোগী তাদেরকে অবশ্যই খাবার সময়মত খেতে হবে।আর অন্যদেরো ও সমান।কেনোনা খাবার সময় মত না খেলে অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা, মাথা ব্যাথা, খাবার হজমে সমস্যা ইত্যাদি। 
এবার খাবারের মেনুতে আসি।দুপুরের খাবার আবার ঈদের দিন, সেক্ষেত্র তো একটু স্পেশাল হওয়ারই কথা।কিন্তু খুব বেশি অয়েলি খাবার খাওয়ার চিন্তা করা থেকে বিরত থাকায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি যেটাই খাবেন আপনাকে মাথায় রাখতে হবে সেটার প্রসেস কিভাবে করবেন।তারপর গ্রহণ করার সময় অবশ্যই আপনাকে পরিমাণটাও ঠিক করে নিতে হবে।মাংস খেলে যে কোনো এক ধরনের খেতে হবে।যেমন, মুরগি, গরু,খাসীর মাংস যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। সঙ্গে যে কোনো সবজি বা সালাদ অবশ্যই রাখতে হবে। সালাদ এ টক দই ব্যবহার করলে খুবই ভালো হবে।
ঈদের রাতের খাবার:
রাতের খাবার ও হালকা হলে পরের দিনের অনুভূতি ও ভালো হবে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করার পর স্বাভাবিক ভাবেই সবাই ক্লান্ত হয়ে যায়।তাই রাতের খাবার এর মেনু এমন রাখতে হবে যেনো পেট ভরার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তিভাবটাও চলে যায়। ভাত অথবা রুটি এর সঙ্গে যে কোনো একটা তরকারি নিতে হবে।সেটা হতে পারে মাংস অথবা ডালের সবজি।সঙ্গে একটি টক ফল।
মনে রাখতে হবে যে বিষয়টি:
মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা এক নয়।অনেকেই অনেক রোগে আক্রান্ত। তাই অনেকেরই খাবার আলাদা হবে।তাই যার যেই খাবার এ রেস্ট্রিকশন আছে তাকে সেটা মেনে খেতে হবে।খাবার গ্রহণে পরিমাণ আর খাবারের টাইপ বুঝে খেতে হবে।গরমের কারণে ঘোরাঘুরিতে শরীর থেকে অনেক পানি আর লবণ বের হয়ে যেতে পারে তাই এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে।প্রচুর পানি বা ফলের পিওর জুস বা ডাবের পানি খেতে পারেন।সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে খাবেন। রোজা রাখার পর অনেকেরই হজমে সমস্যা হতে পারে তাই এই ব্যাপার টিও খেয়াল রাখতে হবে।
ঈদের আনন্দ যেনো বাদ না পরে যায়:
খাবারের চিন্তা করতে গিয়ে, ঈদের আনন্দ যেনো কম না হয়ে যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। বছরে একবার ঈদ উল ফিতর পায় সবাই।তাই ঈদের এই দিনটিকে স্পেশাল করতে অন্যান্য আনন্দ বহাল রাখা উচিৎ। পরিবারের সবার সাথে বসে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, গল্প করা ইত্যাদি যেনো ঠিক থাকে...
সবাইকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।ঈদ মোবারক। 

লেখক# পুষ্টিবিদ।