ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ৪ ১৪৩০

অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন কীর্তনখোলা-১০ এর যাত্রী

প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:১৯ এএম, ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার

অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন কীর্তনখোলা-১০ এর এক নারী যাত্রী। ছাঁদ থেকে চলন্ত ফ্যান খুলে গিয়ে পরে ঐ নারীর শরীরে। এছাড়াও যথাযথ গ্রাহক সেবা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বিলাসবহুল এই লঞ্চের বিষয়ে অসন্তোষ বাড়ছে যাত্রীদের মধ্যে। প্রায়ই আসা যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তির বেশ কয়েকটি অভিযোগে জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছে বিলাসবহুল এই লঞ্চটি।

রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মাঝে কীর্তনখোলা-১০ একটি বিলাসবহুল এবং দৃষ্টিনন্দন লঞ্চের উদাহরণ। যাত্রা শুরুর পর থেকেই যাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহলের কারণে বেশ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই লঞ্চটি। কিন্তু লঞ্চটিতে গ্রাহক বা যাত্রী সেবা এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

 

ফ্যান খুলে যাত্রীর শরীরে

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া এক লঞ্চের যাত্রী ছিলেন বরিশালের সেরনিয়াবাদ কলেজের এক নারী শিক্ষিকা (নাম গোপন রাখা হলো)। ৩৮১ নম্বর কেবিনে অবস্থানকালে প্রায় মধ্যরাতের দিকে হঠাতই দেয়াল থেকে চলন্ত ফ্যান খুলে পরে ঐ শিক্ষিকার শরীরে। অনেকটা ভাগ্যের জোরেই গতরাতে চলন্ত ফ্যানে জীবন হারানো থেকে বেঁচে যান ঐ নারী যাত্রী।

মধ্যরাতের এমন ঘটনায় লঞ্চটিতে আতংক ছড়িয়ে পরে। আজ শনিবার সকালে বরিশাল টার্মিনালে আসার পর এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় লঞ্চ যাত্রীর সাথে।

এসময় ঐ শিক্ষিকা বলেন, “আমরা যখন কেবিন বুঝে নেই তখনই ফ্যানের গায়ে একটা পোড়া দাগের মতো দেখিলাম। তখন এটি কেবিন বয়ের নজরে আনলে সে এটিকে ‘তেমন কোন বিষয় নয়’ বলে দাবি করে। তার কথায় আমরা তখন আশ্বস্ত হই। কিন্তু মাঝরাতের দিকে ফ্যানটি চলন্ত অবস্থায় খুলে আমার শরীরে পরে। আমি সজাগ ছিলাম বলে নিজেকে দ্রুত সামলে নেই”।

ঐ কেবিনের পাশের আরেকটি কেবিনের এক যাত্রী জানায় যে, দুই সপ্তাহ আগে তিনিও এই ফ্যানের বিষয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেলেন। শেষবার বরিশাল থেকে ঢাকা যাবার পথে এই কেবিনেই (৩৮১) ছিলেন তিনি। তবে তাঁর অভিযোগ আমলে নিয়ে শেষপর্যন্ত ফ্যানটি মেরামত না করায় এই দূর্ঘটনা বলে অভিমত ঐ যাত্রীর।

 

যাত্রী আটকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

যাত্রীদের সাথে এই প্রতিবেদককে কথা বলতে থেকে তৃতীয় তলার একটি ডাবল কেবিন থেকে এগিয়ে আসেন আরও এক নারী যাত্রী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাদের সাথে দুইটি শিশু থাকায় তাদেরকে একরকম ‘আটকে’ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে লঞ্চের ভাড়া আদায়ের দায়িত্বে থাকা লোকজন।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ নারী যাত্রী বলেন, “আমরা একটি ডাবল কেবিন নেই। আমাদের সাথে সাত-নয় বছর বয়সী দুই শিশু ছিল। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর বয়সের নিচের শিশুরা বিনামূল্যেই লঞ্চে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু এই লঞ্চের লোকজন আমাদের কাছ থেকে দুই শিশুর জন্য ২০০ টাকা আদায় করে। আমরা প্রতিবাদ করলে দূর্ব্যবহার এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় আমাদের সাথে। পরে টাকা পরিশোধ করলেও তার কোন রশিদও আমাদেরকে তারা দেয়নি”।

