ঢাকা, রবিবার   ২৬ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১২ ১৪৩১

সার্থক ফিচার লিখার নিয়ম কী? জেনে নিন!

জুবাইর উদ্দিন, চ.বি.

প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার

একটি সার্থক ফিচার লেখার ক্ষেত্রে বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্যে ৬টি পদ্ধতি বহুল আলোচিত। যা ‘ষড়মাত্রিক নীতি’ নামে পরিচিত। এগুলো কোনও পদ্ধতি নয়। তবুও এগুলো পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত। নিন্মে আলোচনা করা হলো-

দৃষ্টি আকর্ষণ

একটি ফিচারের প্রথম দিকে ব্যবহৃত শব্দাবলী কিংবা বাক্য পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এমন একটি শিরোনাম হবে যা দেখেই পাঠক থমকে যাবেন। পাঠকের দৃষ্টিতে একটি দৃশ্য কল্পনায় চলে আসতে হবে। এমন হতে হবে যেন কোন পথচারীর পার্শ্ববর্তী লোক ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোনোর দৃশ্য দেখে যেভাবে আঁতকে উঠে। ঠিক সেভাবে! এক্ষেত্রে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করা হবে। সেই সঙ্গে পাঠককে  প্রলুব্ধ করে তুলতে হবে। ফিচারের শিরোনামটি হবে তীরের মত। কারো চোখে গিয়ে পড়লে তার আর নিস্তার নেই। পাঠক অবশ্যই বাধ্য হবেন ফিচারটি পড়তে।

মনোযোগ ধরে রাখা

ফিচারের সূচনা পড়তে পড়তেই পাঠক হারিয়ে যাবেন অজানা এক অনুভূতিতে। যত পড়বেন ততই ভালো লাগবে আর চোখের সামনে ভাসবে পঠিত তথ্যগুলোর বাস্তব দৃশ্য।পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে এই স্তরে নতুন তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। এমন সব তথ্যাদি উপস্থাপন করতে হবে যা পাঠকের জানা নেই।

এছাড়া ফিচারের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট গুণ হলো তুলনা করা। তুলনার মাধ্যমে একটি বাস্তবতাকে পাঠকের কল্পনায় তুলে ধরা যায়।

‘পেঁজা তুলোর মেঘ জমে আছে গাছের ডালে। হাত বাড়াতেই নতুন বরফ। এ হলো সাজেক ভেলী’

এ সময় পাঠককে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় যার পাশ্ববর্তী পথচারী ছুরিকাঘাতে আহত। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোনোর পথ বন্ধ করতে ও অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে যে মনোযোগের সঙ্গে ব্যক্তি ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আগ্রহ জাগানো

ফিচারের সূচনা পড়তে পড়তেই পাঠক ফিচারের বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। এই ধারণা পেয়েই যেন পাঠকের তৃপ্তি না মিটে। ফিচার লেখককে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে হবে-

‘শেষ হয়েও হলোনা শেষ’

সূচনার ক্ষেত্রে এমন তথ্য উপস্থাপন করতে হবে যা পাঠকের আগ্রহকে আরও বৃদ্ধি করে থাকে। পাঠকের অবস্থা ঐ অ্যাম্বুলেন্স সন্ধানী ব্যক্তির মত হবে যার পাশ্ববর্তী লোক ছুরিকাঘাতে আহত। হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েই তার আগ্রহ শেষ হবেনা। বরং ব্যক্তি জানতে চাইবে ‘কী কারণে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।’

এ ক্ষেত্রে পাঠকের সামনে এমন তথ্য উপস্থাপন করতে হবে যা পাঠকের মনে আরও প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়। পাঠক আরও জানতে চাইবে।পাঠকের কৌতুহল শতগুণ বৃদ্ধি পাবে।

আস্থা প্রদান

স্বাভাবিকভাবেই ফিচারে কল্পনা ও সাদৃশ্য ব্যবহৃত হয়। তবে এই কল্পনা ও সাদৃশ্যের মাঝে মাত্রা রাখতে হবে।এই কল্পনা যেন ‘আলাদীনের চেরাগের মত’ কিংবা ‘হ্যারি পটারের গল্পের মত হয়ে না যায়। কেননা এতে পাঠক বিনোদন পেলেও ফিচারটির মূল উদ্দেশ্য বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

একটি ফিচার পাঠের পর পাঠকের অবশ্যই ওই স্থান দেখার  প্রতি একটি টান কাজ করবে। কল্পনা ও সাদৃশ্যই পারে একমাত্র ওই টান সৃষ্টি করতে। যদি অতি কল্পনা ও সাদৃশ্য কমানো প্রয়োজন হয় তবে যথাসময়ে কিংবা ফিচারের জায়গায় জায়গায় তথ্য-উপাত্ত সমানভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এতে পাঠক সাদৃশ্য ও কল্পনার উপর আস্থা খুঁজে পায়।

পাঠককে বশ করা

প্রতিটি ফিচার লেখার পিছনে লেখকের একটি উদ্দেশ্য থাকে। আর তা হলো পাঠকে ঐ বিষয়ের  প্রতি দুর্বল করে দেওয়া। ফিচারে উপস্থাপিত তথ্য ও সাদৃশ্যের মাধ্যমে পাঠককে বশ করা যায়। পাঠকের মন মগজকে এমন ভাবে ধরে রাখা যাতে এই ফিচার পড়ার সময় পাঠক অন্য কিছু ভাবতে না পারে। পাঠকের ভাবনার জগৎকে কব্জা করা।

উল্লেখ্য তথ্য, নির্দেশনা ও বিনোদন প্রদান করার পাশাপাশি পাঠককে উক্ত বিষয়গুলো পালনে কিংবা উক্ত স্থান ভ্রমণে বাধ্য করা। এর মাধ্যমেই একজন ফিচার লেখকের ফিচার লক্ষ অর্জন করলো কিনা এ ব্যাপারে বিচার করা যায়। যেমন-

‘ ক্যান্সার  প্রতিরোধে করণীয়’

এই শিরোনামে ফিচার পড়ে পাঠককে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী কর্ম সম্পাদনে বাধ্য করা।

খসড়া পরীক্ষা করা

এ ক্ষেত্রে লেখনি শক্তির মান যাচাই করা হয়। ফিচার লেখক একটি ফিচার লেখার পর কয়েকটি বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ করবেন। তা হলো-

ক) সম্পন্ন লেখা নিরীক্ষণ

খ) ফিচারের উদ্দেশ্য ফুটিয়ে তোলা।

গ) তথ্য-উপাত্ত সঠিক কি-না যাচাই করবে।

ঘ) পাঠককে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট কি-না বিচার করবে।

ঙ) বানান শুদ্ধ আছে কি-না যাচাই করবে।

চ) সর্বোপরি বিনোদন দেওয়া।

ছ) নির্ভেজাল আনন্দের মাত্রা সঠিক আছে কি-না যাচাই করবে।

কেআই/