ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গার্মেন্টে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে ১৫ শতাংশ

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০১:১৮ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৫০ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৮ রবিবার

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্পে  ক্রমেই কমেছে নারীর কর্মসংস্থান। প্রায় ৪৪ লাখ নারী শ্রমিকের রক্তে ও ঘামে গড়ে ওঠা এ শিল্পে এখন লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যেখানে নারীর তুলনায় পুরুষ হয়ে উঠছে বেশি উপযোগি। কিন্তু বেতন বৈষম্য রয়েছে আগের মতোই। ফলে এক সময়ে যে শিল্পে নারীর কর্মসংস্থান ছিল ৮০ শতাংশ। এখন তা কমে ৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজসহ (বিআইডিএস) বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন গবেষক ও পোশাক শিল্প মালিকরা। কারণ হিসেবে পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, নারীরা একদিকে পোশাক শিল্পের প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। যতটা দক্ষতা পুরুষ দেখাতে পারছেন। অন্যদিকে পোশাক শিল্পে দীর্ঘদিন কাজ করা নারীরা স্বাবলম্বি হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। নিজস্ব উদ্যোগে কুটির শিল্প বা ছোট  পরিসরের ব্যবসা বেঁছে নিচ্ছেন।

সম্প্রতি বিআইডিএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে,  কয়েক বছর আগেও পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের ৮০ শতাংশই ছিল নারী, বর্তমানে যা ৬৫ শতাংশের বেশি না।

সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, পোশাক খাতে নারীর কর্মসংস্থান আগে ৮০ শতাংশ ছিল। প্রায় সব গবেষণাই এ কথা বলে। তবে তাদের কর্মসংস্থান দিনে দিনে কমে আসছে। কিন্তু এ কমার হার নিয়ে অনেক তথ্য আছে। কেউ বলছে কমে গিয়ে ৮০ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কেউ বলছেন ৬২ শতাংশে, কেউবা বলছে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তথ্য যাই হোক, কমে আসছে এ ব্যাপারে সন্দেহ নাই।

তবে এ নারী শ্রমিক যে কমে যাচ্ছে এটা  নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। এদের অনেকে শ্রেণীভিত্তিক উদ্যোক্তা হচ্ছে।  যে এলাকায় যে জিনিসের উৎপাদন ভালো হয়। তারা গ্রামে ফিরে সেসব জিনিস তৈরির চেষ্টা করছে। এটা তাদের স্বাবলম্বী হতে আরো বেশি সহায়তা করছে।

কিন্তু একটা বিষয় এখানে জোর দিতে হবে, সেটা হলো পোশাক শ্রমিকদের দক্ষতা। আমাদের দেশের পোশাক শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পোশাক শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ কমার বিষয়টি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ— (সিপিডি)’র গবেষণায়ও উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণা বলছে, এক সময়ে যে শিল্পের কর্মীদের ৮০ ভাগই ছিল নারী, এখন তাদের অংশগ্রহণ ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমেছে। সিপিডি দেশের ১৯৩টি তৈরি পোশাকশিল্প কারখানার দুই হাজার শ্রমিকের মধ্যে জরিপ চালিয়ে বলেছে, এ খাতে বিগত ২০১২ থেকে ২০১৬ চার বছরে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। পুরুষ নারীদের মজুরির ক্ষেত্রে এ শিল্পে গড়ে তিন শতাংশ বেতন বৈষম্য রয়েছে। পুরুষদের বেতন গড়ে সাত হাজার ২৭০ টাকা হলেও নারীদের সাত হাজার ৫৮ টাকা।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছরে পোশাকশিল্পে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যা ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছিল ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সে হিসাবে চার বছরে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ৭১ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে।

সিপিডির সম্মন্বিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পোশাক শিল্পে সামগ্রিকভাবে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এবং নারী শ্রমিকরা পিছিয়ে আছে। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকখাতের সামাজিকভাবে অগ্রগতি হয়েছে। ২০ শতাংশ পোশাক কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, পোশাক  শ্রমিকদের অনেকেই কয়েক বছর কাজ করে কিছু টাকা গুছিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। সেখানে তারা  নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করার  চেষ্টা করছে। ছোট ছোট ব্যবসায় তাদের টাকা বিনিয়োগ করছে। বিভিন্ন ধরণের কুটির শিল্পেও তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা ভালো দিক।

 বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, আমাদের দেশের পোশাক শিল্পে আগের তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ঘটেছে। যেখানে ভারী ভারী যন্ত্রপাতির সন্নিবেশ হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনায় নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি দক্ষতা দেখাচ্ছে। ফলে সেই জায়গাগুলোতে নারীর কর্মসংস্থান কমছে।

তবে নারীর কর্মসংস্থানের এ হ্রাসকে গবেষকরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও নারীর বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি হচ্ছে কি-না সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। শিল্পটিতে কর্মরত নারীদের যথাযথ দক্ষতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান এ বিষয়ে বলেন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও ভালো মজুরি দিয়ে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাদের মুনাফার ভাগ দিতে হবে। সরাসরি সুফল পেলে শ্রমিকেরা কারখানাটিকে নিজের মনে করবেন। তখন টেকসই উন্নয়ন হবে।

/ এআর /