ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

এক যুগ পরপর ফোটে যে ফুল

প্রকাশিত : ১১:১১ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার

ফুলের সুভাস নিতে কে না চায়? ফুলের সৌন্দর্যে সবাই মোহিত। এটি যে ভালোবাসার প্রতীক। কিন্তু জানেন কি ফুল নিয়ে অদ্ভূত সব কাণ্ডও রয়েছে।

এমন একটি ফুল আছে যেটি প্রতি ১২ বছর পরপর ফোটে। কোনো কোনো প্রজাতি পরিস্ফুটিত হতে ১৬ বছর সময়ও লেগে যায়। ফুলটির নাম নীলকুরিঞ্জি। এটি নীলরঙা। এই অদ্ভূত ফুলটি ফোটে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায়। ওই পর্বতমালাটিকে নীলকুরিঞ্জির রাজ্যও বলা যায়।

ফুলটি দেখতে অনেকটা ঘণ্টার মতো। সাধারণত ফুলগুলো থোকায় থোকায় ফোটে। মাইলের পর মাইল যখন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, দেখে মনে হয়, কে যেন নীল-বেগুনি রঙের গালিচা পেতে দিয়েছে।

প্রায় আগাছার মতোই এতগুলো বছর ফুলের গাছগুলো নিজের মতো করে বাঁচে-মরে। আবার নতুন করে পাতা গজায়। প্রকৃতির খেয়ালে নিজের মতো করেই বেড়ে ওঠে। কিন্তু যেই ফুলের সময় আসে, অমনি বনের চেহারাটাই পাল্টাতে থাকে।

মনে হয়, কেউ যেন তুলি দিয়ে ক্যানভাসে নীল রঙের ফুলগুলো পরপর এঁকে চলেছেন। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত রং বদলাতে থাকে। কুঁড়ি থেকে ধীরে ধীরে এই ফুল যখন ফুটতে থাকে, তখন নীল থেকে নীলচে-বেগুনি ও সবশেষে ফিকে বেগুনি রং ধারণ করে। ফুলের এমন ঐশ্বরিক পরিবর্তন দেখার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় লেগে যায় এ উপত্যকায়।

গোটা পর্বত ঢাকা পড়ে এক আশ্চর্য নীল গালিচায়। এ ফুল প্রকৃতির এক বিস্ময়। সারা বছর তো নয়ই, এমনকি প্রতি বছরের কোনো বিশেষ সময়ও এই ফুল ফোটে না। ১২ বছর পরপর ফোটে এ ফুল। এ এলাকার আদিবাসীদের কাছে নীলকুরিঞ্জি শুভবার্তার প্রতীক। এর বৈজ্ঞানিক নাম স্ট্রোবিল্যান্থেস কুনথিয়ানা।

এক যুগ পরপর ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের নীলগিরি পাহাড়ে বেশি পাওয়া যায় নীলকুরিঞ্জি ফুলটি। স্থানীয়দের কাছে এটি কুরুঞ্জি নামেও পরিচিত। কেউ হঠাৎ ফুলটি দেখলে তেমন কোনো বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে না।

নীলকুরিঞ্জি ফুল ফুটলে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকায় মৌমাছিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের আধিক্য বহু গুণ বেড়ে যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও ভূবিজ্ঞানীদের মতে, নীলকুরিঞ্জির বৈচিত্র্যময় রং, মিষ্টি গন্ধ ও মধু কীটপতঙ্গদের প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।

তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের আশপাশে এ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। মুন্নার জেলার নীলগিরি পাহাড়েই সবচেয়ে বেশি ফোটে এ ফুল। শোনা যায়, নীলগিরি পাহাড়ের নামই হয়েছে এই ফুল থেকে। ২০০৬ সালে এমনই নীল রঙের ফুলে ঢেকে গিয়েছিল নীলগিরি। চলতি বছরে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকা ফের একবার ঢেকে গেছে নীলকুরিঞ্জি ফুলে।

প্রায় ২৫০ প্রজাতির হয়ে থাকে নীলকুরিঞ্জি ফুল। এর মধ্যে শুধু ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ৪৬টির মতো প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। ১ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতার পাহাড়ই এই ফুল ফোটার আদর্শ স্থান বলে প্রকৃতিবিদরা মনে করেন।

গাছগুলোর দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রায় প্রজাতির ক্ষেত্রে এই ফুল ফোটে প্রতি ১২ বছরে মাত্র একবার। কয়েকটি প্রজাতির বেলায় এই ফুল ফুটতে ১৬ বছরও লেগে যায়। সাধারণত জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ ফুল ফোটার আদর্শ সময়।

সূত্র: ডেইলি মেইল।

/ এআর /