 

সবকিছুতে মূল্য অতিরিক্ত

লঞ্চটিতে থাকা ক্যান্টিন এবং দোকানে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নিয়েও আছে অসন্তোষ। সরেজমিনে দেখা যায়, চিপস, বিস্কুট, কফির প্যাকেট, জুসসহ বিভিন্ন পণ্যের গায়ে লেখা নির্ধারিত পণ্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।

একটি চিপসের প্যাকেটে মূল্য ১৫টাকা লেখা হলেও সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। ১৫ টাকার কফির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়াও লঞ্চ থেকে যাত্রীদের কেবিনে সরবরাহ করা খাবারের মান ও দাম নিয়েও আছে অভিযোগ। যাত্রীদের বক্তব্য হলো যে, এই ক্যান্টিন বা হোটেল তদারকিতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই। আর তাতেই এখানে থাকা লোকগুলো সুযোগ পাচ্ছে।

ক্যান্টিন সম্পর্কে লঞ্চের এক যাত্রী এবং ঢাকার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রনি হাসান বলেন, “বন্ধের দিনগুলোতে ঢাকা থেকে বাড়ি আসি। ব্যাচেলর থাকি তাই রান্না করে খাবার নিয়ে আসতে পারি না। লঞ্চে সেজন্য এই দোকান আর ক্যান্টিন থেকে রাতে খাবার কিনে খাই। কিন্তু এগুলোতে বাইরের থেকে অনেক বেশি মূল্য রাখা হয়। একটা ১৫টাকার চিপস ২০ টাকা হলেও মানা যায়। এতো আকাশছোঁইয়া দাম। কিন্তু ২৫টাকা হলে তা কীভাবে মানা যায়?”

 

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

যাত্রী এসব অভিযোগ এবং লঞ্চের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে লঞ্চের সুপারভাইজার জন রায় ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “ফ্যান খুলে পরার ঘটনা আমি জানি। আমার ইলেকট্রিশিয়ান গিয়ে সাথে সাথেই তা ঠিক করে দিয়ে আসে। কিন্তু তাতে কারও কোন ক্ষতি হয়নি। আসলে সে রাতে (গতরাতে) নদী বেশ উত্তাল ছিল। তাই লঞ্চে বেশি জার্কিং হয়। এতেই ফ্যানটা খুলে যায়”।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা যাত্রীদের সাথে দুর্বব্যবহার করতে চাই না। তবে অনেক সময় যাত্রীদের দিক থেকেই আগে খারাপ ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। এতে অনেকসময় কেবিন বয়েরা ক্ষীপ্ত হয়ে দুই একটা কথা বলে। তবে এটাও ঠিক না। এমন কিছুই হয়তো সেরাতে হয়েছে। এর জন্য আমরা দুঃখিত। তবে আমাদের লঞ্চের জনপ্রিয়তা বেশি হওয়ায় অন্য লঞ্চ মালিকেরা অনেক সময় যাত্রী বেশে তাদের লোক পাঠিয়ে লঞ্চে ঝামেলা তৈরি করেন। পরে আমাদের লঞ্চের নামে বদনাম রটায়। আমাদের দিক থেকে কোন ধরনের ত্রুটি নেই”।

প্রসঙ্গত, লঞ্চটির বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও সাম্প্রতিক সময়ে এক কেবিন যাত্রীর বড় অংকের টাকা চুরির মতো ঘটনাও ঘটে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে। এ নিয়ে সংবাদ পত্রে খবর প্রকাশসহ থানা-পুলিশও হয়। এর প্রেক্ষিতে ঐ যাত্রীর টাকা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।  

  

//এস এইচ এস//