ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জীবন যুদ্ধে হার না মানা মুকলেচুর

জবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১১:৩৩ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১৭ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৮ বুধবার

পৃথিবীতে সবাই সমান ভাগ্য নিয়ে জন্মায় না। কেউ সুখে বসবাস করেন আবার কাউকে সারা জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের জীবনের সংগ্রাম যেন শেষ হয় না। ভাগ্য তাদের পক্ষে কাজ করতে চায় বলেই এমন মানুষরা মনে করেন। তেমনি একজন হলেন মো. মুকলেচুর রহমান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সফলতার আশায় বুক বেধে পথ চেয়ে আছেন আজও। তিনি চোখে না দেখেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন।

তার পিতার মো. আবুল মুনসুর। মাতা মোছা. রাশিদা বেগম। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার ধলা ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি আড়াই বছর বয়সে অন্ধ সেটা বুঝতে পারে। তারপর তার জীবন স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক হয়ে গেলো। তখন তার মা জামালপুরে এবিসি অন্ধ স্কুলে ভর্তি করে দেয় কিন্তু তিনি এটা মেনে নিতে পারেনি। তিনি মনে প্রাণে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করে যান।

এভাবে তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে পড়েন। তখন তিনি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্ধ স্কুল ত্যাগ করে চলে আসেন। এবার জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য বাসে বাসে চকলেট বিক্রি করতে শুরু করেন। যার কিছু আয় করা অর্থ জমা হয়। তিনি এইবার পড়াশোনা করার জন্য গাজীপুর বিওপি স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হন।

গাজীপুরে পড়াশোনার সময় তাকে কোন বেতন দিতে হতো না। যার ফলে তার একটু চিন্তা কমে। স্কুল জীবনে সব থেকে বেশি সাহায্য করেছে তার বন্ধু নুহান। এছাড়া তার শিক্ষক, সহপাঠীরাও সব প্রকার সাহায্য করেছে। এভাবে তিনি মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.০৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

তারপরে তিনি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসি ভর্তি হোন। সেখানেও তার সহপাঠী, শিক্ষজরা সব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেছে। এভাবি তিনি এইচএসসি পরীক্ষাও সম্পন্ন করেন। তিনি মানবিক বিভাগপ জিপিএ-৪.৩০ পেয়ে কৃতকার্য হন।

এইবার স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু কোচিং করার কোন সামর্থ্য তার মোটেও ছিল না। এমন সময় হাজির হোন তার এক বান্ধুবী।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন বলে ইউসিসি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। তার বান্ধুবী কোচিং এর সিটগুলো কঠিন বলে বুঝতে পারতো না। তাই তার বান্ধুবী একসঙ্গে সিট পড়ার জন্য প্রস্তাব করে। এইভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি নেন।

সব প্রস্তুতি শেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ২৭৬তম মেধাক্রম হয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।
তিনি জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হলাম কিন্তু আর্থিকভাবে আমি বিপর্যস্ত হয়ে গেলাম। তবে সব কিছু পাশ কাটিয়ে "ক্ষুদ্র মেধার ক্ষুদ্র প্রয়াস" নামে গল্প কবিতার বই লিখলেন। এই বই বিক্রি করে কোনোভাবে চলতে থাকলেন।

কিছুদিন পরে ডাচবাংলা ব্যাংকের শিক্ষা বৃত্তি পেলেন। এরপর প্রতিমাসে ২০০০ টাকা করে পেতেন যা তার খরচের তুলনায় নগণ্য। তাই তিনি কিছু অর্থ আয় করার জন্য "দম্ভ"নামে একটা উপন্যাস লিখলেন। বাসে, ট্রেনে, বিভিন্ন দোকানে উপন্যাস বিক্রি করে পড়াশোনা শেষ করলেন।

পড়া শেষ করে ৭ বার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অতিরিক্ত সময় না থাকায় তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। এছাড়া বেসরকারি অনেক জায়গায় আবেদন করেছেন কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে বাদ দিয়ে দেয়। তিনি একটি চাকরির জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বলেছেন তবুও কোন সাড়া পাননি।

বর্তমানে তিনি "আমার জীবনী" নামের একটা বই লিখেছেন। প্রতিদিন তিনি গড়ে ১০-১৫ বই বিক্রি করেন যার প্রত্যেকটির মূল্য ১০০ টাকা।এভাবে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন।

তিনি গাজীপুর শিমুলতলি এটিআই গেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন। দোকানে বিকাশে টাকা লেনদেন, কম্পিউটারের কাজ, মোবাইলে ফ্ল্যাকসিলোড, বই বিক্রি ইত্যাদি কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

এসএইচ/