ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বেশি বয়সে সন্তান জন্মদানে যে সমস্যা হতে পারে

প্রকাশিত : ১০:০৮ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:২২ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার

ডেনিশ অভিনেত্রী ব্রিগিটা নিলসন ৫৪ বছর বয়সে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু জুন মাসে পঞ্চম সন্তান ফ্রিডার জন্মদানের পর থেকেই তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিষয়টি একটি বিতর্ককে জোরালো করেছে। আর তা হল বেশি বয়সে সন্তান জন্মদান।

ব্রিগিটা নিলসন তার সমালোচনার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক মেয়েরা ভাবে হে ঈশ্বর আমার তো অনেক বয়স। কিন্তু ভাবুন তো কত পুরুষ ৬০ অথবা ৭০ এর কোঠায় এসে বাবা হয়েছেন?’

ব্রিগিটা নিলসন বলছেন, অন্য কেউ যদি মা হওয়ার বয়স সম্পর্কে ভিন্ন কোনও মত পোষণ করেন তিনি তা সম্মান করেন। তবে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এটা তার জীবন। তার সিদ্ধান্ত তার নিজের।

২০০৬ সালে বয়স চল্লিশ হওয়ার পর ব্রিগিটা নিলসন তার ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেছিলেন। তাকে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন নিজের ডিম্বাণু দিয়ে তার আবার মা হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ। কিন্তু প্রজনন সহায়তা নিয়ে ১৪ বছর চেষ্টার পর তিনি সফল হয়েছেন। তার বর্তমান স্বামী মাতিয়া ডেসি`র সঙ্গে এটি তার প্রথম সন্তান। তবে আগের বৈবাহিক সম্পর্কে তার আরও চারটি ছেলে রয়েছে।

কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক আসলে কোথায়?

বিশ্বব্যাপী নারীদের গর্ভধারণের বয়স বাড়ছে। ১৯৯০ সালে চল্লিশ বছর বয়সে নারীদের গর্ভধারণের যে হার ছিল এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্রিটেনে পরিসংখ্যান বিভাগের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সন্তান জন্মদানে সক্ষম সব বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের হার কমেছে। কিন্তু চল্লিশ এর কোঠায় থাকা নারীদের ক্ষেত্রে তা উল্টো ২ শতাংশ বেড়েছে।

প্রজনন সহায়তা দেয় এমন ক্লিনিকগুলো বলছে, তাদের কাছে চল্লিশ ও পঞ্চাশের কোঠায় থাকা নারীরা আগের থেকে অনেক বেশি আসছেন।

এ রকম সহায়তা দেওয়া সংস্থা কেয়ার ফার্টিলিটি গ্রুপের ডঃ জেনি এলসন বলছেন, এই কারণে শুধু বেশি বয়সী নারীদের জন্য তাদের আলাদা তথ্য সম্বলিত নির্দেশিকা তৈরি করতে হচ্ছে।

তিনি বলছেন, অনেক বয়স্ক নারীরা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ছে।

তিনি বলছেন, ‘বয়স পঞ্চাশের কোঠায় হলে ডায়াবেটিস, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল বা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই আমাদের এসব নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে। অনেক বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, ৩০ এর কোঠায় পৌঁছানোর পর থেকে মায়েদের প্রি-একলামসিয়া, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

বেশি বয়সের ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর জিনগত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। পঞ্চাশের কোঠায় বুকের দুধ খাওয়াতে সাধারণত মায়েদের সমস্যা হয় না।

তবে এই বয়সে সন্তান জন্মদানের পর মায়েদের মেনোপজ আরও দ্রুত অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এতে করে নারীরা হরমোনের নানা ধরনের ওঠানামা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরতে পারেন।

বেশি বয়সে মা হওয়ার আরও একটি সমস্যা হল তার বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের সহায়তা কমে যাওয়া। বয়স কম হলে মায়েদের সহায়তায় যেভাবে সবাই এগিয়ে আসে, বয়স বেশি হলে সেটি হয় না।

লন্ডন উইমেনস ক্লিনিকের ডঃ যায়নেপ গুরতিন বলছেন, ‘সব মায়েদেরই কোনও না কোনও ধরনের সহায়তা দরকার হয়। কিন্তু বেশি বয়সী মায়েদের জন্য সে রকম সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই’।

তিনি আরও বলছেন, বেশি বয়সে যারা বাবা হচ্ছেন তাদের তুলনায় বেশি বয়সী মায়েরা বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন।

ডঃ যায়নেপ গুরতিন উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ‘অভিনেত্রী ব্রিগিটা নিলসন সমালোচনার মুখে পড়েছেন কিন্তু হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনির ক্ষেত্রে কিন্তু কেউ এতটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তিনি কিন্তু ৫৬ বছর বয়সে যমজ সন্তানের বাবা হয়েছেন’।

তিনি বলছেন, নারীরা যদি নিজের পেশা বা অন্য কোনও কারণে মাতৃত্বকে বিলম্বিত করেন তাহলে তাদের অনেক ক্ষেত্রে স্বার্থপর বলে মনে করা হয়। বাবাদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয় না। তবে নারীরা আজকাল এসবের তোয়াক্কা করছেন না।

তিনি যুক্তরাজ্যের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে ধারনা দিয়ে বলছেন অল্প বয়সী নারীরা আগের থেকে অনেক বেশি ডিম্বাণু সংরক্ষণ করছেন।

সূত্র: বিবিসি

একে//