ঢাকা, বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৪ ১৪৩২

জনগণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:০৯ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমৃদ্ধ দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের পথের ইতিহাস অনুসরণ করবে। বাংলাদেশের জনগণ এখন দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে এবং তারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। 

আজ শুক্রবার বিকেলে তার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি মিথ্যা কখনই সত্যকে ঢেকে রাখতে পারে না, জাতির পিতাকে ছাড়া কখনই বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হতে পারে না। কারণ, বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের মূল অংশ জুড়েই রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার ৪৬টি ফাইলে ৪০ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রচিত ১৪ খণ্ডের ভলিউমের প্রথম খণ্ড এটি। এই প্রথম খণ্ডে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন, সংগ্রাম, ভাষণ, গতিবিধি এবং কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য সংযোজিত হয়েছে। হাক্কানী পাবলিশার্স বইটির প্রকাশক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বইটির এডিটিংসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান এবং হাক্কানী পাবলিশার্সের কর্ণধার গোলাম মোস্তফা এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা,মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিদেশি কুটনিতিকবৃন্দ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও তার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং পরিবারের অন্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, বাঙালিরা সব সময় বৈষম্যের শিকার ছিল আর এই বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং আজন্ম লড়াই-সংগ্রাম করেছেন জাতির পিতা। এ কারণে মনে হয় তার প্রতি পকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একটি বৈরী মনোভাব ছিল এবং এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা সবসময় সক্রিয় ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন, কি বলছেন, তার বিরুদ্ধে সব সময় পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ রিপোর্ট তৈরি করতো এবং রিপোর্ট পাঠাতো। আর এই রিপোর্ট যে পাঠাতো তারই ওপর ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা দেওয়া হত এবং তাকে বারবার গ্রেফতার করে জেলে পাঠনো হত। আমরা সন্তান হিসেবে খুব কম সময়ই তাকে কাছে পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বঞ্চনার থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। ধাপেধাপে একটি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁরই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,১৯৭৫ এর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি শুরু হয়, সে সময় জাতির পিতার নাম নেওয়াও নিষিদ্ধ ছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে অবধারিতভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম আসবেই। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান প্রচারে জাতির পিতার অংশটুকু কায়দা করে সেন্সর করে বাদ দেওয়া হত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৪৬টি ফাইল এবং ৪০ হাজারের মত পাতা। সেগুলোকে নিয়ে বসে এডিট করে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে নিয়ে সেগুলোকে ‘ডি কালসিফাইড’ করে আজকে এই প্রকাশনাটি করতে পেরেছি। এটার যে নামটা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টোলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সেটাই আমরা দিয়ে আজকে এটি প্রকাশ করলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে অমূল্য তথ্যভাণ্ডার পাওয়া গেছে। প্রথমে হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট যেগুলো সবই জাতির পিতার বিরুদ্ধে, এই রিপোর্টের মধ্য দিয়েই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকাণ্ড, গতিবিধি, কোন মিটিং করেছেন এবং সেখানে কি বক্তৃতা দিয়েছেন- তার অনেক তথ্য সেখানে আছে।

বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি তারক বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে, সঙ্গে থেকে, এডিটিংয়ে সহায়তা করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পুলিশের আইজিপি ড.জাভেদ পাটোয়ারী এবং এসবি’র ২২ জনের দল এবং প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বইটির প্রকাশনা সংস্থা হাক্কানী পাবলিশার্সকে বাকি ১৩টি খণ্ডের দ্রুত প্রকাশনা সম্পন্ন করে ফেলার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, প্রথম খণ্ডটি করা দুরুহ ছিল সেটা আমরা করে ফেলেছি, প্রথম খণ্ডে ১৯৪৮ খেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে ধারণ করা হয়েছে, বাকি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টিসহ মোট ১৪টি খণ্ডে এটি প্রকাশিত হবে।

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তার এই বইয়ে প্রদত্ত একটি উদ্বৃতি শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন- ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষার আন্দোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এই আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থাৎ ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আদলে তিনি বাংলাদেশের জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকেরকে প্রতিষ্ঠার জন্যই ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং আমাদের স্বাধীনতা এনে দেন।

তথ্যসূত্র: বাসস।

এসএইচ/