ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ভূমিকম্পে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়বে ঢাকার ৭০ হাজার ভবন

প্রকাশিত : ১১:২০ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:২২ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার

যে টেকটোনিক প্লেটের উপর বাংলাদেশ অবস্থিত, সেখানে ক্রমেই পুঞ্জীভূত হচ্ছে শক্তি। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে বড় ধরণের ভূমিকম্প আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ ধরণের ভূমিকম্পের আঘাতে কেবল ঢাকা শহরেই ৭০ থেকে ৮০ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এতে ভবনের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে মারা যাবে ২০ শতাংশ মানুষ। আর বাকি ৬০ শতাংশ মানুষ মারা যাবে ঢাকার রাস্তায়। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদসহ গবেষকরা।

গবেষকরা জানান, রাজধানী ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে ৭০-৮০ হাজার ভবন ধসে পড়বে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা ভবনগুলোর মধ্যে কেবল বেসরকারি ভবন-ই নয়, রয়েছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সচিবালয়ও। নগর পরিকল্পনা অনুসারে ৮ মাত্রার অধিক ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি করার কথা থাকলেও, এসবের তোড়াই পরোয়া করছেন না ভবন মালিকরা। আর এতেই ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা করছেন নগর পরিকল্পনাবিদসসহ দেশের বিশেষজ্ঞরা।

এবিষয় জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনা বিভাগের পরামর্শক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাকে দেখা যায়, ঢাকার খুব কাছাকাছি স্থানে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশাঙ্কা কম। তবে ঢাকা থেকে ১শ কিলোমিটার উত্তরে মধুপুর ফল্টে ৭.৬ মাত্রায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্পটি আঘাত হানলে ঢাকায় এর তীব্রতা হতে পারে ৭ মাত্রার মতো। নগরের পরিকল্পনা মতো ভবনগুলো নির্মাণ হয়ে থাকলে এ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা খুবই কম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নগর পরিকল্পনা অনুসারে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ভবনগুলো ধসে পড়বে না, বড়াজোর ক্রাক (ফাটল ধরতে পারে) হতে পারে। তবে দুঃখের বিষয়, নগরের বেশিরভাগ ভবন-ই তৈরি করা হয়েছে কোনো ধরণের নিয়মনীতি না মেনেই। শঙ্কার জায়গাটা আমাদের এখানেই।’

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা এমনটা জানিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোবাশ্বের হোসেন একুশে টিভি অনলাইকে বলেন, ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে রাজধানীতে। ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশকে যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন সেই সচিবালয় ভবন ভেঙ্গে পড়বে। এগুলো সবই গবেষণায় পাওয়া গেছে। এরপর আসেন ফায়ার ব্রিগেড যারা আমাদেরকে উদ্ধার করবে তারা যেখানে থাকেন কিংবা গাড়িগুলো যেখানে রাখা হয় সেগুলো প্রায় সবগুলোই ভেঙ্গে পড়ার আশংকা আছে। নগর উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের শাসন যদি প্রতিষ্ঠা না করা যায়, তাহলে কোন পরিকল্পনাই কাজে আসবে না।


তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ২০ শতাংশ মানুষ মারা যাবে ভবনের ভেতর চাপা পড়ে। আর ৮০ শতাংশ মানুষ মারা যাবে রাস্তায় ভবন চাপা পড়ে। আমি শক্তিশালী ভবন তৈরি করলাম কিন্তু আশপাশের ভবনগুলো নড়বড়ে তাহলে অবস্থা কী হবে? আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবনগুলোতে সাধারণ কাঁচ ব্যবহার করা হয় যেগুলো একটা ঢিল ছুঁড়লেই ভেঙ্গে যায়। ভূমিকম্পের সময় এই কাঁচগুলো আগে ভেঙ্গে পড়বে। এগুলো শক্তিশালী বুলেট হয়ে মানুষের গায়ে আঘাত করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর নজীর রয়েছে। এ ভবনগুলোতে সবসময় টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। কারণ এটি ভাঙলে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। মানুষের তেমন ক্ষতি হবে না। এগুলো ব্যবহারে বাধ্যতামূলক করা দরকার। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা বলি ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে বের হওয়া বেশি বিপদজ্জনক, কথা সত্যি। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পিলার কিংবা বিমের নিচে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে করে ছাঁদ বা দেওয়াল ভেঙ্গে গায়ে আঘাত না লাগে। কিন্তু পিলার কিংবা বিম যদি মজবুতই না হয় তাহলে তো সেটিই আগে মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। তো ঘর থেকে বের হওয়া আর না হওয়া তো সমান কথা হলো। আধুনিক বিশ্বে ইটের বদলে কংক্রিট দিয়ে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কারণ এটি মজবুত বেশি। খরচ বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হয়। আমরা অনেকেই এই সামান্য খরচ বাঁচাতে গিয়ে সারাজীবন ঝুঁকির মধ্যে বসত করি।

ইদানিং অনেকেই পুরনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না তা যাচাইয়ে জন্যই কম্পন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেখেন আসলেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা। এগুলোর একেবারেই ভিত্তিহীন। একটা ভবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা নির্ণয়ের জন্য ভবন তৈরির সময়ের নকশা না থাকলে তা বলা মুশকিল। নকশা দেখেই ভবনটি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে। আবার কিছু কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে- তাদের রড নাকি ভূমিকম্প সহনশীল। কথা হলো- ভূমিকম্পে তো রডের ক্ষতি হয়না। এগুলো তো এমনিতেই ভূমিকম্প সহনশীল। দেখতে হবে এই রড যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা আসলে সঠিক প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে কি না। এভাবে মানুষকে বোকা বানানো মোটেও ঠিক না।


টিআর/ এমজে