ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সহজ হচ্ছে ব্যাংকিং লেনদেন

টাকা জমা ও উত্তোলন দু-ই হচ্ছে সিআরএমে

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৫:৩২ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার

ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়া বা উত্তোলন করার ভোগান্তি দূর করতে দেশে চালু হয়েছিল অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ। যেখানে এতোদিন শুধু টাকা উত্তোলন করা যেত। কিন্তু জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি এবার জমা দেওয়ার ভোগান্তিও কমাতে গ্রাহকপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্যাশ রিসাইক্লার মেশিন (সিআরএম)। এরই মধ্যে দেশের তিনটি ব্যাংকে অর্ধশতাধিক সিআরএম মেশিন বসানো হয়েছে। যেখানে গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি ছাড়াই নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারছেন।

জানা গেছে, এটিএম মেশিনের স্থলে সিআরএম ম্যাশিন প্রতিস্থাপন খুব দ্রুত দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই মেশিন নোট গুণতে পারবে, সেগুলো জ্বাল কি না, ছেড়া বা ফাটা কি না তাও যাচাই করতে পারবে। টাকাগুলো একই সময়েই হিসাবে জমা করতে পারবে। এতে করে ব্যাংক সেবায় কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমে যাবে।

দেশে এ পর্যন্ত তিনটি ব্যাংকে এ পদ্ধতির সিআরএম মেশিন বসানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো-সাউথইস্ট, সিটি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এ তিনটি ব্যাংক  এ পর্যন্ত ৫৬টি সিআরএম স্থাপন করেছে। আগামী এক বছরে আরো ১৬৬টি সিআরএম স্থাপনের ব্যবস্থা নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সাউথইস্ট ব্যাংক ঢাকা নগরীতে ১২টি সিআরএম স্থাপন করেছে। আগামী বছর মার্চের শেষ নাগাদ তারা আরো ৫০টি মেশিন স্থাপন করবে।

সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাইনুদ্দিন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, খুচরা বিক্রেতারাও এই নতুন প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হবেন। তারা তাদের দৈনিক বিক্রয়লব্ধ টাকা সিআরএম এ জমা করতে পারবে। দিন শেষে দোকান বন্ধ করার পর তাদের টাকা ব্যাংকের মতো নিরাপদ স্থানে রাখতে এ সিআরএম বুথে জমা রাখতে পারবে। এই সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে এবং এ সুবিধা গ্রহণের জন্য গ্রাহককে কোনো অতিরিক্ত সেবামূল্য দিতে হবে না। আমরা আগামীতে এ সেবা দেশের সবচেয়ে জনাকীর্ণ জায়গা ও বড় বড় বিপনি-বিতানে চালু করবো।

কিভাবে সিআরএমে টাকা জমা দেওয়া যাবে এমন প্রশ্নে এস এম মাইনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, একজন একাউন্ট হোল্ডার এটিএম বুথের মতোই এ সিআরএম বুথে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট একটি বাটন চাপলে দুটি অপশন আসবে।দুটি অপশনের একটিতে লেখা থাকবে আপনি কি টাকা উত্তোলন করতে চান? নাকি টাকা জমা দিতে চান?

যদি কেউ উত্তোলন করতে চান তবে উত্তোলনের বাটনে চাপ দিবেন। আর যদি জমা দিতে চান তবে জমার বাটনে চাপ দিবেন। জমার বাটনে চাপ দিলে তার সামনে টাকা রাখার একটি জায়গা খুলে যাবে। সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। নির্দিষ্ট ওই জায়গাতে টাকা জমা দেওয়ার পর সিআরএম ম্যাশিনে তা গণনা হবে। আবার টাকা ছেড়া-কাটা বা জ্বাল কিনা তাও যাচাই হবে মেশিনে।  ‍মুহুর্তে এ কাজটি সম্পন্ন হবে এবং টাকা সঠিক থাকলে জমাকারি গ্রাহককে একটি কনফরমেশন রশিদ দেওয়া হবে।

যেখানে জমা দেওয়া টাকার নম্বর, পরিমান, যে একাউন্টে জমা হচ্ছে তার নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য লেখা থাকবে।টাকা জমাকারি গ্রাহককে রশিদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার টাকা তার নিজের হিসেবেই জমা হয়ে যাবে।

সাউথইস্ট ব্যাংকের একাউন্টধারী বিকাশ কর্মকার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাংকে লেনদেন করি। গুলিস্থানে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।দিনশেষে এ ব্যাংকেই আবার টাকা জমা দিতে হয় আমাকে। তাতে অনেক সময় আমাকে লাইনে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে সময় নষ্ট হতো।এখন আর সেটা হয় না। কোন অফিসারের কাছেই ধর্ণা দিতে হয় না। খুব সহজেই টাকা জমা দিতে পারি।

সাউথইস্ট ব্যাংকের মতো দেশের বেসরকারি সিটি ব্যাংক এ পর্যন্ত ১০টি সিআরএম স্থাপন করেছে। আগামী বছর জুন নাগাদ তারা আরো ৫০টি মেশিন স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন। তারা নতুন করে আর কোন প্রথাগত এটিএম স্থাপন করবে না। এখন থেকে সবটাই সিআরএম স্থাপন করবে বলে জানান তিনি।

সিআরএম ম্যাশিন স্থাপনের দৌঁড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।এ ব্যাংকটি-ই বাংলাদেশে প্রথম সিআরএম স্থাপন করে। ইউসিবিএল এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৪টি সিআরএম স্থাপন করেছে। ব্যাংকটি এবছর ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত বাড়াবে।

ব্যাংকটি গত বছর জানুয়ারিতে পাইলট প্রকল্পের আওতায় নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমি নিবন্ধন অফিসের কাছে প্রথম সিআরএম স্থাপন করে। ব্যাংকের গ্রাহকরা খুব কম সময়ের মধ্যেই নতুন প্রযুক্তিটি গ্রহণ করে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ব্যাপকভাবে সিআরএম স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে বলে দাবি করে ইউসিবিএল এর একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউসিবিএল এর এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে যখন এটিএম ম্যাশিন চালু হলো তখন এ ম্যাশিন আমরা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত কিনেছি।এখন এ ম্যাশিন ৩ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকার মধ্যে ক্রয় করতে পারি। এর ব্যবহার এবং ক্রয় যত বাড়বে দামও ততো কমবে। এখন একটি সিআরএম ম্যাশিন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় কিনতে হচ্ছে।আধুনিক ব্যাংকিং লেনদেনকে আরো সহজ করতে গ্রাহকের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে আমরা এটা চালু করছি।বিশ্বের অনেক দেশেই এ সিআরএম ম্যাশিনে টাকা লেনদেন হয়।

/ আরকে / এআর