ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

গোল টেবিল বৈঠকে অমর্ত্য সেন

স্বাস্থ্যখাতে বেসরকারি সেবা কখনোই সরকারি সেবার বিকল্প হতে পারে

প্রকাশিত : ১০:৫৪ এএম, ১০ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪১ এএম, ১০ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

স্বাস্থ্যখাতে ভারতীয় সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে, দেশটির তুমুল জনপ্রিয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি ভূমিকা কখনওই সরকারি ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না। অথচ সরকার ক্রমান্বয়ে স্বাস্থ্যখাতকে বেসরকারি খাতে ঠেলে দিচ্ছে। এতে এই খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

সোমবার কলকাতায় এসে অমর্ত্য সেন বললেন, গত দু’বছর ধরে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভুল পথেই চলছে ভারত। যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি বিনিয়োগের ফলে অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত রোববার দিল্লিতে দেওয়া ভাষণে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, গত চার বছরে দেশ ভুল দিকে বিরাট লাফ দিয়েছে।

এদিকে আগের ভারতের সঙ্গে বর্তমান ভারতের অনেক ফারাক দেখতে পান এই অর্থনীতিবিদ। সে কথা স্মরণ করে অমর্ত্য বলেন, ‘চাকরি জীবন শুরুর সময় দেখতাম, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালের উপর ভরসা রাখতেন। বেসরকারি ক্ষেত্রে যা হত না, সরকারি হাসপাতালে সেটা হত। কিন্তু চাকরি জীবনের শেষে এসে ছবিটা উল্টে গেল।’

মোদি সরকারের তুমুল সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশকে গত চার বছরে ভুল দিকে নিয়ে গেছেন বর্তমান সরকার। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এই খাতে বরাদ্দ এতটাই কমিয়েছি যে, আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল,ভূটান ও মালদ্বীপের চেয়েও অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ দিন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর প্রেক্ষাগৃহে চিকিৎসক সমীরণ নন্দী, চিকিৎসক সঞ্জয় নাগরাল এবং কেশব দেশিরাজু সম্পাদিত ‘হিলার্স অর প্রিডেটরস— হেল্থকেয়ার করাপশন ইন ইন্ডিয়া’ বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কমে যাওয়া এবং বেসরকারি লগ্নি প্রসারের প্রসঙ্গ ওঠে।

সেন্ট্রাল ব্যুরো অব হেল্থ ইনটেলিজেন্স-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-র মাত্র ১ শতাংশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় হয়, যা নেপাল, ভুটান কিংবা মলদ্বীপের মতো দেশের চেয়েও কম। এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, এ দেশে প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্য অবহেলিত। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ভূমিকা, ওষুধ কোম্পানিগুলির দুর্নীতির পাশাপাশি এই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকার জিডিপি-র কতটা বিনিয়োগ করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা জরুরি। স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা কম বলেই জোরদার হয়েছে দুর্নীতি।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়াটা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রসঙ্গ ওঠে আলোচনায়। অমর্ত্য বলেন, চীন প্রথমে বিমায় গুরুত্ব দিলেও পরে এক সময় তা কমিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসে স্বাস্থ্যবিমায় সরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব। তখন ফের বিমায় বিনিয়োগ বাড়ায় চীন। দেখা যায়, দেশের উন্নতিতেও তার প্রভাব পড়ছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণগত মান বৃদ্ধিতে চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে আলোচনার উপরেও জোর দেন অমর্ত্য। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাথমিক স্তরে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে কথাবার্তার পরিসর ক্রমশই কমে যাচ্ছে। এটা একটা বড় মাপের সমস্যা।

এমজে/