ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

প্যারাসিটামলে কী ক্ষতি জানেন?

প্রকাশিত : ১১:৫৪ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৪৪ এএম, ১৯ আগস্ট ২০১৮ রবিবার

জ্বর কিংবা মাথা ব্যথা হলেই আমরা সাধারণত ওষুধ সেবনে ব্যস্ত হয়ে পরি। সারা বছরে কোন না কোন সময়ে এমন অসুখ-বিসুখের সঙ্গে আমাদের প্রায় মুখোমুখি হতে হয়। এদিকে আমরাও গা গরম হতে না হতেই দ্রুত জ্বরের ওষুধ খাচ্ছি।

কখনও ভাবেছেন, প্যারাসিটামলের সঙ্গে ব্যথার ওষুধ খেলে জ্বর কি কমে? এর ফলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সামান্য জ্বর হলেই ওষুধ খাওয়ার কোনও দরকারই নেই। আবার অন্য দিকে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ নিতে পারে অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে সাবধান করলেন চিকিৎসকরা।

মেঘ, বৃষ্টি, রোদ এমন আবহাওয়ায় অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বাড়তেই থাকে। কেননা, ভ্যাপসা গরম আর রাতের ঠাণ্ডা, মশা ও জীবাণুদের জন্য একেবারে আদর্শ আবহাওয়া। তাই শিশু থেকে বয়স্ক, যাঁদেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম তাদের এই সময় জ্বর, সর্দি, হাঁচির প্রকোপ বাড়ে।

অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে না বাড়তেই জ্বরের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রির বেশি না হলে জ্বরের ওষুধ না খাওয়াই ভালো।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রথম প্রকাশ হচ্ছে জ্বর

জ্বর কোন অসুখ নয়, উপসর্গ। শরীরে কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর এই কারনেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনকার আবহাওয়ায় জ্বরের প্রবণতা বাড়ে।‘এক্সট্রিম এজ গ্রুপ’ অর্থাৎ শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে জ্বরের ঝুঁকি বেশি।

এ ছাড়া অন্যান্য ক্রনিক কিডনির অসুখ, অ্যানিমিয়াসহ নানা রোগ আছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল বলে জ্বরের ঝুঁকি বেশি। রোজকার জীবন যাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে জীবন চালালে ইমিউনিটি সিস্টেমকে জোরদার করা যায়। তাহলেই ঘন ঘন জ্বর জনিত ঝুঁকি কমবে।

জ্বর হলেও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে

অনেকের ধারণা শুধুমাত্র ডায়রিয়া হলে ওআরএস দিতে হয় ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা বাড়লেও শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়। তাই জ্বরে লিকুইড ডায়েটের ওপর জোর দিতে হবে।বেশি পানি খেলে অনেক সময় বমি পায়, তাই অল্প অল্প করে বারে বারে পানি দিতে হবে। একই সঙ্গে স্যুপ, ফলের রস, সরবত, দইয়ের ঘোল বা গরম দুধ, ডাল এই ধরণের খাবার খেলে আর ডিহাইড্রেশনের ভয় থাকে না। প্রসঙ্গত, কনকনে ঠাণ্ডা খাবার না খেলেই হল, দই বা কলা খেলে ঠান্ডা লেগে জ্বর বাড়ে না। কাজেই এই ভুল ধারণা ভাঙুন।

জ্বর এলেই ওষুধ খেয়ে স্কুল বা অফিসে যাবেন না

আজকাল সবাই ব্যস্ত। তাই অসুখ-বিসুখ নিয়েও কাজ করে যেতে হয়। জ্বর হলে মায়েরা বাচ্চাদের ওষুধ খাইয়ে স্কুলে পাঠান। এমন অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইনফ্লুয়েঞ্জার সবচেয়ে বড় ওষুধ বিশ্রাম আর পানীয় খাবার। তাই দু’এক দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিলে ভালো হয়। তাপমাত্রা অল্প বাড়ুক অথবা অত্যধিক সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মাথাব্যথাসহ শরীরজুড়ে ব্যথার প্রবণতা থাকে। 

সাধারণ জ্বর হলে গা হাত পা ব্যথা কমাতে অনেকেই আইব্রুফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খান। কিন্তু প্রত্যেক বছর এই সময় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা যায়। এমন সময় এই ধরনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। এই ধরণের ওষুধ থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।

ম‌শারি টাঙানোর অভ্যাস তৈরি করে রাশ টানুন

ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া হলে?

তিন দিন হয়ে গেলেও যদি জ্বর না কমে, তা হলে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট টেস্ট ও এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিৎ। ভাইরাস জ্বর হলে দু’তিন দিনের মধ্যেই রোগীর কষ্ট কমে যায়। তবে রোগী যদি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, কষ্ট বাড়ে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল ও বমি দেখা দিতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।

মশার সঙ্গে আড়ি

শহরে মশারি ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রভাব বাড়ার এটা এক অন্যতম কারণ। তবে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন মশা দমন করা। নিজেদের বাড়িতে তো বটেই, আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেখলে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে, যে সব অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেই অঞ্চলের পরিবেশের দিকে নজর রাখুন। সরকারের একার পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশক নিধন করা সম্ভব নয়। আর এই জন্য নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশার বংশ বিস্তার বন্ধ না করলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো কঠিন হয়ে পরবে । মশার লার্ভা দেখলেই তা ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা ভীষণভাবে জরুরি।

আমরা প্রত্যেকে যদি এই ব্যাপারে সজাগ থাকি তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিকেল হলেই বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলে মশার হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে। আর মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো বাধ্যতামূলক। তবেই ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। আর ভাইরাস জ্বর রুখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললেই আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন।

 

ত্যথসূত্র:  আনন্দবাজার।

কেআই/ এসএইচ/