চাপ বেড়েছে ট্রেনে
অষ্টম দিনেও বাসশূন্য রাজধানীর সড়ক
প্রকাশিত : ১২:০০ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:০২ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৮ রবিবার
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট অষ্টম দিনে গড়িয়েছে। আজও রাজধানীর কোনো রুটেই গণপরিবহন চলছে না। ফলে দুদিনের ছুটি শেষে আজ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ।
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়েও গণপরিবহন না থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক-বীমায় কর্মরত হাজার হাজার মানুষকে।
তবে সড়কে কেবল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাস চলাচল করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। এ ছাড়া প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় দেখা গেছে। বাস না পেয়ে হাজারো মানুষ হেঁটেই নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
রাজধানীর রোকেয়া সরণি, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, প্রগতি সরণি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার ঘুরে বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো বাস দেখা যায়নি।
সকাল ৯টার দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোর থেকেই মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগের সড়কগুলোতে কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না।
পরিবহন সংকটের এই সুযোগ রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য রিকশা। আর এসুযোগ ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। আর সিএনজি অটো থাকলেও ভাড়া হাকছেন তিনগুণ।
আসাদগেট এলাকার বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা মীর মাহমুদ বলেন, ‘আমার অফিসে পল্টনে, গত কয়েক দিন ধরে ১৫ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা খরচ করে যাচ্ছি। একদিন পুরো পথ হেঁটে এসেছি। এই দুর্ভোগ কবে কমবে। মানুষের দুর্ভোগ আর না বাড়িয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।
মগবাজারের বাসিন্দা হাসান আল মামুন জানান, ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও কোনো পরিবহন পাননি তিনি। তাকে একটি জরুরী কাজে যেতে হবে মতিঝিল।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে ট্রেনে বেড়েছে ভিড়। পাশাপাশি লঞ্চেও চাপ বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে নিরাপত্তার কথা বলে শুক্রবার সকাল থেকে বাস চালানো বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিকরা। জরুরি কাজে যাদের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন তাদের ভরসা শুধুই ট্রেন। ঢাকার বাইরে থেকে রাজধানীতে আসা বা রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার পাশাপাশি টঙ্গী ও উত্তরা থেকেও প্রচুর যাত্রী ট্রেনে চড়ে কমলাপুরে আসা-যাওয়া করছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক বেশি যাত্রী ট্রেনে। ঈদ মওসুমের মতো উপচে পড়া ভিড়।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসেন ফজলুর রহমান। তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে তিনি ঢাকায় এসেছেন। রাস্তায় কোনো বাস নেই, তাই ট্রেনে আসতে হলো। টাঙ্গাইল থেকে ট্রেনের প্রতিটি বগি যাত্রীতে ঠাসা। জয়দেবপুরে যাত্রীর ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। তারপর কষ্ট করে ঢাকা পর্যন্ত আসতে পারলাম।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
এসএ/