ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

রোহিঙ্গা সংকট: এখন যা করতে পারে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ২১ জুলাই ২০১৮ শনিবার

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে প্রসংশা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ৷ গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফর করছেন৷ সবাই বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে৷ কিন্তু ফিরিয়ে নেয়া শুরু হচ্ছে না৷

এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার৷ কিন্তু তারপর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে, সবাই সহানুভুতি দেখাচ্ছে, কিন্তু মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না৷ তাহলে কি বাংলাদেশে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি আছে বা ভিন্ন কোনো পথে যেতে হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমাধান হবে না্৷ আন্তর্জাতিক তৎপরতা দিয়েই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷ আসলে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে৷

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যা করা সম্ভব তার সবই করছে৷ এর কিছু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, কিছু পাচ্ছেন না৷ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের যা করা দরকার তার সবই করা হবে৷``

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান গানার উইগান্ড রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করতে ইইউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এজন্য এগিয়ে আসতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান৷

পরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে৷

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৯ সালের আগে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না৷ কারণ, আগামী বছর ওই দেশে জাতীয় নির্বাচন৷ সেখানে সামরিক বাহিনী বা সূচি`র পলিসি কী হবে সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ আসলে আমাদের ‘বড় ভাই` ভারত এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হওয়া পর্যন্ত সমাধান পাওয়া কঠিন৷ আবার চীন মিয়ানমারকে সাহায্য করছে৷ ফলে তারা সাহস পাচ্ছে৷ আমাদের যে চেষ্টা আছে, তাতেই ফল মিলবে বলে আমি আশাবাদী৷``

কয়েকদিন আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিঠির জবাব চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ৷ অথচ মিয়ানমার সেই চিঠি গ্রহণই করেনি৷ ওই সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট সমাধানে বেশি আগ্রহী৷ বাংলাদেশ যেহেতু রোম সংবিধিতে সই করেছে, সেহেতু আইসিসির চিঠির জবাব দেওয়ার এক ধরনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের ছিল৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যেসব তথ্য চেয়েছে, আমরা কেবল সেগুলোই তাদের দিয়েছি৷ বাংলাদেশ এখনও মনে করে, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকটের সমাধান সম্ভব৷``

এর আগে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমার সেনাদের নিষ্ঠুর নিপীড়নের বর্ণনা শোনেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম৷ রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা দেখে নিজেকে রোহিঙ্গাদের অবস্থানে দাঁড় করিয়ে হতবাক হয়ে পড়েন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে এসে জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখী হলাম৷`` রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে নিজ সন্তান ও নাতিদের মুখচ্ছবিও ভাসতে দেখেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব৷

এছাড়া তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এর্দোয়ান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷ রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে৷ এস ময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু৷ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাগুয়ারও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁরাও রোহিঙ্গাদের কাছে নির্যাতনের বর্ণণা শুনে আঁতকে ওঠেন৷ বাংলাদেশের প্রসংশা করেন, পাশে থাকার আশ্বাস দেন৷

এমন অনেক আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এর মধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছেন, গেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে৷ সবাই বলছে, দ্রুত তাঁদের ফেরত নেয়ার কথা৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার৷ বাংলাদেশের পক্ষে আর কী করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ড. সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান হবে না৷ এটা এতদিনে বোঝা গেছে৷ আর রোহিঙ্গা সমস্যা যে দীর্ঘমেয়াদি, সেটাও আমাদের জানা৷ এখন আইসিসির চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ, এটা ভালো দিক৷ এসব পথ দিয়েই সমাধানে আসতে হবে৷ কারণ, তারা রোহিঙ্গাদের শরণার্থীই বলছে না, গণহত্যাকে গণহত্যা বলছে না৷ ফলে তাদের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি৷ তাই আমাদের আন্তর্জাতিক পথেই যেতে হবে৷``

এমজে/