ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

রাবির জোহা চত্বরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবস্থান

প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ৩ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে নগ্নপায়ে জোহা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। মঙ্গলবার বেলা পৌনে এগারোটার দিকে নিজ চেম্বার থেকে নগ্ন পায়ে বের হওয়ার সময় তাকে অবরুদ্ধ করেন তার বিভাগের সহকর্মীরা।

এদিকে, ফরিদ উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখায় বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা ফরিদ উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। দুপুর বারোটার ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে বেশকিছু নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড দিয়ে জোহা চত্বরে আসতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তাদের মিছিল প্রায় দশ মিনিট পুলিশি বাধায় থাকে। এরপর ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে ফরিদ উদ্দিন খান তার ফেইসবুকে নগ্নপদযাত্রা ও জোহা চত্বরে একঘণ্টা অবস্থানের ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ আমি নগ্নপদে অফিসে যাব। সকাল ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবো। খালিহাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে যে কেউ যোগদান করতে পারেন। কোনও স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনও রাজনীতি। এই নগ্নপায়ে নীরব প্রতিবাদ বোঝাবে আমরা আর সভ্য সমাজের নাগরিক নয়, যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে যেখানে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের সুযোগ আছে।’

প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা যায়, ফরিদ উদ্দিনের চেম্বারে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান তার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সোয়া ১১টার দিকে তিনি শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খানের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যান। এসময় তার চেম্বারের সামনে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী পদযাত্রায় যোগ দিতে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থী ওই শিক্ষককে ছাড়া সেখান থেকে যাবেন না বলে জানান।

সাংবাদিকরা ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদেরকে বাধা দিয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুবর রহমান বলেন, আমরা চাই না আমাদের সহকর্মী লাঞ্ছিত হোক। তাই বিভাগের সভাপতি হিসেবে আমি তাকে বাধা দিয়েছি।

অপরদিকে, ড. ফরিদ উদ্দীন খানের ডাকে সাড়া দিয়ে জোহা চত্বরে সমবেত হন কয়েকজন শিক্ষক। তারা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকিব, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমান প্রমুখ।

ফরিদ উদ্দিনকে বাধার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ফরিদ উদ্দিন আমার স্নেহভাজন, তাই অফিসে আসার পথে তার চেম্বারে গিয়েছিলাম। তাকে বুঝিয়েছি যে, তার যদি খারাপ লাগে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিবে। তাকে না আসার জন্যে বুঝিয়েছি, বাধা দিইনি।

অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সামনে সিটি করপোরেশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোটা আন্দোলনের নামে এক মহল এই আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখানেও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই ও ২ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে হামলা চালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তরিকুল ইসলাম তারেক নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এসএইচ/