ঢাকা, সোমবার   ০৭ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৩ ১৪৩২

‘বিমসটেক সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’

প্রকাশিত : ১১:৪৬ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:৫০ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার

নেপালে সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূমিকা সব মহল থেকেই প্রশংসিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায়, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)-এর চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য বৈঠক বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।’

তিনি বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সব মহল থেকে প্রশংসিত হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক সম্মেলন সম্পর্কে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করার উদ্দেশ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবাদুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ৩০ ও ৩১ আগস্ট চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন,‘এই সম্মেলনে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।’

তিনি বলেন, সাত-জাতির আঞ্চলিক এই জোট ইতোমধ্যে ২১ বছর পার করলেও এবারের বিমসটেক সম্মেলনটি ছিলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো,‘টুওয়ার্ডস অ্যা পিসফুল, প্রসপোরাস অ্যান্ড সাসটেইনেবল বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ৩০ আগস্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত বক্তব্যের পর তিনি বক্তব্য পেশ করেন।

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বিমসটেক জাতিভুক্ত দেশসমূহকে যৌথভাবে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সন্ত্রাস ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমি বিমসটেক নেতৃবৃন্দকে এই গ্রুপকে আরও শক্তিশালী এবং বিগত ২১ বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে একে কার্যকর করারও আহ্বান জানিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে ভারতের গোয়ায় বিমসটেক নেতৃবৃন্দর সম্মেলনে অনুমোদিত ১৬-দফা ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তিনি বিমসটেক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যালোচনা ও পুনর্গঠনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিনটি প্রধান ক্ষেত্র- ‘টেকসই উন্নয়ন’, ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ এবং ‘জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ’-এর পুনর্গঠনের মাধ্যমে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসু সংগঠন হিসেবে বিমসটেককে উন্নীত করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার জন্য তিনি সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

পাশাপাশি, তিনি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা এবং পুঁজির বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ফলাফলের জন্য সহযোগিতার বাস্তবসম্মত উদ্যোগের জন্য তিনি মৌলিক আইনি কাঠামো নির্দিষ্ট করার আহ্বান জানান।

বিমসটেক পাওয়ার গ্রিড আন্তঃসংযোগ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, বিমসটেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারকটি নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গত ৩১ আগস্ট বিমসটেক নেতৃবৃন্দের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

তিনি বলেন, বিমসটেক-এর আওতায় বিভিন্ন আঞ্চলিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিমসটেক নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন, আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার অগ্রগতি আমরা পর্যালোচনা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিমসটেক সচিবালয়কে আরও কার্যকর এবং ফলপ্রসূ করার জন্য তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভুটানের প্রধান উপদেষ্টা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান) দাশো শেরিং ওয়াং চুকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাংলাদেশে রফতানির বিষয়ে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠককালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যকার এই সম্পর্ক অন্য যে কোন দুটি প্রতিবেশী দেশের আদর্শ হতে পারে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি ও উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিমসটেক একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকাকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটানের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পূর্নব্যক্ত করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নেপাল ও ভুটানকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।

 

তথ্যসূত্র: বাসস।

এমএইচ/ এসএইচ/