ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ফেসবুকে সাংবাদিক মামুনকে স্মরণ

প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:০৮ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

মুকুল ছড়ানোর পর যে ফুল সৌন্দর্য্যে-গন্ধে চারপাশের সবাইকে বিমোহিত করার কথা, অকস্মাৎ সে ফুল ঝরে গেল। আর সে ঝরে যাওয়া কিছুতেই যেন মানতে পারছেন না বাগানের মালি-দর্শনার্থীরা। একুশে টেলিভিনের সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র মামুনুর রশীদের অকাল মৃত্যু যেন ঝরে যাওয়া সেই ফুল। আর তার অকালে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না একুশে টেলিভিশন পরিবারের সদস্য, তার সহপাঠী ও বন্ধুরা। আর তাই স্বজন হারানোর সেই আবেগ প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

দীর্ঘ অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার জগতে সুনন্ধি ছড়িয়ে আসছিল মামুন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যখন অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার মিশেলে নিজেকে আরও উঁচু মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মামুন, তখনই কালের মহাস্রোত তলিয়ে নিয়ে গেলেন কীর্তিমান এ তরুণ সাংবাদিককে। সোমবার রাত ১১টায় রাজধানীর হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মামুন।

এ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতার এক খণ্ডচিত্র মাত্র। কবি বলেছিলেন, ‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা। রাশি-রাশি ভারা ভারা, ধান কাটা হলো সারা। ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরসা,
কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা।’

মামুনুর রশীদের অকাল চলে যাওয়া নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। ফেসবুকে লেখা এক স্ট্যাটাসে আহসান বুলবুল লিখেন, ‘জন্মদিন পালনে প্রথম প্রহরে সব আয়োজন নিয়ে বন্ধু শুভানুধ্যায়ীরা প্রস্তুত। কিন্তু ৩৩-এ পা দেওয়ার মাত্র ৫৬ মিনিট আগে চলে গেল মামুন । নিউজরূমে স্ক্রিপ্ট দেখে খুঁজি মামুনকে, সে নাই , রাগও করি কিন্তু রাগটি ভিত্ পাওয়ার আগেই এসে হাজির । নিঃশব্দ হাসি দিয়ে আত্মসমর্পণ- ভাই কই ভুল করছি? কিন্তু ০৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১.০৪মি. তার চলে যাওয়া মানে আর ফিরে না আসা! মাত্র ৩২। নানা প্রতিবন্ধকতা পায়ে দলে সাংবাদিক ‘হয়ে ওঠা’কেবল শুরু কিন্তু এ সময়ে নাই হয়ে যাওয়া! মামুন, এটা ঠিক না! কতবার বলেছে , ভাই ৫টা বছর আপনার সঙ্গে কাজ করি, বড় সাংবাদিক হয়ে যাব। একজন আগ্রহী তরুণকে গড়ে পিটে তোলার সুযোগটাওতো হারালাম, এতো আমারও ক্ষতি। এ রকম তাজা এক তরুণকে সাদা কাপড়ে আবৃত করে মরচুয়ারীতে রাখা, সহ্য করা কঠিন। সব বুকে চেপে তবুও বলি, হ্যাপি বার্থ ডে মামুন। ভালো থাক। তোমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী আজ; নিজের জন্মদিনে বাবার কাছে যাওয়া এ এক অন্যরকম আনন্দ। ভালো থাক বাবার সঙ্গে।’

মামুনুর রশিদের অকাল চলে যাওয়ার ঘটনায় তার সহপাঠী ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শেখ জাহিদ ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ‘নিঃশব্দের উচ্চারণ, তবু শব্দের অনুরণন ’শিরোনামে লিখেন, ‘নিঃশব্দেরও শব্দ থাকে। বুঝে নিতে হয়। না বলা কথার মধ্যেও থাকে অনেক কথা। বুঝে নিতে হয়। অব্যক্ত ভালোবাসার মধ্যেও থাকে প্রগাঢ় ভালোবাসা। বুঝে নিতে হয়। অনন্তলোক থেকে তুই সব বুঝে নিস মামুন ...... ভাই আমার। বাবার সান্নিধ্যে ভালো থাকিস’

এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের বার্তা-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী লুৎপর রহমান হিমেল ফেসবুকে লিখেন, ‘সাংবাদিকতা না করে শোবিজে অভিনয় করলেও পারতেন মামুন। নায়কের মতো দেখতে বলে নায়ক বলে ডাকতেন কাছের লোকজন। তাকে নিয়ে মজা করতেন বন্ধুরা। মামুন সত্যিই এই দুনিয়ার প্রাণখোলা আড্ডা রেখে চলে গেছেন, একেবারেই। অথচ এই বয়স বিদায় নেওয়ার নয়। হয়ত কেবল গুছিয়ে উঠেছিলেন মামুন। এই ক্ষতি তার পরিবারের পক্ষে সহ্য করবার কথা নয়। ওর সঙ্গে দেখা হলে হয়ত আমিও বলতাম, আমি মুভি বানালে আপনাকে কোনো চরিত্রে অভিনয় করতেই হবে। মামুন কি বলতেন জানি না। আর জানাও সম্ভব নয়।’


ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শরীফুল হাসান লিখেন, ‘চমকে উঠেছি। থমকে গিয়েছি। কী নিষ্ঠুর নিয়‌তি! চলে যাওয়ার কোন বয়স নেই, সেটা আরেকবার তুমি আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে গেলে। কালও যে তুমি ছিলে আজ এখন ফেসবুক তাকে বলছে রিমেমবারিং। অদ্ভুত নিয়তি!  দোয়া ক‌রি,ভালো থেকো তুমি পরপারে।’

এ ছাড়া আরও অসংখ্য সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক মামুনুরের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মৃত্যু অমোঘ, এঁড়ানোর সাধ্য নেই কারও। কিন্তু তার এই অকালে চলে যাওয়া নাড়িয়ে দিয়ে যায় আমাদের আবেগ-অনুভূতিকে। নশ্বর এ পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, তা যেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন মামুন।

এমজে/