রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমলাদের ভূমিকা যথাযথ নয়: রিয়াজুল হক
প্রকাশিত : ০৫:৩৫ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩৯ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমলারা সঠিকভাবে কাজ করছে না বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আমলাদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল রোববার সকালে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলোও আন্তরিক নয়। প্রধানমন্ত্রী গতবছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিষয়ে যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলো আরো আন্তরিক হতে পারতো।
কিন্তু আমরা মন্ত্রনালয়গুলোর মধ্যে তেমন কোনো তৎপরতা দেখিনি।
গত বছরের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা নারী- পুরুষ- শিশু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে এসে অবস্থান নেয়।
সে সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। সারা বিশ্ব উদ্বাস্তু-শরনার্থীদের জন্য যেখানে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
এরপর থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বাংলাদেশের দাবিকে সমর্থন দিয়েছে। তবুর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না মিয়ানমার।
এমতাবস্থায় এ সংকটের সমাধান কোন পথে এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখন প্রতিনিয়ত ওদের সম্পর্কে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপরাধ প্রবণতায় তারা জড়িত হচ্ছে। খুব শিগগিরই রাষ্ট্রের অন্যতম বিষফোঁড়ার নাম হবে রোহিঙ্গা।
রিয়াজুল হক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তে শুধু মিয়ানমার- বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্ব একটি ভয়াবহ মানবিক সংকট থেকে রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু এটাও সত্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী তখন শর্ত বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দু:খের বিষয় এখনো সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কেমন পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দফা শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তগুলো বাস্তবায়ন হলেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ১২২ তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষনে তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো: অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা। অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা। রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
আ আ / এআর