ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

একজন ব্রাজিল সমর্থক মামুনুর রশিদ 

রিয়াজ সুমন

প্রকাশিত : ০৪:৪৪ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের সমর্থক ছিলেন প্রিয় মামুনুর রশিদ। নিজেকে শতভাগ ব্রাজিলীয় সমর্থক রূপে প্রকাশ করতেই ব্রাজিলের এই জার্সিটা পড়ে সেদিন অফিসে এসেছিলেন তিনি। আমাদের অফিসে আমিসহ হাতেগোনা তিন থেকে চার জন আর্জেটিনার সমর্থক; বাকি সবাই ব্রাজিলের। এ কারণে আমরা স্বাভাবিকভাবেই একটু দূর্বলই ছিলাম। জার্সি পরিহিত মামুন ভাই যখন নিউজরুমে ডুকলেন তখন ব্রাজিলের সব সমর্থকদের উল্লাস এবং শক্তি যেনো আরেকটু বাড়লো। কেননা এবার প্রথম থেকেই ব্রাজিল ছিলো অপ্রতিরোধ্য।

হলুদ রংয়ের জার্সিতে প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিকতার প্রতিক মামুন ভাইও ছিলো অপ্রতিরোধ্য। আমাকে বললো আমার কয়েকটা ছবি তুলে দে... (উনার ছবি তোলার খুব সখ ছিলো)। আমি বললাম ভাই তাহলে চলেন ছাদে যাই। অফিসের খোলা ছাদে উনার অনেকগুলো ছবি তুলে দিয়েছিলাম। এরমধ্যে এই ছবিটা একটি। যা আজ শুধুই কষ্টের স্মৃতি। তার সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে!   

বন্ধুসূলভ মামুনুর রশিদ ভাই সবার কাছেই ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মুখ। কখনোই কোনো ঝামেলায় নিজেকে জড়াননি। অফিসের ভেতর বাহির সব জায়গায় তিনি ছিলেন বিতর্কের উর্ধ্বে! শান্ত মেজাজের এই মানুষটি সব সময় চুপচাপ থাকতেন। নিউজরুমের পশ্চিম পাশের কর্ণারের একটি পিসিতে তিনি সব সময় বসতেন। অন্য কোনো পিসিতে তাকে কখনো খুব একটা বসতে দেখিনি। ওই পিসিটাই ছিলো তার প্রিয়। সেখানে বসেই তিনি নিউজ লিখতেন। আবার অবসর সময়টা বসে বসে ইউটিউবে মুভি দেখতেন। আর মুভি দেখে একা একা হাসতেন। তার সেই প্রিয় পিসিটা অক্ষতই পড়ে আছে শুধু তিনি নেই।

মামুন ভাই অফিসে কখনোই প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতেন না। তাকে বলতাম ভাই আপনি এত চুপচাপ কেন? উনি বলতেন বেশি কথা না বলাই ভালো। তাতে বিতর্কের উর্ধ্বে থাকা যায়। তিনি সত্যিই মৃত্যুর আগমহুর্ত্ব পর্যন্ত বিতর্কের উদ্ধেই ছিলেন। আর তাইতো আপনার মৃত্যুর খবরে চারদিকে এত কান্নার রোল। এত এত মানুষের ভালবাসা। আপনার মৃত্যুর খবর শুনে এত মানুষের ছুটে আসা। হাসপাতালে, আপনার প্রিয় কর্মস্থল একুশে টেলিভিশনে, আপনার প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব জায়গায় যেনো আপনার সুহৃদদের ঢল। আপনার জানাজা প্রমাণ করে আপনি সবার কাছে কত প্রিয় ছিলেন! সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে অকালে কেন চলে গেলেন মামুন ভাই?

কি করে ভুলে থাকবো ভাই আপনাকে? প্রতিবার ঈদে সবচেয়ে বেশি টাকার সালামীটাও যে আপনিই দিতেন...কেনো যেনো খুব বেশি আবদার করতাম আপনার কাছে। আর কোনোদিন সালামী পাওয়া হবে না আপনার কাছ থেকে। আর কোনোদিন ডেকে বলবেন না... কি রে কি খবর তোর? আর কোনোদিন আপনার স্পর্শ আপনার কন্ঠ শোনা হবে না। ছবি তোলার যে সখ ছিলো আপনার সেই সখের ছবিগুলোই স্মৃতি করে রেখে গেলেন সবার কাছে।

ভাল থাকুন পরপারে।

এসি