ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জনশক্তি রফতানি কমলেও বাড়ছে রেমিট্যান্স   

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ১২:০৯ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:৪৫ এএম, ১ আগস্ট ২০১৮ বুধবার

 

দেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের মূল উৎস্য জনশক্তি রফতানি কমেছে। জনশক্তি রফতানি কমলেও রেমিট্যান্সের প্র্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি  রফতানি কমেছে ২৫ শতাংশ। আর সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জনশক্তি রফতানি কমলেও রেমিট্যান্স বাড়ার অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশে ব্যাংকের গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়িতে কমেছে মোবাইলে হুন্ডি ব্যবসা। হুন্ডিতে কমার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে ঝুঁকেছে অনেক প্রবাসী।এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, হুন্ডি প্রতিরোধে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে, এর প্রভাবেও রেমিটেন্স বাড়ছে। ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আনার চেষ্টা করছে। সে কারণেও রেমিটেন্স বেড়েছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীদের টাকা পাঠানো সবসময় একটু বাড়ে। যার প্রভাব আমরা রেমিট্যান্সে দেখতে পায়।’

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ২৫০ জন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। আগের বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৪৯০ জনশক্তি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ থেকে যত জনশক্তি রফতানি হয় তার বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দুই লাখ ৫১ হাজার ৮৮০ জনশক্তি রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৮২৩ জন। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৬ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর যুগ্ম মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি সৌদি আরব সেদেশে ১২ ধরনের কাজে বিদেশিদের নিষিদ্ধ করেছে। এতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে আগের মত কম দক্ষ জনশক্তি রফতানিও কমেছে। তবে জনশক্তি রফতানি কমার এ হার বছর শেষে থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বছরের শেষের দিকে জনশক্তি রফতানি আরো বাড়বে।   

এদিকে জনশক্তি রফতানি কমলেও প্রবাসী আয় অব্যাহত ভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে এসেছিল এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাসীরা ৮০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এসেছে ৪৬৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গতবছরের একই সময়ে এসেছিল ৩৭৪ কোটি ১১ লাখ ডলার। অর্থাত্ মধ্যপ্রাচ্য থেকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।  

প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে সাতটিই মধ্যপ্রাচ্যের। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদিআরব থেকে। সৌদি প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৫৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ১৭ শতাংশেরও বেশি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম      মোয়াজ্জেম বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিট্যান্স আনতে বেশি উৎসাহী হচ্ছে।

এছাড়া জনশক্তি রফতানি কিছুটা কমার জন্য সৌদি আরবের কিছু নেতিবাচক দিক দায়ী। আমাদের নারী শ্রমিকরা সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরণের আতঙ্কে পড়ে গেছে। প্রাই নারীদের নানাবিধ হয়রানির কথা শোনা যায়। যা পুরুষ শ্রমিকদেরও বিদেশ যেতে নিরুৎসাহিত করে।

আরকে//এসি